বুধবার ২২ মে ২০২৪
৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
এবার পাহাড় কেটে রেস্টুরেন্ট বানাচ্ছেন কুবি প্রক্টর
সাঈদ হাসান, কুবি
প্রকাশ: বুধবার, ১ মে, ২০২৪, ১২:৪৭ এএম |

  এবার পাহাড় কেটে রেস্টুরেন্ট বানাচ্ছেন কুবি প্রক্টর
*বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার
*পাহাড়া কাটার নেওয়া হয়নি ছাড়পত্র

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারিত অংশের সামনে পাহাড় কেটে তিন তলাবিশিষ্ট রেস্টুরেন্ট বানাচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী। এই রেস্টুরেন্ট তৈরিতে জায়গা সমান করার জন্য প্রায় ১৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট উচ্চতার একটি পাহাড় কাটা হয়েছে। যার জন্য নেওয়া হয়নি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। তবে পাহাড় কাটার ওই অংশটি নিজের জমি নয় দাবি করলেও শিক্ষকদের অভিযোগ তিনি আত্মীয়ের নামে এই জমি কিনে রেখেছেন। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ব্যবহার করে এই কাজের তদারকি করছেন তিনি। এর আগেও বিভিন্ন সময় ব্যক্তিগত কাজে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের (সংশোধন) ২০১০-এর ৬-এর ‘খ’ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো পাহাড় বা টিলা কর্তন বা মোচন করা যাইবে না, তবে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণক্রমে পাহাড় কর্তন করা যাইবে।’ আইনে পাহাড় বা টিলা কাটার জন্য ছাড়পত্রের বিধান থাকলেও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে প্রক্টর কোনো অনুমতি নেয়নি বলে জানা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাতের আঁধারে চুপিচুপি কাটা হয় পাহাড়। শব্দ হবে তাই ব্যবহার করা হয় না কোনো এক্সকেভেটর।
সরেজমিনে রমজানে রাতের বেলা সেখানে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকরা পাহাড় কাটছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শ্রমিক বলেন, আমাদেরকে পাহাড় কাটতে বলা হয়েছে আমরা পাহাড় কাটতেছি। এই জায়গা ভার্সিটির প্রক্টর স্যারের। আমরাতো শ্রমিক এতো বিষয়ে আমরা জানিনা।
ওই রেস্টুরেন্টে নাইট গার্ড হিসেবে দায়িত্বরত আছেন কামাল হোসেন। তিনি বলেন, রমজানে রাতের বেলা পাহাড় কাটা হয়েছে। কাজ দেখতে প্রক্টর স্যার গাড়ি দিয়ে রাতের বেলা আসেন। কাজের খোঁজ নিয়ে আবার চলে যান।
সার্বিক কাজ পরিচালনা করছেন শামিম মিয়া। তিনি বলেন, এখানে চাপাইনবাবগঞ্জের একজন ঠিকাদার কাজ করেছে। আমি এখন শুধু দেখাশোনা করি। স্যার আমাকে ফোন দিয়ে এটা, ওটা করতে বলে আমি সে অনুযায়ী কাজ করি। এখানে পাহাড় কাটা হয়েছে জায়গাটা সমান করার জন্য। এখানে আটটি পিলার বসানো হবে।
পাহাড় কাটার অনুমতির বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজীব বলেন, পাহাড় কাটার ব্যাপারে আমাদেরকে জানানো হয়নি। আমরা সেখানে লোক পাঠাবো এবং পরবর্তী ব্যবস্থা নিব।
এদিকে এই রেস্টুরেন্ট তদারকির জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুমিল্লা-চ ৫১০০৮৪) নাম্বারের গাড়ি ব্যবহার করছেন। নিয়মানুযায়ী ওই গাড়ি প্রক্টরিয়াল বডির অফিস সংক্রান্ত কাজে ব্যবহার করার কথা থাকলেও তা তিনি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন।
চৌধুরিখোলার স্থানীয় বাসিন্ধা মফিজ বলেন, আমরা শুনছি এই জায়গাটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা চিচার কিনছে। চারপাশে বেড়া দিয়ে কয়েক মাস ধরে সে অনেকগুলো মাটি কেঁটে ফেলছে। দেখা যায় প্রায় সময় ওনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা গাড়ি নিয়ে আসে। আসলে ওনি তো বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার, মাটি যে কাটে এইটা নিয়ে তো আমরা কোন প্রতিবাদ করতে পারি না।
গত ২২ এপ্রিল রাত ৯টায় প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীকে গাড়িসহ সেখানে দেখা যায়। প্রতিবেদকের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি সেখান থেকে সরে যান।
এরপর রাত ১০ টায় ওই গাড়ির ড্রাইভার আকতারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি বলেন, স্যার সেখানে রেস্টুরেন্ট দেখতে গেছেন। আমি এখানে জড়িত না। আমাকে প্রেসারও দেয় না। আমি কোন সহযোগিতাও করিনি। আমাকে স্যার বলছে তাই গেছি।
এ ব্যাপারে জানতে পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. স্বপন চন্দ্র মজুমদারকে একাধিকবার মুঠোফোন কল দেওয়া হলে তিনি ব্যস্ততার অজুহাত দেখান।
পরিবহন পুলের সেকশন অফিসার জাহিদুল ইসলাম বলেন, এই গাড়ি উনার আন্ডারে থাকে। এটা প্রক্টরিয়াল বডি অফিস সংক্রান্ত কাজে ব্যবহার করবে। এখন উনি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতেছে কিনা আমি জানিনা।
সাবেক প্রক্টর ও শিক্ষক সমিতির কার্যকরী সদস্য মোহাম্মদ আইনুল হক বলেন, প্রক্টরিয়াল বডির কাজে এবং উপাচার্যের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে এই গাড়ি ব্যবহার করতে হবে। অন্য কাজে ব্যবহার করলে সেটা অপরাধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যখন এসব ব্যবসা বাণিজ্যে জড়িয়ে যায় তাহলে ওই শিক্ষকের মাঝে আর শিক্ষকতার মূল্যবোধ থাকে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারিত অংশে তিনি ভূমি অধিগ্রহণের পূর্বে বিভিন্ন দাগে নামে জমি ক্রয় করেছেন ।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ওমর সিদ্দিকী বলেন, ওইটা আমার জায়গা না। কেউ যদি বলে থাকে এটা আমার জায়গা তাহলে তাঁরা জানে না। আমি সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি নিয়ে যাইনি। তোমার কাছে ভিডিও থাকলে তুমি নিউজ করে দাও। ব্যক্তিগত বিষয়ে নিয়ে ঘাটাঘাটি করো না।
সার্বিক বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএফ আবদুল মঈনকে মুঠোফোনে কল দেওয়া হয় এবং দপ্তরে গেলেও পাওয়া যায়নি।













সর্বশেষ সংবাদ
মাঠের কর্মী বাবলুর বাজিমাত
টাকা ছড়ানো ও কেন্দ্রে অনুপ্রবেশের অভিযোগে দুইজনকে কারাদণ্ড
‘দ্বিতীয় ধাপে ৩০ শতাংশের বেশি ভোট পড়তে পারে’
চৌদ্দগ্রামে সবজি বোঝাই ট্রাক উল্টে চালক নিহত হেলপার আহত
হোমনায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বাড়িতে হামলা, আহত ৬
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
মাঠের কর্মী বাবলুর বাজিমাত
নির্যাতনের পর গৃহবধূর চুল কেটে স্বামী ও ননদ
বাচ্চাদের মোবাইল আসক্তি কমাবেন যেভাবে
ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুতে বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় শোক পালন করবে বাংলাদেশ
একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি শুরু ২৬ মে, ফি কত?
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২ | Developed By: i2soft