আট.
শিক্ষক নিয়োগ বিধি
প্রচলিত
নিয়মে কমিটির দ্বারা কয়েকবার শিক্ষক নির্বাচন করা হয়েছে। কিন্তু নির্বাচিত
শিক্ষকগণ অনেকেই আশানুরূপ হয় নাই। বেকার যারা তারাই তো হয় বেশি উমেদার।
তাই ভালো শিক্ষক পেতে অন্য পন্থা অবলম্বন করেছি। জেলা ও জেলার বাইরের থেকে
ভালো শিক্ষক এনেছি কয়েকজন। ব্যক্তিগত যোগাযোগে। আর বেশ কিছুসংখ্যক শিক্ষক
নেয়া হয়েছে পি.টি.আই.গুলোর সুপারিশ অনুযায়ী। তারা ট্রেনিংপ্রাপ্ত কৃতী
শিক্ষকদের নাম দিয়েছেন। শিক্ষকদের মধ্যে শেষোক্ত দু-দলই সবচেয়ে বেশি
কৃতিত্ব প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছেন। তার কারণও ছিল। এরা প্রায় সবাই বয়সে
তরুণ। তারা কাজ করেছেন নির্দেশিত পথে, নতুন নতুন পদ্ধতিতে। যারা ধামাধরা
তালে চলতে অভ্যস্ত, সহজে বদলাতে চায় না, বদলাতে পারে না। এরা গতানুগতিক
শিক্ষক। দান করার ক্ষমতা এদের অনেকেরই নাই। কোনোমতে বেঁচে থাকাই তাদের
লক্ষ্য। এদের হাতে অনেক ছেলে নষ্ট হয়, তৈরি হয় না।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকা
চিল্ডরেনস
হোম-এর প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে প্রথম যোগ দেন মিসেস হাফেজা খানম। এক বছর
অন্তে তাকে পাঠানো হয় ট্রেনিং-এ ময়মনসিংহে। তার জায়গায় অস্থায়ীভাবে কাজ
করেন মি. আক্কাস। ট্রেনিং থেকে ফেরার অল্প পরেই হাফেজা খানম সরকারি চাকরি
পেয়ে চলে যান, আর আক্কাস সাহেব অস্থায়ী চাকরির মেয়াদ অন্তে চলে যান অন্যত্র
হাই স্কুলের হেড মাস্টার হয়ে।
বৎসর অন্তে চিল্ডরেনস হোম হয় মডার্ণ
স্কুল। তিন জায়গায় তিন শাখা; দুই বিভাগ বাংলা ও তৃতীয় উচ্চ ইংরেজি বিভাগ।
তিন বিভাগের প্রথম প্রধান শিক্ষক মি. শামসুল আলম। অল্প দিন পর চলে যান
আমেরিকা উচ্চতর ট্রেনিং-এর জন্য। তার জায়গায় কাজ করেন মি. সাখাওয়াত হোসেন।
ইংরেজি বিভাগ দ্বিধাবিভক্ত হলো। মিলিটারিরা তাদের ছেলে-মেয়ে নিয়ে ময়নামতিতে
স্থাপন করলেন পাবলিক স্কুল। সেখানে হেড মাস্টার হয়ে চলে যান মি. সাখাওয়াত
হোসেন। কুমিল্লার ইংরেজি-বাংলা বিভাগের প্রধান শিক্ষক হলেন মি. নজরুল
ইসলাম। হাইস্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক। প্রাইমারিতে খাপ খাওয়াতে না
পারায় ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য কারণে পদত্যাগ করলেন।
তারপর আসেন মি. কলিম উল্লা ১৯৬৩ সালের নভেম্বরে।
সহকারী শিক্ষক
সহকারী
শিক্ষক-শিক্ষিকাদের যারা স্কুল ত্যাগ করেছেন তাদের শতকরা ৮০ জন পেয়েছেন
সরকারি চাকরি আর বাকিরা চলে গেছেন স্বামীদের সঙ্গে অন্যত্র। দশ বছরে মাত্র
দুজন শিক্ষককে অযোগ্যতার জন্য বাদ দেয়া হয়েছে। অথচ একটা বিরূপ প্রচারণা
হয়েছে শিক্ষকদের চলে যাওয়া সম্পর্কে। এরা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দলের।
শিক্ষার
মান সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করছে শিক্ষকের শিক্ষামান ও গুণাগুণের উপর।
শিক্ষকের শিক্ষামান নির্ভর করছে তার শিক্ষকতাকার্যে প্রবেশ পূর্বজ্ঞান এবং
পরে অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার উপর। তার জন্য শিক্ষককে হতে হবে ছাত্র। যে
দিন নতুন জ্ঞান আহরণ বন্ধ হয়, সে দিনই হয় শিক্ষকের মৃত্যু।
নয়.
অর্থের সংস্থান
জনকল্যাণমূলক
সকল প্রতিষ্ঠানের ইতিকথা-তা হয়তো কোনো দানশীল ব্যক্তির একক প্রচেষ্টায়
অথবা বহুর চেষ্টা ও দানে প্রতিষ্ঠিত। এ ক্ষেত্রে বহুর উপরই নির্ভর করতে
হয়েছে এবং ছোট ছোট দানই বেশি। প্রস্তুতি পর্যায় থেকে প্রথম বর্ষের জুন
পর্যন্ত মাত্র চৌদ্দ হাজার টাকার কাছাকাছি চাঁদা পাওয়া গেছে। তন্মধ্যে
তিনজনের নগদ দান দশ হাজার আর বাকি যা আদায় হয়েছে তা অনেকেরই ক্ষুদ্র দান।
দশ টাকা-পাঁচ টাকা থেকে শুরু করে হাজার টাকা। ১৯৬২ সালের জুলাই থেকে ইংরেজি
বিভাগ খোলার সাথে সাথে চাঁদা আদায়ের ভার নেন প্রশাসনিক বিভাগ,
ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও অন্যান্য কর্মচারী। তদানীন্তন এসডিও সাহেব,
ইঞ্জিনিয়ার রশিদ সাহেবকে নিয়ে চাঁদা সংগ্রহে ছিলেন বেশ অগ্রণী। তার একজন
কেরানি মি. নূরুল ইসলাম এসবের হিসাব রাখতেন। অফিস থেকে একদিন এর অনেক কিছু
চুরি হয়ে যায়। রহস্যজনক। থানায় এফ.আই.আর. তার প্রমাণ। তা জানা যায় ডেপুটি
ম্যাজিস্ট্রেট হাফেজ আহমদ-(পরে এসডিও) সাহেবের অডিট রিপোর্ট থেকে।
তারা
সংগৃহীত অর্থ সরাসরি ব্যাঙ্কে জমা দিয়েছেন। কখনো স্কুলকে তা জানানো হয়েছে,
কখনো জানানো হয় নাই। চাঁদা সংগ্রহ অভিযান বন্ধ হয়ে যায় ১৯৬৪ সালের প্রথম
থেকে। তার পর মাত্র ১০১২ টাকা চাঁদা আদায় হয়েছে।
কুমিল্লা মোটর
অ্যাসোসিয়েশান, বার্ষিক প্রদর্শনী ও ঢাকা থেকে আনীত ‘নক্সী কাঁথার মাঠ’
নাট্যাভিনয় থেকে কিছু সাহায্য পাওয়া গেছে। জেলা ইউনিয়ন বোর্ডের একটা বাড়ি
ছিল জেলা বোর্ডের কাছে। মালিকহীন সম্পত্তি। তা মডার্ণ স্কুলকে দেয়া হয়। পরে
জেলা কাউন্সিল তা কিনে নেয়, মূল্য ২৪,০০০ (চব্বিশ হাজার) টাকা। তা স্কুল
তহবিলে আসে।
(ক্রমশ:)