শুক্রবার ৯ মে ২০২৫
২৬ বৈশাখ ১৪৩২
বন্যার ক্ষতিপুরণে সবাইকে মনযোগী হতে হবে
অধ্যাপক ডা: মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১:২১ এএম |


 বন্যার ক্ষতিপুরণে সবাইকে মনযোগী হতে হবে
ডুবে থাকা অঞ্চলগুলো এখন দৃশ্যমান। পানি কমায় মানুষ স্বস্তিতে। সড়ক ও বাড়ীঘরে ভেসে উঠেছে বন্যার ক্ষতিগুলো। বহু আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়ক বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেঙ্গে গেছে কাঁচাঘর, পাকা ঘরের আসবাবপত্রসহ বসবাসের অনেক সরঞ্জাম ও পানিতে নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ব্রীজ কালভার্ট, কৃষি ও মৎস্য সম্পদেরও অনেক ক্ষতি হয়েছে। ভেসে গেছে মাছ, মুরগী, গরু ছাগলের খামার আর ফসলী জমি। এসব কারনে অনেক খামারী ও কৃষক পুঁজি হারিয়ে নি:স্ব হয়েছেন। সম্প্রতি ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ৩০.০৮.২০২৪ইং এর সূত্রে জানা গেছে দেশের পূর্বাঞ্চলের ১১ জেলায় বন্যায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪ জন। পানিবন্দী রয়েছেন ১০ লক্ষ ৯ হাজার ৫২২ পরিবার। মৃতের মধ্যে রয়েছেন কুমিল্লার ১৪ জন, নোয়াখালীতে ৮ জন, ফেনীতে ১৯ জন, লক্ষীপুরে ১ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ১জন, চট্টগ্রামে ৬ জন, কক্সবাজারে ৩ জন, মৌলভী বাজারে ১ জন ও খাগরাছড়িতে ১জন মারা গেছেন।
গোমতীর বাঁধ ভেঙ্গে কুমিল্লা-বুড়িচং- ব্রাহ্মণপাড়া সড়কটি বিধ্বস্ত হয়েছে। বুড়িচং উপজেলার বেশি ভাগ গ্রামীণ সড়ক ঢলের পানিতে বিলীন হয়ে গেছে। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার গোপালনগর সড়কটি ব্যাপকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে। দেবিদ্বার উপজেলার খলিলপুর সাইচাপাড়া সড়কটি বিপর্যস্ত হয়েছে। নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ গ্রামীণ সড়ক বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ব্যাপকভাবে। অধিক স্রোতে কিছু কিছু সড়ক খাল ও বিলের মাঝে পতিত হয়ে গেছে। স্থানীয় সরকার সূত্রে জানা যায়, ১৪ উপজেলায় ৮২৬ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক বিধ্বস্ত হয়েছে। ২৫টি বক্স, কালভার্ট ভেঙ্গে পড়েছে।
ফেনী সদর উপজলার এলাহীগঞ্জ বাজার আবুপুর বাঁধের প্রায় ৫০০ মিটার বেড়িবাধ নদীতে বিলীন হয়েছে। এতে দুইপাশের প্রায় ৫ শতাধিক জনবসতি কলার ভেলায় চলাচল করছে। পরশুরাম উপজেলায় পরশুরাম জিরোপয়েন্ট থেকে ৩ কিলোমিটার, কালিবাজার মহুরী ব্রীজ সড়কের ৩ কিলোমিটার, পরশুরাম-বাশপদুয়া সড়কের ২ কিলোমিটার, মুন্সিরহাট-জিএস হাট সড়কের ৪ কিলো, পুরাতন মুন্সিরহাট থেকে বক্স মাহমুদ বাজার পর্যন্ত ৩ কিলোমিটারসহ এলজিইডির অসংখ্য সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯.০৮.২০২৪) দুপুর থেকে সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়েছে লক্ষীপুর ফলে বেশিরভাগ বাড়িঘর থেকে পানি নেমে গেছে। তবে মেঘনা নদীর সংলগ্ন বেড়িবাঁধ সড়ক ও পৌরসভার অনেক ওয়ার্ডের বেশির ভাগ সড়ক ধ্বসে পড়েছে। রায়পুর থেকেও দ্রুত পানি নেমে যাচ্ছে কিন্তু রাস্তাঘাটের ক্ষতি আছেই। রামগতির পানি কমলেও কিছু এলাকায় দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতার সম্ভাবনা আছে যাদের মধ্যে চরপোড়াগাছা ও চরবাদাম উল্লেখ্য। সেনবাগে পানি কমছে ধীরে। তবে প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী। রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলায় উল্লেখযোগ্য হারে পানি কমছে।
কোম্পানীগঞ্জ-লক্ষীপুর সড়কে বেগমগঞ্জ চৌরাস্তা থেকে চন্দ্রগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার সড়ক বিধ্বস্ত হয়েছে। ফেনাঘাট ব্রিজেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নোয়াখালী জেলার ৮০ ভাগ উপজেলা সংযোজন সড়ক, আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়কের ৮০ ভাগ পানিতে তলিয়ে যাওযায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, মৎস্য বিভাগেরও অনেক ক্ষতি হয়েছে। বিশ^স্ত সূত্রে জানা যায় চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলায় পানিতে প্রায় ৩৫০ হেক্টর জমির রোপা আমন ও আউশসহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। হবিগঞ্জ জেলায় প্রায় ৪০টি খামারে গবাদিপশু ও ৩৫টি খামারে প্রায় ২৭ হাজার হাঁস মুরগীর ক্ষতি হয়। চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনা বিভাগে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা।  বন্যায় লাখ লাখ টন গবাদিপশু ও হাঁস মুরগীর খাদ্য ও অন্যান্য পশুখাদ্যও নষ্ট হয়।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাকড়কে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে প্রায় ১০ কিলোমিটার এবং ফেন ীর লালপোলে প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়ক পানিতে তলিয়ে ছিল। ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ এ মহাসড়কে জরুরী ভিত্তিতে মেরামতের কাজ চলছে। যান চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে সড়কের উপর অসংখ্য গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। আশার বাণী: সড়ক ও জনপথের সোর্স থেকে শোনা যায় মেরামত কাজ শুরু হয়ে গেছে, যেসব স্থানে পানি নামছে না সেসব স্থানে পানি নামার পর মেরামত শুরু হবে, সড়ক মেরামতের পর কর্মীরা ঘরে ফিরবে।
যদি পূর্ণবাসন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে না করা যায় তাহলে কৃষিপণ্য উৎপাদন ও দেশের খাদ্য নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্থ হবে। প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার ফল ও ফসল বিনষ্ট হয়েছে বলে কৃষি দপ্তরের বদৌলতে জানা যায়। কৃষির এতবড় ক্ষতি এর আগে কখনো হয়েছে বলে জানা নাই। কৃষককে বিনামূল্যে বীজ, সার, ধানের চারা দিয়ে সহায়তা করা উচিত। মৎস্য চাষীদের প্রনোদনা ও নগদ সহায়তা দিয়ে বাচিঁয়ে রাখা উচিত। যাদের মুরগীর খামার বিনষ্ট হয়েছে তাদের বিনাসুদে ঋণ দেয়া একান্ত দরকার। সর্বোপরি বাজার অর্থনীতি ও দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে এ কর্মসূচী গ্রহণ করা জাতির জন্য অপরিহার্য।  
লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ












সর্বশেষ সংবাদ
দেবিদ্বারে রুবেল হত্যা মামলা আসামী কাউছার গ্রেপ্তার
কারাগারে আইভী
ভারত-পাকিস্তান সংকটের গ্যাঁড়াকলে পড়তে চায় না যুক্তরাষ্ট্র
এক যুগ আগে নিখোঁজ বিএনপিনেতার বাসায় পুলিশ: ডিএমপির দুঃখ প্রকাশ, এসআই প্রত্যাহার
প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে আন্দোলনকারীদের নামাজ আদায়
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেন হচ্ছে আধুনিক ডিসি পার্ক
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম সেলিম গ্রেপ্তার
নাগরিক সেবার ফি ৫ গুণ বৃদ্ধি করল কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী আজ
কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ফ্লাইট থেকে আয় হলেও চালু হচ্ছে না অভ্যন্তরীণ রুট
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২