সোমবার ৯ ডিসেম্বর ২০২৪
২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
মডার্ন স্কুল
মোহাম্মদ আবদুল কুদ্দুস রচনাসংগ্রহ
প্রকাশ: রোববার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২:৫০ এএম |

মডার্ন স্কুল

শিশু শিক্ষার ক্ষেত্র ও প্রাইমারি স্কুলে কাজ করে আজন্ম সাধনা করেছেন সুইজারল্যান্ডের অধিবাসী পেস্তালজ্জী। প্রাইমারি শিক্ষার ক্ষেত্রে তার দান সৃষ্টি করেছে এক নতুন ইতিহাস। তার জীবন ও শিক্ষা দর্শন ছিল আমার গবেষণা ও অনুসন্ধানের বিষয়। তার, ‘ছেলে-মেয়েদের আমার কাছে আসতে দাও।’ আর মানব ‘শিশুর বাগান’ রচয়িতা ফ্রো বেলের ‘চলুন, আমরা শিশুদের সাথে বাস করি’ শিশু শিক্ষার ক্ষেত্রে একটা বিপ্লবাত্মক বিস্ময়কর পরিবর্তন, এক নতুন মন্ত্র। শিক্ষার এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে তারা। ভার্দুনের শিশু শিক্ষার আবাসিক কেন্দ্রটি পেস্তালজ্জীর একক চেষ্টার এক অত্যুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। অবাক বিস্ময়ে একজন পরিদর্শক বলেছিলেন, ‘একি একটা স্কুল, না একটা পরিবার!’ ভার্দুন হয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষার তীর্থক্ষেত্র। 
প্রাথমিক পর্যায়ে শ্রেণিবিহীন শিক্ষাব্যবস্থা শিশু শিক্ষায় অপচয়তা নিবারণের এক সহজ ও নতুন পথ। আমেরিকার বহু স্কুলে আজ তা আশ্চর্য সফলতা অর্জন করেছে। ড. অ্যান্ডারসন এর একজন উদ্যোক্তা ও সাধক। আর তিনিই ছিলেন হারবার্ডে আমার উপদেষ্টা। তার কাছে এ বিষয়ে জেনেছি অনেক, অনেক। চিকাগোর শত মাইল দূরে পার্ক ফরেস্টের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিবিহীন শিক্ষার নবপদ্ধতি দেখে মনে কেবলই প্রশ্ন জেগেছে, পরীক্ষা করে দেখতে পারব কি এ পদ্ধতিটি? হারবার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে নিউটনে বিটহোভেন প্রাইমারি স্কুলটি ২২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে স্থাপিত একটা আদর্শ বিদ্যালয়। পর পর তিন দিন স্কুলটি দেখেছি। না, স্কুলটি অধ্যয়ন করেছি। খুঁটিনাটি সব কিছুই। প্রতি শ্রেণিকক্ষের পাঠাগারগুলিও। আর শুধুই ভেবেছি, এমন একটা স্কুল প্রতিষ্ঠা করা যায় কি?
হলুলুতে রানি ইমার স্থাপিত বিখাত প্রাইমারি বিদ্যালয়টির কথা বইয়ে পড়েছি। জাতিকে বড় করার কাজে রানি শিশুদের শিক্ষার জন্য কী চমৎকার ব্যবস্থাই না রেখে গেছেন, তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি দান করে।
মিশিগান স্টেটের ১৯৫৮ সালের পুরস্কারপ্রাপ্ত সবচেয়ে সুন্দর প্রাইমারি স্কুল বাড়িটি দেখে অবাক বিস্ময়ে অজানিতভাবেই মন থেকে বেরিয়ে এসেছিল, কী চমৎকার পরিবেশ! এ যে শিশুদের বেহেশতি আবাস। কিন্ডারগার্টেনের বহু বিচিত্র গোলাকৃত ঘরটি যেন পটে আঁকা মনোহারিণী ছবি। দেখলেই আনন্দে মন নেচে ওঠে।
জাপানের প্রাইমারি স্কুলের দৃশ্যগুলো ভারি সুন্দর। সমগ্র টোকিও শহরের সব স্কুলের ছাত্রদের একই পোশাক-ইউনিফরম। স্কুল পরিবেশও সত্যি সুন্দর। দেখে ভারি সুন্দর লেগেছিল। ফিলিপাইনের কমিউনিটি স্কুল সমাজের সামগ্রিক শিক্ষার এক অভিনব ব্যবস্থা। বিশেষ করে হাজার হাজার ছেলেমেয়ের প্রাইমারি স্কুলগুলোর পরিচালন ব্যবস্থা অনুকরণীয়। দেখেছি আর ভেবেছি আমরা কোথায়? মনে জাগ্রত স্বপ্ন।
বিলাতের পাবলিক স্কুলগুলোর শিক্ষা ব্যবস্থাপনা নেতৃত্ব গঠনের এক অনুপম নজির। ওপেন সেলফ লাইব্রেরির ছোটদের পছন্দমতো বই নির্বাচন ও পড়ার ব্যবস্থা দেখে মুগ্ধ হয়েছি। ভেবেছি আমাদের দেশে কবে এমনি ব্যবস্থা হবে? বই পাঠের চেয়ে মাঠের শিক্ষা অধিক কার্যকরী তার প্রমাণ, ‘ইটনের মাঠে ওয়াটারলুর যুদ্ধ জয়’। প্রশ্ন- আমাদের শিশুদের কি শ্রেণিকক্ষের রুদ্ধশ্বাসের বাইরে রৌদ্রোজ্জ্বল মুক্ত হাওয়ার আনন্দ উপভোগ করতে দেয়া যায় না? মুক্তাঙ্গন শিক্ষা?
করাচির অদূরে মালিরে জামে মিল্লিয়া, দিল্লির জামে মিল্লিয়ার পাকিস্তানি সংস্করণ। প্রধান সম্পাদক জনাব আবদুল হাই সাহেব ছিলেন দিল্লিতে জামে মিল্লিয়ার অধ্যক্ষ ড. জাকির হোসেন সাহেবের দক্ষিণ হস্ত। প্রথম প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। তাদের কাছ থেকে তন্ময় হয়ে শুনেছি ঐ বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের জন্মকথা, কার্যপদ্ধতি। জামে মিল্লিয়ার প্রাইমারি শিক্ষা শাখার প্রধানের সঙ্গে আলাপ করেছি, শ্রেণি ব্যবস্থাগুলো দেখেছি। একই ঘরে স্কুল আর ছাত্রাবাস। দেখেছি আর ভেবেছি।
১৯৫৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান শিক্ষাসংস্কার কমিশনে সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ করার সময় ডি.পি.আই. প্রাইমারি শিক্ষায় বিশেষজ্ঞ এবং বাংলায় শিক্ষা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ লেখক ও বহুগ্রন্থ প্রণেতা খান বাহাদুর আবদুল হাকিম সাহেব একদিন আলোচনাচ্ছলে বললেন, ‘শিক্ষা ক্ষেত্রে কি জাতীয় পরীক্ষণ আপনার ভালো লাগে? প্রাইমারি শিক্ষা সম্পর্কিত লিখেছেন অনেক (তখন পর্যন্ত ২০টি প্রবন্ধ ‘বাংলার শিক্ষক’ পত্রিকাতে কলকাতা থেকে প্রকাশিত)। এবার একটা পরীক্ষণ করুন না, দেখা যাক আদর্শ স্থাপন করা যায় কি না। উত্তরে বলেছিলাম, সুযোগের অপেক্ষায় আছি। চেষ্টা করব।’
প্রথম প্রস্তাব
কুমিল্লা পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতে কাজ করেছি ১৯৫৮-এর এপ্রিল থেকে ১৯৬৩-এর ১০ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষা উপদেষ্টারূপে। তখন কল্পনাকে, জীবন স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার উদ্যোগ নেই। শিক্ষক জীবনের প্রথম থেকে শুরু করে ১৯৫৯ সালের পূর্ব পর্যন্ত প্রাইমারি শিক্ষায় শিক্ষক শিক্ষণে যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি, মনের কোণে যত চিন্তাধারা, যত আদর্শের ছবি উঁকি-ঝুঁকি মারছিল তা বাস্তবায়নের জন্য এক দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে স্থির সিদ্ধান্ত নেই। মনের কথা প্রথম খুলে বললাম কুমিল্লার তদানীন্তন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মরহুম জনাব আবদুস সালাম চৌধুরী সাহেবের নিকট। দেখালাম পরিকল্পনার প্রথম খসড়াটি। তিনি যেন সম্বিত ফিরে পেলেন। বললেন, ‘এমন প্রস্তাব কেউ কোনোদিন করেনি, সবাই বড় বড় স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত। সত্যি, আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভাব আমাদের। এখন আমি মেয়েদের কলেজ (কুমিল্লা মহিলা কলেজ) স্থাপন নিয়ে ব্যস্ত, দেখি কতটা কী করতে পার।’ এ জুন-জুলাইয়ের কথা।
আমার এ প্রস্তাব ও পরিকল্পনায় আর যারা সানন্দে পূর্ণ সমর্থন জোগালেন তারা হচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল পরিদর্শক জনাব খবিরউদ্দিন আহমদ, জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মরহুম আবদুর রশিদ আর আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলেন বিদ্যোৎসাহী দানশীল শিল্পপতি জনাব আবদুস সামাদ। প্রথমেই স্কুল ঘরের জন্য এক লক্ষ ইট দেবার প্রতিশ্রুতি। আশায় মন ভরে উঠল উৎসাহ শত গুণ বাড়ল ।
১৯৫৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বদলি হয়ে যান জেলা ম্যাজিস্ট্রেট চৌধুরী সাহেব। আমার অনুরোধ-উপরোধে তিনি গঠন করে গেলেন একটা এড্হক কমিটি। আর ভি.পি.আই জনাব শাসুল হক সাহেবের সুপারিশে সরকার পক্ষ থেকে ব্যবস্থা হলো জন্ম হয়নি চিলড্রেন্স হোম নামীয় যে স্কুলের, তার জন্য জমি একুইজিশনের। শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি চৌধুরী সাহেবকে, অন্যান্যদেরও।
(ক্রমশ:)













সর্বশেষ সংবাদ
পেনশন পেতে হয়রানি
সময় গেলে সাধন হবে না
যথাযোগ্য মর্যাদায় কুমিল্লা মুক্ত দিবস পালিত
চান্দিনায় পরীক্ষা হলে হঠাৎ অসুস্থ ১৫ ছাত্রী; ক্ষোভে শিক্ষক পেটালেন অভিভাবকরা
নির্জন বিলে পড়েছিলো দুই যুবকের মরদেহ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
বিভাগ না দিয়ে কুমিল্লাবাসীর প্রতি জুলুম করা হয়েছে
নিবেদিতা স্কুল: আলোর নিচে অন্ধকার
লালমাইয়ে দাফনের ৪ মাস পর থেকে লাশ উত্তোলন
বুড়িচং উপজেলা বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমানের সঙ্গে ৯ ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতিনিধি সম্মেলন
চান্দিনায় মোটরসাইকেল চুরিকালে চোর আটক
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২