অপরূপ
সৌন্দর্যে মনমাতানো পরিবেশে সমুদ্রের সুউচ্চ ঢেউ, সূর্যাস্তের দৃশ্য,
দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ দেখার আশায় দেশ বিদেশের পর্যটকের মিলনমেলা ঘটে
কক্সবাজারে। কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান- হিমছড়ি ঝর্না, রামুতে
বৌদ্ধ বিহার, চা বাগান, চকোরিয়ার নিভৃতে নিসর্গ, মহেশখালীর আদিনাত মন্দির,
টেকনাফের সেন্টমার্টিন ও ছেঁড়াদ্বীপসহ অনেক পর্যটন স্পট। এর মধ্যে
পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ হলো পৃথীবির দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ইনানী ও লাবনী
বীচ।
বর্তমানে যুক্ত হয়েছে বিশ^মানের রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড। এটি তৈরি
করেন কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার নোয়াগ্রামের কৃর্তি সন্তান
মো.সফিকুর রহমান। ২০১৭ সালে কক্সবাজারে ঝাউতলার প্রধান সড়কের পাশে^
বিশ^মানের রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড স্থাপিত হয়। কুমিল্লা আইডিয়াল কলেজের
বার্ষিক ২০২৪ শিক্ষা সফরে গিয়ে পরিচয় হয় রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ডের মালিক
মো. সফিকুর রহমানের সাথে। এসময় কিভাবে এই বিশ^মানের সী এ্যাকুরিয়াম রেডিয়াম
ফিস ওয়ার্ল্ড তৈরির পরিকল্পনার বা আগ্রহ তৈরি হল জানতে চাইলে মো. সফিকুর
রহমান জানান- ছোট বেলা থেকে দেখতাম আমার বাবা মাছ চাষ করতেন ও বিক্রি
করতেন, দাদাও মাছের চাষও ব্যবসা করেছেন, তখন থেকে মাছের প্রতি আগ্রহ জন্মে।
এ ছাড়াও ছাত্রজীবন থেকে আমি বাবার মাছ চাষও হ্যাচারি ব্যবসা দেখাশুনা
করতাম, বিশেষ করে পড়ালেখা শেষ করে আমিও মাছ চাষের পেশায় যুক্ত হয়েছি ্ঐ
সময়ে আমার চিংড়ি চাষও বিদেশি মাছের প্রতি বেশি আকর্ষন ছিল। দেশ বিদেশ ঘুরে
বাংলাদেশে ফিস ওয়ার্ল্ড তৈরি করার আইডিয়া আসে। আমি মূলত ব্যবসার পাশাপাশি
নতুন প্রজন্মকে বিদেশি মাছ সর্ম্পকে পরিচিতি ও সাগরতলের রহস্য জানানোর জন্য
রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড স্থাপন করি । তিনি আরো জানান-ডলফিন সু আছে যেখানে
মাছ খেলা করেও পেঙ্গুইন সু চালু করতে চাই। টিকেট মূল্য তো অনেক? এমন
প্রশ্ন করলে তিনি জানান এবছর থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও
শিক্ষার্থীদের জন্য টিকটে মূল্য ৩০% কম নিচ্ছেন। তবে সর্বসাধারণের বর্তমানে
জন প্রতি প্রবেশ মূল্য তিনশত টাকা করে।
রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড যা
সমুদ্রের উপরিভাগের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হওয়ার গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে
সমুদ্রের গভীরের অদেখা জগৎ ও সামুদ্রিক জীব বৈচিত্র সম্পর্কে জানাতে
পর্যটনের এক নতুন ধারা সৃষ্টি করেছে। যেখানে ইকোট্যুরিজম বান্ধব নির্মল
বিনোদনের পাশাপাশি সাগরতলের রহস্য জানার এক দারুন সুযোগ রয়েছে। রয়েছে প্রায়
দুই শতাধিক প্রজাতির জীবন্ত সামুদ্রিক প্রাণির সমাহার। এর মধ্যে আছে হরেক
রকমের অক্টোপাস, শামুক, হাঙ্গর, কাঁকড়া, চিংড়ি, জেলিফিসসহ সমুদ্রের
জানা-অজানা অনেক আকর্ষণীয় মৎস্য। প্রতিমাসে যোগ হচ্ছে স্বাদু ও লোনা পানির
নতুন নতুন বিচিত্র প্রজাতির মাছ ও নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের ছোঁয়া। বিশ্বের
দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ও পর্যটন নগরী কক্সবাজারের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এ
এ্যাকুরিয়ামটি শুরু থেকে ভ্রমণ পিপাসু, সমুদ্রপ্রেমী শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও
সাধারণ পর্যটকদের ব্যাপক আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
এছাড়াও
রয়েছে রেডিয়েন্ট ওশ্যান রিসার্চ এন্ড এডুকেশন সেন্টার এ্যাকুরিয়াম ভিত্তিক
আনন্দ-বিনোদনের পাশাপাশি তরুণ প্রজন্ম ও সাধারণ মানুষের মাঝে এ্যাকুরিয়াম,
সমুদ্র, সামুদ্রিক সম্পদ ও পরিবেশ বিষয়ক জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে রেডিয়েন্ট ফিস
ওয়ার্ল্ড যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করছে। এই লক্ষ্যে আমাদের শিক্ষা ও
গবেষণা উইং রেডিয়েন্ট ওশ্যান রিসার্চ এন্ড এডুকেশন সেন্টার। সামুদ্রিক
জীববৈচিত্র সংরক্ষণে উৎসাহিত করা, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টি,
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় দক্ষ আগামী প্রজন্ম বিনির্মাণ এবং সমুদ্র ও
পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতার অনুভূতিকে জাগ্রত করা।
প্রথম তলায়
এ্যাকুরিয়ামে প্রবেশ করে পাবেন ওয়াটার ফল জোন, রিভার স্ট্রিম ভিউ,
ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট, স্বাদু পানির মাছ, লোনা পানির মাছ, সী সাইড জঙ্গল ভিউ,
ঈল গ্যালারী, পরিচ্ছন্ন কর্মী সাকার ফিস, ডলফিন সেলফি জোন, শার্ক গ্যালারী
ফটোসেশন, ডীপ ওশ্যান টানেল, ডীপ ওশ্যান ক্যাইভ, রেডিয়েন্ট ঝর্ণা। দ্বিতীয়
তলায় রয়েছে কোরাল রিফ ভিউ সিঁড়ি, অক্টোপাস ওয়ার্ল্ড, ইউনিভার্স অব ক্র্যাব,
স্নেইল জোন, ফরেইন ফিস জোন, কিলার শার্ক, শ্রীম্প জোন, কফি শপ,এ্যাকুরিয়াম
গবেষণাগার, বাগদা চিংড়ির জীবনচক্র, ডকুমেন্টারি শো হাউজ, থ্রিডি মুভি হাউজ
এডুকেশনাল কনফারেন্স হল। সামুদ্রিক সাপ, ফিস মিউজিয়াম, কিউট জেলি ফিস,
ফটোগ্রাফিক কালার ল্যাব, কাঠের সিঁড়ি, তৃতীয় তলা রয়েছে নাইন ডি-ভিআরএফ,
কিড্স প্লেয়িং এন্ড গেইমিং জোন, কোরাল কনফারেন্স হল, চতুর্থ তলায় রূপচান্দা
কনফারেন্স হল, রুফ টপ রুফ টপ গার্ডেনিং, রুফ টপ বার-বি-কিউ।
কক্সবাজারে
বর্তমানে হোটেল- মোটেল আর গেস্ট হাউস সংখ্যা অনেকগুণ বেড়েছে। সেই সাথে
পাল্লা দিয়ে বেড়েছে থাকা খাওয়া এবং যাতায়াত খরচ। তবে দৃশ্যমান পর্যটকদের
জন্য নেই সরকারি কোনো দিক নির্দেশনা। সমুদ্র সৈকতের পরিবেশও শতভাগ
পর্যটকবান্ধব বলা যায় না, এখানে দেখা মেলে কুকুর, গরু এবং অসুস্থ ঘোড়া, নেই
সঠিক বর্জ্যব্যবস্থাপনা। একান্তে সময় কাটাতে বা চেয়ারে বসে সমুদ্রের ঢেউ
উপভোগ করতে চাইলেও তা সম্ভব না, কারণ একের পর এক ভিক্ষুক, ফেরিওয়ালা,
চা-কফি বিক্রেতা, শিশুরা এসে গান শোনাতে চাইবে, মাথাও পা টিপে দিতে চাইবে
টাকার বিনিময়ে। এসব আমার নিকট অনেক বিরক্ত লেগেছে। এ অবস্থায় সরকারের
সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উচিত সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন করা এবং সেই মোতাবেক
যথাযত ব্যবস্থা নেওয়া।
পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেশের জিডিপি।
ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের এক তথ্যমতে পর্যটন শিল্পে
২০২১ সালে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও জিডিপিতে আবদান রাখে ২ শতাংশ, যা প্রায় ৭
হাজার ৮৩৩ মিলিয়ন ডলার। এই শিল্পে প্রতিবছর কক্সবাজার বিরাট ভূমিকা পালন
করে। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। বিশেষ করে পর্যটক নিরাপত্তায় ব্যবস্থাসহ আবাসিক
হোটেল মান যাচাই করে ভাড়া নির্ধারণের ব্যবস্থা করা। সমুদ্র সৈকতে কুকুর,
গরু, ঘোড়া ও হকারের উৎপাত কমিয়ে আনা। শহরের কলাতলি মোড় ও টার্মিনালে
ট্যুরিস্ট পুলিশের হেল্প ডেস্ক স্থাপন সময়ের দাবী।
লেখক: লেখক : প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, কুমিল্লা আইডিয়াল কলেজ,বাগিচাগাঁও, কুমিল্লা।