
বিশেষ
প্রতিবেদক: কুমিল্লায় ঈদের ছুটিতে পরিবারের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করার
স্থলে বিষাদে রূপ নিয়েছে বেশ কয়েকটি পরিবারে। ঈদের ছুটিতে কুমিল্লায় পৃথক
৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত হয়েছে। স্বজনহারাদের আর্তনাদে ম্নান হয়ে গেছে
ঈদ আনন্দ। এর মধ্যে চান্দিনায় ২ জন, লাকসামে ২জন, বরুড়ায় ১ জন, বুড়িচংয়ে
১জন, মুরাদনগরে ১ জন এবং চৌদ্দগ্রামে ২ জন নিহত হয়েছে।
৫ মে
(বৃহস্পতিবার) ভোর ৫ টায় কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক সড়কের লাকসাম উপজেলার
উত্তরদা ইউনিয়নের চন্দনা বাজার সংলগ্ন এলাকায় পেট্রোবাংলার একটি পিকআপ
ভ্যান দুর্ঘটনায় হেলাল উদ্দিন (৫০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এসময় তার
সাথে থাকা অপর একজন আহত হয়েছেন।
নিহত হেলাল উদ্দিন চাঁদপুর জেলার
শাহরাস্তি উপজেলার টামটা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আইউব আলীর ছেলে।
তিনি পেট্রোবাংলায় কর্মরত বলে জানান হাইওয়ে পুলিশ।
নিহত হেলালের
নিকটাত্মীয় মো. আতিকুর রহমান জানান, হেলাল পেট্রোবাংলার নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ
ব্রাঞ্চে চাকরি করতেন। তিনি ঈদের আগে ছুটি পাননি, তাই বাড়ি যেতে পারেননি।
ঈদের পর ছুটি পেয়ে বৃহস্পতিবার বাড়ি যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় মারা যান।
লাকসাম হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইন-চার্জ মাকসুদ আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

একই
উপজেলায় ১ মে (রবিবার) সকালে লাকসাম পৌরসভার সামনে নোয়াখালী এক্সপ্রেস
নামের একটি ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে ইমরান হোসেন (২২) নামে এক যুবকের মৃত্যু
ঘটেছে। নিহত ইমরান নোয়াখালী জেলার মাইজদী সোনাপুর এলাকার লুৎফুর রহমানের
ছেলে।
লাকসাম রেলওয়ে থানা পুলিশের অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মো. জসিম
উদ্দিন খন্দকার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঢাকা থেকে নোয়াখালীগামী নোয়াখালী
এক্সপ্রেস ট্রেন সকাল ৭টায় লাকসাম জংশন অতিক্রম করে। কিছুক্ষণ পরে খবর আসে
এক যুবক ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছেন। তিনি ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে বাড়ি
যাচ্ছিলেন।
৪ মে (বুধবার) দুপুরে কুমিল্লা-বরুড়া আঞ্চলিক সড়কের মেড্ডা এলাকায় বাসচাপায় মো. মফিজুল ইসলাম (৪৫) নামে এ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
নিহত মফিজুল ইসলাম বরুড়া পৌরসভা এলাকার দেওড়া গ্রামের আবু মিয়ার ছেলে। তিনি পেশায় ভ্যানচালক।
বরুড়া
থানার অফিসার ইন-চাজা (ওসি) ইকবাল বাহার মজুমদার জানান, মফিজুল ইসলামের
নামের ওই ভ্যান চালক ভ্যান চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এসময় বলাকা নামের একটি বাস
চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু ঘটে।
২ মে (মঙ্গলবার) ঈদের দিনে ভোরে
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মাধাইয়া বাস স্টেশন
এলাকায় দ্রুতগামী প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন এক
পথচারীসহ সিএনজি অটোরিক্সার চালক নিহত হয়েছে।
নিহত সিএনজি চালক সোহেল
(৩৫) চান্দিনা উপজেলার বাসিন্দা ও মানসিক ভারসাম্যহীন পথচারী মুরাদনগর
উপজেলার পাহারপুর গ্রামের নাজমা বেগম (৪৬)।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,
ঢাকাগামী একটি প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের মাধাইয়া বাস স্টেশন
এলাকায় নবাবপুর সংযোগ সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি সিএনজি অটোরিক্সাকে চাপা দেয়।
এসময় সিএনজি অটোরিক্সায় থাকা সিএনজি চালক ও মহাসড়কের পাশে বসে থাকা মানসিক
ভারসাম্যহীন নারী নিহত হয়। দুর্ঘটনায় অটোরিক্সা ও প্রাইভেটকারটি দুমড়ে
মুচরে যায়। এতে প্রাইভেটকার চালক জাকির হোসেন (৪০) আহত হয়। তাকে চান্দিনা
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢামেকে পাঠানো হয়।
হাইওয়ে
পুলিশ ইলিয়টগঞ্জ ফাঁড়ির ইন-চার্জ (ইন্সপেক্টর) মো. মাসুদ আলম চৌধুরী
বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে দুইজনের মরদেহ পেয়েছে। সকালে
পরিবারের কাছে মরদেহগুলো হস্তান্তর করেছি। ঢামেকে থাকা আহত রোগীর আর কোন
তথ্য পাইনি।
একই দিনে দুপুরে মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার
আমনগন্ডা এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি প্রাইভেটকার পাশ্ববর্তী জমির ডোবাতে
আছড়ে পড়ে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকার চালক মঞ্জুরুল হক (৩৫) নিহত হয়।
নিহত ব্যক্তির নাম মঞ্জুরুল হক (৩৫)। তিনি বরিশাল সদর উপজেলার বাসিন্দা। পেশায় একজন প্রকৌশলী।
স্থানীয়
সূত্রে জানা যায়, প্রাইভেকারটি মাত্রাতিরিক্ত গতিতে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল।
হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়ক থেকে ছিটকে প্রায় ১৫ গজ দূরে ফসলীতে থাকা
একটি বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ধাক্কা লেগে জমির পাশে থাকা ডোবায় আছড়ে পড়ে। এসময়
ঘটনাস্থলেই ওই চালকের মৃত্যু ঘটে।
চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজার হাইওয়ে থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) একেএম মঞ্জুরুল হক আকন্দ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এছাড়াও
ঈদের দিন মঙ্গলবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার
নাজিরা বাজার ইউটার্ন এলাকায় এক অজ্ঞাত মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন বলে
জানা গেছে।
এদিকে গত বৃহষ্পতিবার কুমিল্লার মুরাদনগরে সিএনজি চালিত
অটোরিক্সার মুখোমুখি সংঘর্ষে মুসলিম সরকার (৬৫) নামে এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর সড়কের বাখরনগর মাদরাসার
সামনে এ দূর্ঘটনা ঘটে। নিহত মুসলিম সরকার উপজেলার নবীপুর পূর্ব ইউনিয়নের
বাখরনগর গ্রামের চারু সরকার বাড়ির মৃত নান্নু ব্যাপারীর ছেলে।
স্থানীয়
সূত্রে জানা যায়, মুসলিম সরকার বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার
কোম্পানীগঞ্জ বাজারের নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে একটি সিএনজি চালিত
অটোরিক্সা দিয়ে বাখরনগর গ্রামের নিজ বাড়িতে যাচ্ছিলেন। কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর
সড়কের বাখরনগর মাদরাসার সামনে পৌছঁলে অপর দিক থেকে আশা আরো একটি সিএনজি
চালিত অটোরিক্সার মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে সিএনজিতে থাকা যাত্রী মুসলিম সরকার
গাড়ী থেকে ছিটকে সড়কে পরে যান। এ সময় পিছন দিক থেকে আশা আরো একটি সিএনজি
তাকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
মুরাদনগর থানার ওসি আবুল
হাসিম সড়ক দূর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে দৈনিক কুমিল্লার কাগজকে বলেন, কোন
অভিযোগ না থাকায় লাশ পরিবারের লোকদের কাছে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এদিকে
সর্বশেষ গতকাল কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে অজ্ঞাতনামা দ্রুতগামী গাড়ীর ধাক্কায় ১
শিশু নিহত হয়েছে। নিহত শিশুটি চিওড়া ডিমাতলী গ্রামের দিনমজুর
রাজমিস্ত্রী ফুল মিয়ার মেয়ে তাহমিনা আক্তার ( ৬)। শুক্রবার (৬ মে ) সকাল
১১ ঢাকা -চটগ্রাম মহাসড়কে চিওড়া রাস্তায় মাথায় দুর্ঘটনায় হয় পরে স্থানীয়রা
উদ্ধার করে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলেন কর্মরত ডাক্তার মৃত
ঘোষণা করে।