কিয়ামত একটি
অমোঘ সত্য। কিয়ামতের মাধ্যমে শেষ হবে পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চ। কায়েম হবে বিচার,
হাশর। কিয়ামতের সূচনা হবে হজরত ইসরাফিল আ.-এর শিঙ্গায় ফুঁৎকারের মাধ্যমে।
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে,
আর শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে। ফলে আল্লাহ
যাদেরকে ইচ্ছা করেন তারা ছাড়া আসমানসমূহে যারা আছে এবং পৃথিবীতে যারা আছে
সকলেই বেহুঁশ হয়ে পড়বে। তারপর আবার শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে, তখন তারা
দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে। আর যমীন তার রবের নূরে আলোকিত হবে, আমলনামা উপস্থিত
করা হবে এবং নবী ও সাক্ষীগণকে আনা হবে, তাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করা হবে।
এমতাবস্থায় যে, তাদের প্রতি জুলম করা হবে না। (সূরা আয-যুমার, আয়াত :
৬৮-৬৯)
সেদিন দিনের শুরুতেও মানুষ আপন আপন কাজে ব্যস্ত থাকবে। হঠাৎ
সূক্ষ তবে দীর্ঘ একটি আওয়াজ সবাই শুনতে পাবে। সবাই সমানভাবে এই আওয়াজ
শুনবে। সবাই অবাক হয়ে ভাববে এই আওয়াজ কীসের? কোথা থেকে আসছে? সে আওয়াজ
ক্রমেই হালকা থেকে কঠিন ও বজ্রপাতের মতো উঁচু ও তীব্র হতে থাকবে। এর কারণে
মানুষের মাঝে ভীষণ অস্থিরতা ও উৎকণ্ঠা দেখা দেবে। যখন আওয়াজ পুরোপুরি তীব্র
হয়ে যাবে তখন মানুষ ভয়ে ছোটাছুটি করতে থাকবে। যার যার কাজ ফেলে পরিবারের
লোকদের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু পরিবার-আপনজনদের সঙ্গে সাক্ষাতের
আগেই কেয়ামত সংঘটিত হয়ে যাবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা তাদের সম্পদের
অসিয়ত করার এবং নিজেদের পরিবারের কাছে ফিরে আসার অবকাশও পাবে না।’ (সূরা
ইয়াসিন, আয়াত : ৪৯)।
হাদিসে এসেছে, রাসূল সা. বলেন, ‘প্রথম যে ব্যক্তি
শিঙ্গার আওয়াজ শুনবে সে তার উটের পানি পান করার জন্য হাউজ মেরামতে ব্যস্ত
থাকবে। এমতাবস্থায় সে শিঙ্গার আওয়াজ শুনতে পাবে এবং বেহুঁশ হয়ে পড়বে।’
(মুসলিম, হাদিস: ২৯৪০)।
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘কেয়ামত অবশ্যই কায়েম হবে।
তা এমন সময় যে, কাপড়ের দোকানে ক্রেতা বিক্রেতার সামনে কাপড় দেখার জন্য মেলে
ধরবে, কিন্তু দরদামও শেষ করতে পারবে না, কাপড় গুটাতেও পারবে না; এক
ব্যক্তি দুধ দোহন করে ঘরে নিয়ে বসবে, কিন্তু তা পান করতে পারবে না; এক
ব্যক্তি হাউজ মেরামত করবে, কিন্তু তা থেকে পানি পান করতে পারবে না; এক
ব্যক্তি লোকমা তুলবে, কিন্তু তা মুখে দিতে পারবে না এমন অবস্থায় কেয়ামত
কায়েম হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৫০৬)।
অর্থাৎ পৃথিবীর মানুষ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে থাকবে, এমন সময় আকস্মিকভাবে পৃথিবী ধ্বংসের বাঁশি বেজে উঠবে।