দেশ-বিদেশে
ঘুরে বেড়াতে কার না ভালো লাগে! কিন্তু এয়ার টিকিটের উচ্চমূল্য ভ্রমণ ব্যয়
বাড়িয়ে দেয়। অপরদিকে যারা প্রবাসী তাদেরও দেশে ফেরা নির্ভর করে এয়ার টিকিট
পাওয়ার ওপর। তাই সবাই খোঁজ-খবর রাখেন কীভাবে কম টাকায় টিকিট পাওয়া যায়।
আবার অনেক সময় ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেখা যায়-বিভিন্ন রুটের এয়ার টিকিটে ৩০
শতাংশ পর্যন্ত ছাড়। এয়ারলাইন ছাড় না দিলেও টিকিট বিক্রেতা কীভাবে এত ছাড়
দেন, কখনও কি তা নিয়ে মনে প্রশ্ন জেগেছে? মূলত এসবই ফাঁদ। লোভে পড়ে ফাঁদে
পা দিলে রয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা।
প্রবাসী কিংবা বিদেশ
ভ্রমণকারীদের টার্গেট করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে প্রতারক চক্র। বিভিন্ন সময়
লোভনীয় অফারের প্রচারণা চালাচ্ছে তারা। অনলাইনে এসব প্রচারণার ফাঁদে পা
দিয়ে অনেকেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এজেন্ট ব্যাংকিং বা মোবাইল
ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হচ্ছে লেনদেন। অনলাইনেই দেওয়া হচ্ছে এয়ার টিকিট।
কিন্তু ফ্লাইটের দিন বিমানবন্দরে গিয়ে যাত্রী বুঝতে পারছেন তার টিকিটটি
ভুয়া। এভাবে মানুষকে ফাঁদে ফেলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র।
সম্প্রতি
এমন একটি চক্রের সদস্যদের আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। প্রতারণার
দায়ে কুয়েত প্রবাসী লিটন মিয়া (৩৭), মো. বেল্লাল হোসেন (৪৭) ও মো. রিয়াজ
শেখকে (৩৫) গ্রেফতার করেছে ডিবি। জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে
বিভিন্ন এয়ারলাইনের টিকিট কম দামে বিক্রির বিজ্ঞাপন দিতো লিটন। সাশ্রয়ী
দামে টিকিট বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে টাকা নিতো। সরবরাহ করতো জাল টিকিট। নিজে
প্রবাসী হয়েও তার টার্গেটও ছিল প্রবাসীরাই।
জাল টিকিট বিক্রি চক্রের
বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ
হারুন অর রশীদজাল টিকিট বিক্রি চক্রের বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান মহানগর
গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ
কুয়েত প্রবাসী
মজনু মিয়া গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তার স্বজন হুমায়ুন কবিরকে জানান, মে মাসে
ছুটিতে তিনি দেশে আসবেন। কুয়েত থেকে বাংলাদেশে আসা-যাওয়ার টিকিটের মূল্য
বেশি। এ জন্য তিনি হুমায়ুন কবিরকে বাংলাদেশ থেকে টিকিট কিনতে বলেন। হুমায়ুন
কবিরের কোনও পরিচিত ট্রাভেল এজেন্ট না থাকায় অনলাইনে সান ফ্লাওয়ার
ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনালের খোঁজ পান। দেখেন, সেখানে ১৫ শতাংশ ছাড়ে
(কুয়েত-ঢাকা-কুয়েত) টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। ফেসবুকে দেওয়া ফোন নম্বরে
যোগাযোগ করেন হুমায়ুন। তারা টিকিট দিতে পারবে বলে জানায়। ফোনে যোগাযোগ করে
২৬ ফেব্রুয়ারি হুয়ায়ুন যাত্রাবাড়ী ধলপুর এলাকায় লিটন মিয়ার সঙ্গে দেখা
করেন। তিনি নগদ পাঁচ হাজার টাকা এবং মজনু মিয়ার পাসপোর্টের ফটোকপি দেন
লিটনকে। বাকি ৪৭ হাজার টাকা লিটনের দেওয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বরে পরিশোধ
করেন। টাকা পাওয়ার পর চক্রটি মজনু মিয়ার হোয়াটসঅ্যাপে জাজিরা এয়ারওয়েজের
বিমানের টিকিটের কপি পাঠায়। পরে যাচাই করে দেখা যায় টিকিট জাল। এরপর
যোগাযোগ করতে চাইলে হোয়াটসঅ্যাপে মজনু মিয়াকে ব্লক করে দেয় লিটন।
পুলিশ
জানিয়েছে, অনেক প্রবাসী বিমানবন্দরে গিয়ে বোর্ডিংয়ের সময় জানতে পারেন
টিকিটটি ভুয়া। অনেকে বিদেশ থেকে দেশে এসে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন না। দেখা
যায়, ৯৯ শতাংশ মানুষই ঝামেলা মনে করে অভিযোগ করেন না। তাই ছাড় দিলেই যাচাই
না করে টিকিট কেনা যাবে না। এছাড়া প্রতারিত হলে পুলিশকে অভিযোগ করতে হবে।
এ
প্রসঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) মহাসচিব
আব্দুস সালাম আরেফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এয়ারলাইনগুলো টিকিট বিক্রির
জন্য এজেন্টকে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ কমিশন দেয়। তাহলে একজন এজেন্ট কীভাবে ১৫
কিংবা ২০ শতাংশ ছাড় দেয়? এটা কোনোভাবেই সম্ভব না। এয়ারলাইন যদি কোনও অফার
না দেয় এজেন্টের পক্ষেও অফার দেওয়া সম্ভব না।’
আব্দুস সালাম আরেফ বলেন,
‘মানুষকে সচেতন হতে হবে। মানুষ সচেতন না হলে প্রতারণা শিকার হবেন।
অস্বাভাবিক অফার দেখলেই হুমড়ি খেয়ে সেখানে যাওয়া উচিত নয়। যাচাই-বাছাই করতে
হবে। এ ধরনের ঘটনায় কেউ যাতে প্রতারিত না হন, এ জন্য আটাবের পক্ষ থেকে
আমরা বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছি।’
ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সতর্ক করতে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে
অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ। সংগঠনের মহাসচিব আফসিয়া
জান্নাত সালেহ’র সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কিছু চক্র ট্রাভেল এজেন্সির
নামে বিভিন্ন সময় ফেসবুক, সোশ্যাল মিডিয়াসহ ওয়েবসাইটে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ
পর্যন্ত মূল্য ছাড়ে এয়ার টিকিট বিক্রির প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে ক্রেতাদের
প্রলুব্ধ করছে। প্রকৃতপক্ষে কোনও এয়ারলাইন্স কখনোই ১৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ
ছাড় দেয় না। এছাড়াও কিছু কিছু এজেন্সি ব্যালেন্স টপআপে ক্যাশব্যাক অফারের
মাধ্যমে বিটুবি ও বিটুসিদের কাছে টিকিট বিক্রির নামে অগ্রিম অর্থ হাতিয়ে
নিচ্ছে। কিন্তু কোনও এয়ারলাইনসেই টপআপ ও ক্যাশব্যাক এ ধরনের কোনও প্রচলন
নেই। ফলে এ সব অপচর্চা এয়ারলাইন্স ও ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায়ীদের জন্য
হুমকি। এ ধরনের লোভনীয় মূল্য ছাড়ের বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও হীন
উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তারা কম মূল্যের লোভনীয় টিকিট ও
ভ্রমণ প্যাকেজ বিক্রির ফাঁদে ফেলে ভ্রমণপিপাসু যাত্রী, প্রবাসী ও এজেন্টদের
থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা
হয়, হালট্রিপ, ২৪টিকেট ডটকম, লেটস ফ্লাই নামে অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সিগুলো
যাত্রীদের বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে। এ কারণে যাত্রী, এজেন্সি ও
সংশ্লিষ্ট সবাইকে এয়ার টিকিট, ভ্রমণ প্যাকেজ কেনার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে
হবে। আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও লোভনীয় প্যাকেজের ফাঁদে পা না দিয়ে প্রতিষ্ঠিত,
বৈধ লাইসেন্সধারী ট্রাভেল এজেন্সির কাছ থেকে উপযুক্ত মূল্য যাচাই করে
প্রয়োজনীয় সেবা গ্রহণ করা উচিত।