শনিবার ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
২৩ ভাদ্র ১৪৩১
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখাসহ পাঁচ প্রস্তাব শিক্ষকদের
প্রকাশ: সোমবার, ৫ আগস্ট, ২০২৪, ১২:০১ এএম |


বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে রূপান্তরের রূপরেখা প্রস্তাব করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। শিক্ষার্থী, জনতার অভ্যুত্থানের মূল শক্তিগুলোর সম্মতিক্রমে, নাগরিক ও বাজনৈতিক শক্তিগুলোর  অন্তর্ভুক্তিমূলক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয় রূপরেখায়। এছাড়া এই সরকারের সদস্য নির্বাচনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মুখ্য ভূমিকা পালন করবেন। এই সরকারের কাছে শেখ হাসিনার সরকার পদত্যাগ করবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়।
রবিবার (৪ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের রূপরেখা উপস্থাপন করেন আনু মোহাম্মদ।
বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে রূপান্তরের রূপরেখা প্রস্তাব বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের  বিভিন্ন অংশ পড়ে শোনান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতিআরা নাসরীন, অধ্যাপক ড. সামিনা লূৎফা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. তানজিম উদ্দিন খান, বুয়েটের অধ্যাপক আব্দুল হাসিব চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোসাহিদা সুলতানা।
এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আমরা একটা ভয়ংকর সময় পার করছি। একইসঙ্গে আমরা একটা অসাধারণ সৃষ্টিশীল সম্ভাবনাময় সময়ও পার করছি। আমরা ভয়ংকর দমন পীড়ন দেখছি, আমরা অসাধারণ প্রতিরোধও দেখছি। আমরা দেখতে পাচ্ছি, নারী পুরুষ শ্রমজীবী-পেশাজীবী-শিক্ষার্থী-শিক্ষক। সবার ওপর আক্রমণ চলছে। এই আক্রমণের ফলে সংবাদ মাধ্যমের হিসাব অনুযায়ী, গত ১৬ জুলাই থেকে প্রায় তিনশ’র কাছাকাছি মানুষ শহীদ হয়েছেন সরকারি দল ও তার অঙ্গ সংগঠনের সশস্ত্র ব্যক্তি এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গুলিতে। এই নিয়তের কাতারে কে নেই। আছেন শিক্ষার্থী, শিশু-কিশোর, শ্রমজীবী মানুষ, সাংবাদিকরা। গণঅভ্যুত্থান আমরা অনেক দেখেছি। কিন্তু মাত্র ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে এত প্রাণহানি বাংলাদেশ আর কখনও দেখেনি। এই ভয়ংকর নিপীড়নের বিপরীতে অসাধারণ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে শিক্ষার্থীরা। শত নিপীড়ন ও প্রলোভন সত্ত্বেও তাদের ঐক্য অটুট। সরকার এবং তাদের গু-াবাহিনীর অব্যাহত নারকীয় আক্রমণের পরও এ প্রতিবাদ বন্ধ হয়নি।
আজকে আর এ আন্দোলন কেবল কোটা সংস্কারের প্রশ্নে আটকে নেই, জুলাই হত্যাকা-ের বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থী-জনতার এক গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি আজ গুলি, হত্যাযজ্ঞ, হামলা, গণগ্রেফতার বন্ধ, আটক শিক্ষার্থী জনতার মুক্তি, কারফিউ প্রত্যাহার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া ও অসংখ্য শিক্ষার্থী-জনতাকে হত্যার দায়ে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের এক দফায় এসে ঠেকেছে। বিশ্ববিদালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক শিক্ষার্থীদের সব দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে এই স্বৈরাচারী সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করছে। তারপরও অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি এবং আমাদের শিক্ষার্থীরাও একমত হবেন যে, কেবল শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পতন বাংলাদেশের মুক্তি আনবে না। পুনঃপুন স্বৈরাচারী ব্যবস্থার বেড়ে ওঠা বন্ধ করবে না। কারণ আমাদের সংবিধানের মধ্যেই এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরাচারী ব্যবস্থা বিকাশের সুযোগ লুকায়িত আছে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র বেদখল হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধকে পুনরুদ্ধার করতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের নাম নিয়ে কিংবা না-নিয়ে লুটপাট, অন্যায়, দুর্নীতি, প্রাণ-প্রকৃতি বিধ্বংসী 'উন্নয়নে'র মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী কায়দায় জনগণের ওপর আক্রমণ আর চলবে না।
লিখিত বক্তব্যে আর বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক রূপরেখা কয়েকটি ধাপে এই পদভ্যাস ও গণতান্ত্রিক রূপান্তর সম্ভব হলে আমরা মনে করি।
রূপরেখা
১. অবিলম্বে শিক্ষার্থী, জনতার অভ্যুত্থানের মূল শক্তিগুলোর সম্মতিক্রমে, নাগরিক ও বাজনৈতিক শক্তিগুলোর মতামতের ভিত্তিতে শিক্ষক, বিচারপতি, আইনজীবী ও নাগরিক সমাজের অংশীজনদের নিয়ে একটি জাতি-ধর্ম লিঙ্গ-শ্রোণির অন্তর্ভুক্তিমূলক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে। এই সরকারের সদস্য নির্বাচনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মুখ্য ভূমিকা পালন করবেন। এই সরকারের কাছে শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করবে।
২. শিক্ষার্থী জনতার অভ্যুত্থানের মূল শক্তিগুলোর অংশীজনদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে সর্বদলীয় শিক্ষার্থী শিক্ষকসহ নাগরিকদের নেতৃত্বে একটি ছায়া সরকার গঠিত হবে। তারা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জবাবদিহি এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে, যেন দেশে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত হয় এবং এই গণঅভ্যুত্থানের প্রকৃত দাবি 'বৈষম্যহীন বাংলাদেশ' প্রতিষ্ঠার পথে যথেষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এ ধরনের ছায়া সরকার নির্বাচিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়ও অব্যাহত থাকতে পারে।
৩. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর যে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলো পালন করবে সেগুলো হলো:
ক. জুলাই হত্যাকা- এবং জনগণের ওপর নৃশংস জোরজুলুমের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের জন্য জাতিসংঘের সহযোগিতায় তদন্ত কমিটি এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করবে।
খ. সাম্প্রতিক সময়ে করা মিথ্যা, ঘড়যন্ত্রমূলক ও হয়রানিমূলক মামলা বাতিল করবে এবং এসব মামলায় আটক সবাইকে মুক্তি দিবে।
গ. সরকার গঠনের ৬ মাসের মধ্যে একটি সংবিধান সভা (কনস্টিটিউশনাল অ্যাসেম্বলি) গঠনের জন্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। নির্বাচিত সংবিধান সভা এমন এক গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রস্তাব করবে যে সংবিধানে স্বৈরতান্ত্রিক, সাম্প্রদায়িক, জনবিদ্বেষী, বৈষম্যমূলক কোনো ধারা থাকবে না। সেই সংবিধানের ভিত্তিতে সরকার অবিলম্বে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করবে।
৪. শিক্ষার্থী-নাগরিকদের অভ্যুত্থানের মূল শক্তিগুলোর মধ্যে সংলাপের ভিত্তিতে একটি ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করতে হবে, যেখানে বৈচিত্র্য ও ভিন্নতার মেলবন্ধনে জনগণের বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার পথ নির্দেশ করা হবে।
৫. আমাদের প্রস্তাবিত অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠন, মূল অংশীজনের তালিকা প্রণয়ন এবং শিক্ষার্থী জনতার ছায়া সরকার গঠনের প্রয়োজনে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক যেকোনো দায়িত্ব পালন করতে প্রস্তুত। এ রূপরেখা একটি প্রাথমিক প্রস্তাব মাত্র, প্রয়োজনে এ প্রস্তাবকে আরও বিস্তৃত করার জন্য আমরা ভবিষ্যতে কাজ করতে আগ্রহী।













সর্বশেষ সংবাদ
দাউদকান্দিতে মাদক সংক্রান্ত বিরোধে যুবককে কুপিয়ে হত্যা
অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতের কলকাতায় গ্রেপ্তার এক আওয়ামী লীগ নেতা
বন্যায় কুমিল্লার ক্ষয়ক্ষতি প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা
কুমিল্লায় বাসের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ৪ যাত্রী নিহত
কুমিল্লা মেডিকেলের ৯ জনের ইন্টার্নশিপ স্থগিত
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতের কলকাতায় গ্রেপ্তার এক আওয়ামী লীগ নেতা
মুজিবুল হক, বাহার ও সূচিসহ ৪৩৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
লাশ পোড়ানো আশুলিয়া হত্যাযজ্ঞ
কুমিল্লায় ট্রিপল মার্ডার
বন্যায় কুমিল্লার ক্ষয়ক্ষতি প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২