বিগত
সরকারের সময় দুর্নীতি আমাদের সব অগ্রযাত্রাকে উঁইপোকার মতো খেয়ে ফেলেছে।
সে সময়ে প্রত্যেক প্রকল্পেই দুর্নীতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সমাজকল্যাণ
এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
শনিবার
(২১ জুন ২০২৫, শনিবার) ঢাকার এফডিসিতে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস- ২০২৫
উদযাপনের অংশ হিসেবে 'ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি' আয়োজিত ছায়া সংসদে তিনি এসব
কথা বলেন।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের
সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের
সচিব এ.এইচ.এম সফিকুজ্জামান ও আইএলও বাংলাদেশ অফিসের শ্রম প্রশাসন বিভাগের
প্রধান নীরান রামজুঠান। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মহিলা ও শিশু
বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ এবং মন্ত্রিপরষদ বিভাগের সচিব
(সমন্বয় ও সংস্কার) জাহেদা পারভীন।
শারমীন এস মুরশিদ বলেন, 'দুর্নীতি
নিরসনে অন্তর্বতীর্ সরকার জিরো টলারেন্স দেখিয়ে আসছে। আগামীতে যারা ক্ষমতায়
আসবেন তারা যেন দুর্নীতি না করেন সেই প্রত্যাশা থাকবে। একটি স্বৈরাচার
সমাজব্যবস্থার ভেতরে আমরা একটি সংবেদনশীল, যত্নশীল পলিসি প্রত্যাশা করতে
পারি না।'
তিনি আরও বলেন, বিগত সরকার বাল্য বিবাহের মতো একটি সংবেদনশীল
সামাজিক বিষয়ের সংজ্ঞা পরিবর্তনের মাধ্যমে বিয়ের বয়স ১৮ বছর থেকে কমিয়ে ১৬
বছর করে ভয়ংকর উদাহরণ তৈরি করেছিল। ফলে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আমাদের
দীর্ঘদিনের অর্জন টেকসই হয়নি। যেদেশে আইন করে যৌতুক বন্ধ করা যায়নি,
বাল্যবিবাহ বন্ধ করা যায়নি। সেদেশে শুধু আইন দিয়ে শিশুশ্রম বন্ধ করা কঠিন।
শিশুশ্রম সম্মানজনক নয়। এটি শিশুর অধিকার হরণ করে। কোনো সমাজে শিশুশ্রম
থাকলে সেখানকার অর্থনীতির নৈতিকতা থাকে না। দারিদ্র ও শিশুশ্রম ওতপ্রোতভাবে
জড়িত। তাই শিশুশ্রম নিরসনে দারিদ্র বিমোচনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
শিশুশ্রম নিরসনে রাষ্ট্র ও সমাজকে মুখোমুখি দাঁড় করানো যাবে না। রাষ্ট্র,
সমাজ, প্রাইভেট সেক্টর, উন্নয়ন সহযোগীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ
করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, 'গণ-আন্দোলনে
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকার আর্থিকখাতসহ বিভিন্ন খাতে যে রকম লুটপাট করেছে
তা আমাদের সবার জানা। একইভাবে শিশুশ্রম নিরসনে বিগত সময়ে বিভিন্ন প্রকল্প
বাস্তবায়নে সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের ছাপ রেখে গেছে বিগত সরকার।
ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে বিগত আওয়ামী সরকার দুই দফায় বিভিন্ন প্রকল্পে
যে ৩৫২ কোটি টাকা ব্যয় করেছে ব্যাপক দুর্নীতির কারণে তার সুফল পাওয়া যায়নি।
প্রকল্পের টাকা বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। সুবিধা বঞ্চিত শ্রমজীবী শিশু
নির্বাচন, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও আয় বর্ধণমূলক কাজের জন্য নির্ধারিত টাকা
প্রদানে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তাই আমরা আশা করব হাসিনা সরকার পালিয়ে
যাওয়ার পর ক্ষমতার পালা বদলে দুর্নীতির যেন পালা বদল না হয়। শিশুশ্রম
নিরসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি অর্থ সঠিকভাবে
ব্যবহার করতে হবে।'
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে শ্রমে নিয়োজিত শিশুর
সংখ্যা ৩৫ লাখের বেশি। পথশিশু রয়েছে ৩৪ লাখ। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে
নিয়োজিত প্রায় ১১ লাখ শিশু। পথশিশুদের ৯৪ শতাংশই সামাজিক নিরাপত্তা
কর্মসূচির কোনো সুবিধা পায় না। ৫৮ শতাংশর বেশি পথশিশুর কোন জন্মসনদ নেই।
এরমধ্যে অনেকেই রয়েছে যাদের সঙ্গে বাবা-মায়ের কোনো যোগাযোগ নেই। বাবা-মা
কোথায় থাকে সেটাও জানে না। মেয়ে পথ শিশুদের মধ্যে ৪৬ ভাগ শিশু যৌন
নির্যাতনের শিকার। পারিবারিক যত্নের অভাবে পথশিশুরা অশ্লীল ভাষায় কথা বলতে
অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। মাদক গ্রহণ, ছিনতাইসহ বিভিন্ন রকম সামাজিক অপরাধে যুক্ত
হয়ে পড়ে। অর্ধেকেরও বেশি পথশিশু কোনো প্রাতিষ্ঠানিক বা অপ্রাতিষ্ঠানিক
শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত নয়। পথশিশুদের বড় একটা অংশ পরিত্যক্ত অবস্থায়
ফুটপাত, ট্রেন, বাস, লঞ্চঘাটে রাত্রি যাপন করে। এসব শিশুরা দারিদ্রতার
কষাঘাতে নিষ্পেষিত হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে নিয়োজিত হচ্ছে। নিজের ও
পরিবারের আহার যোগাতে খাতা কলমের পরিবর্তে সেই কোমল হাতে তুলে নিচ্ছে
শ্রমের বোঝা।'
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে, আইএলওর পৃষ্ঠপোষকতায়,
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সহায়তায় এবং শ্রম ও
কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে 'শিশুশ্রমের প্রধান দায় রাষ্ট্রের
নয়, সমাজের' শীর্ষক ছায়া সংসদে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের
বিতার্কিকদের পরাজিত করে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা
চ্যাম্পিয়ন হয়।
প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন উপসচিব রোকেয়া পারভীন জুই,
সিনিয়র সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাবেক বিতার্কিক ড. এস এম মোর্শেদ, চাইল্ড
লেবার বিশেষজ্ঞ আফজাল কবির খান ও সাংবাদিক ইয়াসির আরাফাত রিপন।
প্রতিযোগিতা শেষে চ্যাম্পিয়ন দলকে ৫০ হাজার ও রানারআপ দলকে ৩০ হাজার টাকাসহ ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেওয়া হয়।