স্বাগত আশা জাগানিয়া ২০২২
Published : Saturday, 1 January, 2022 at 12:00 AM
নদীর স্রোতের মতো মানুষের জীবন কখনও
থেমে থাকে না। তমসা কেটে তেজদীপ্ততা ছেড়ে মলিন হয়ে শুক্রবার সূর্যাস্ত
হয়েছে সূয্যিমামার। বিশ্বের বয়স বাড়ল আরও এক বছর। ‘করোনামুক্ত বিশ্ব’ দেখার
প্রত্যাশার ঝাপি খুলে আজ শনিবার বিশ্বময় আশা জাগানিয়া যে নতুন সূর্যটি
উঠেছে, সেটি নতুন বছরের। বিদায় বিষময় ২০২১, স্বাগত ২০২২ সাল।
দু’হাজার
২০ সালের মতো এবারও সূর্যাস্ত শেষে দিবাগত রাতের প্রথম প্রহরেই প্রাপ্তি আর
অপ্রাপ্তির হিসাব নিয়ে পৃথিবীকে বিষময় করে বিদায় নিল আরও একটি আলোচিত ভয়াল
বছর। তবে নতুন বছর বাঙালীর জীবনে আসছে এক অন্যরকম প্রত্যাশা নিয়ে। কেননা
এই নতুন বছরেই খুলে যাবে বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি
স্বপ্নের পদ্মা সেতু। আবার এ বছরেই রাজধানীতে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হবে
মেট্টোরেল। কর্ণফুলী বঙ্গবন্ধু টানেলের দুয়ারও খুলে যাবে এ বছর। বিশ্বের
সামনে মাথা উঁচু করে বাংলাদেশ দাঁড়াবে নতুন মর্যাদা নিয়ে। গোটা বিশ্ব দেখবে
বিস্ময়কর উন্নয়ন-অগ্রগতি ও শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো এক
অন্যরকম বাংলাদেশকে। সমাপ্ত বছরেই বাংলাদেশ অর্জন করেছে স্বল্পোন্নত দেশ
থেকে উন্নয়নশীল দেশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। দেশের এই এগিয়ে যাওয়ার গল্পের
প্রধান কারিগরই হচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা ও রেকর্ড চতুর্থবারের মতো
প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা। অনাদিকাল থেকে সৌরজগতের নিখুঁত
নিয়মে প্রতিদিন সূর্যোদয় হয়। প্রতিদিনের মতো আজও সূর্য উঠেছে। শীতের
কুয়াশা সরিয়ে উঁকি দিয়েছে উজ্জ্বল রোদ। কিন্তু অন্য যে কোন দিনের চাইতে
আজকের ভোরের আলো যেন বেশি মায়া মাখানো। যেন নতুন স্বপ্নের কথা বলছে। বলছে,
সামনের দিনগুলোতে করোনাসহ সকল অনিশ্চয়তা কেটে গিয়ে শুভময়তা ছড়িয়ে যাবে
দেশে, পৃথিবীময়। আশাজাগানিয়া সূর্যকিরণ যেন সে দ্যুতিই ছড়িয়ে দিচ্ছে
প্রত্যেকের প্রাণে, মনে।
তবে সদ্য বিদায় নেয়া বছরকেও ভুলতে পারবে না
বিশ্বের মানুষ। এই বছরটিও কেটেছে আতঙ্ক, উদ্বেগ আর অনিশ্চয়তায়। পুরো বছরটিই
কেটেছে করোনাভাইরাসের মরণ-ভীতি। কেড়ে নিয়েছে অসংখ্য মানুষের প্রাণ, এখনও
তা অব্যাহত রয়েছে। স্বল্পতম সময়েই আবিষ্কার হয়েছে ভ্যাকসিন, প্রয়োগও শুরু
হয়েছে দেশে দেশে। বিশ্বের সব মানুষের এখন একটাই আশা- করোনা ঝড় মোকাবেলায়
সক্ষম হোক মানুষ, পৃথিবী থেকে দূর হোক প্রাণঘাতী কোভিড-১৯। ২০২১-কে বিদায়
জানাতে ভারাক্রান্ত হয়নি কোন মানুষের মন, কারণ একুশও যে বিষ ছড়িয়েছে আরও
বেশি। তাই বিশ্বের মানুষ নতুন বছর ২০২২-কে স্বাগত জানিয়েছে নতুন আশায় বুক
বেঁধে।
অশুভ শক্তির মিথ্যা বোধ, প্রজন্মের নষ্ট হয়ে যাওয়া মুখগুলোর
আস্ফালনের অশুচি কাটিয়ে অস্তাচলে গেল যে সূর্যটি, আজ পূর্বদিগন্তে শাশ্বত
সেই সূর্যেরই উদয় হয়েছে নতুন সৌন্দর্যের আবাহন ঘটিয়ে। ‘জয় বাংলা, জয়
বঙ্গবন্ধু’ বলে নবোদয় ঘটেছে এক নতুন প্রজন্মের- যে প্রজন্মের কাছে মায়ের
মতো পবিত্র তার দেশ, সূর্যের মতো সত্য তার মুক্তিযুদ্ধ আর উন্নয়নের জ্যোতির
মতোই দ্যুতি ছড়ানো তার ভবিষ্যত। তাই একাত্তরের মতোই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের
শক্তির অবিস্মরণীয় অগ্রযাত্রা আর স্বাধীনতাবিরোধী অশুভ শক্তিকে আগের মতো
বারবার পরাজিত করার দৃঢ় শপথে নতুন বছরকে স্বাগত জানাচ্ছে দেশের মানুষ।
করোনার
ভয়াল তান্ডব এখনও কমেনি। তবুও তমসা কেটে পূর্বদিগন্তে আবহমান সূর্য আবার
শুরু করল নতুন যাত্রা। ‘সময় আর স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না’- এই সত্যকে
বিমূর্ত করে নতুন বছরের প্রথম সূর্যোদয়। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস থেকে
মুক্তির স্বপ্ন আর দিনবদলের অপরিমেয় প্রত্যাশার আলোয় উদ্ভাসিত শুভ নববর্ষ।
মহাকালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেল আরেকটি বছর ২০২১। শুরু হলো নতুন বছর ২০২২।
সুপ্রভাত বাংলাদেশ; স্বাগত ২০২২। হ্যাপি নিউ ইয়ার ২০২২। অভিবাদন নতুন
সৌরবর্ষকে।
সেই একই সূর্য, একইভাবে উঠছে পূর্বাকাশ আলো করে। তবু তার উদয়
ভিন্নতর। আজকের দিনটিও আলাদা, কারণ একটি নতুন বর্ষপরিক্রমা শুরু হলো আজ
শনিবার থেকে। সোনালি স্বপ্নের হাতছানি নিয়ে উদিত হলো নতুন বছরের নতুন
সূর্য। ভরা পৌষে কুয়াশার হিমেল চাদর ছিন্ন করে উদ্ভাসিত হলো সোনালি আলোর
সকাল। কালপরিক্রমায় দ্বারোদ্ঘাটন হলো প্রকৃতির নতুন নিয়মে নতুন বৎসর
২০২২-এর। চেতনায় জাগ্রত আবহমান সেই মাঙ্গলিক বোধ- অতীতের জীর্ণতা
অতিক্রান্ত দিনমাসপঞ্জির হিসাব থাক বিস্তৃতির কালগর্ভে, প্রত্যাশায় বুক
বাঁধি নতুন দিনের সূর্যোলোকে- তবে উদ্ভাসন হোক সজীব-সবুজ নতুনতর সেই
দিনের, যা মুছে দেবে অপ্রাপ্তির বেদনা; জাগাবে নতুন প্রত্যয়ে নতুন
সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা।
গ্রেগরিয়ান পঞ্জিকা অনুযায়ী ইংরেজী
নববর্ষের প্রথম দিন আজ। আজ ২০২২ সালের প্রথম দিন। ‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু,
বিরহদহন লাগে/ তবু শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে।’ কবিগুরু
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের এ কথার মতোই দুঃখ, কষ্ট, করোনার ভয়-ভীতি সবকিছু
কাটিয়ে নতুন জীবনের দিকে যাত্রার প্রেরণা নেবে মানুষ। নতুন বছরটি যেন
পৃথিবী করোনামুক্ত হয়, প্রতিটি মানুষের মন থেকে সকল গ্লানি, অনিশ্চয়তা,
হিংসা, লোভ ও পাপ দূর করে। বিশ্ব থেকে বিতাড়িত হয় ঘাতক করোনাভাইরাস। আমাদের
সাম্প্রদায়িকতামুক্ত প্রিয় স্বদেশ আরও সমৃদ্ধির দিকে যেন এগিয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশে
ইংরেজী নববর্ষ উদ্যাপনের ধরন বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের মতো ব্যাপক না হলেও এ
উৎসবের আন্তর্জাতিকতার ছোঁয়া থেকে বাংলাদেশের মানুষও বিচ্ছিন্ন নয়।
বিশ্বের বয়স আরও এক বছর বাড়ল। এক বছরের ‘আনন্দ-বেদনা, আশা-নৈরাশ্য আর
সাফল্য-ব্যর্থতার পটভূমির ওপর আমাদের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এই প্রিয়
বাংলাদেশ নতুন বছরে পর্বতদৃঢ় একতায় সর্ব মহামারী-বিপর্যয়-দুঃসময়কে জয় করবে
অজেয়-অমিত শক্তি নিয়ে’- এ সংকল্পের সোনালি দিন আজ। আলোড়ন আর তোলপাড় করা
ঘটনাবহুল ২০২১-এর অনেক ঘটনার রেশ নিয়েই মানুষ এগিয়ে যাবে। ভাগ্যাকাশে
আনন্দ-বেদনা প্রত্যাশা আর দুর্যোগের ঘনঘটা নিয়েই বাঙালীর বছর ফুরোল। সূচনা
হলো আরও একটি বর্ষযাত্রা।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিম-লকে রীতিমতো
বিপর্যন্ত ও অস্তিত্বের কিনারে ঠেলে দিয়ে মহাকালের অতল গর্ভে শুক্রবার
সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে চলে গেছে বিদায়ী বছর ২০২১। আবহমান সূর্য একটি
পুরনো বছরকে কালস্রোতের ঊর্মিমালায় বিলীন করে আবার শুরু করল যাত্রা। স্বপ্ন
আর দিনবদলের অপরিমেয় প্রত্যাশার রক্তিম আলোয় উদ্ভাসিত ইংরেজী নতুন বছর
শুরু হলো। লাখো প্রত্যাশার ঝাপি খুলে এবং সরকারের কাছে মানুষের অনেক
প্রত্যাশায় আজ ভোরে কুয়াশায় ঢাকা পূর্বাকাশে উদয় হয়েছে নতুন বছরের
লালসূর্য।
আজ নতুন দিনের নতুন সুর্যালোকে স্নান করে সিক্ত হবে
জাতি-বর্ণ-নির্বিশেষে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ। সব কালিমা ধুয়ে-মুছে নতুন
কেতন ওড়াতে ওড়াতে এগিয়ে যাবে সময়, সভ্যতা, হিংসা-বিদ্বেষ-হানাহানিমুক্ত
রাজনীতি, অর্থনীতি আর সংস্কৃতি। অনাবিল স্বপ্ন আর করোনামুক্ত পূর্বের মতো
সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন আর অফুরন্ত প্রাণোন্মাদনা নিয়ে নতুন সূর্যের আলোয়
অগ্রসর হবে মানুষ। বিগত সময়ের সব ভুল শুধরে নেয়ার সময় এসেছে আজ।
জাতির
অনেক আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ হওয়ার বছর এটি। শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো পৃথিবী
করোনামুক্ত হবে। বাংলাদেশের মানুষও সেই প্রত্যাশায় বুক বেঁধে নতুন বছরটি
শুরু করেছে। তাই নতুন বছরকে স্বাগতম ভয়াল মহামারী করোনামুক্ত সুখ-সমৃদ্ধি,
উন্নয়ন-অগ্রগতি আর জঙ্গী-সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতামুক্ত মুক্তিযুদ্ধের
চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশায়। খ্রিস্টীয় নববর্ষের প্রথম
দিন আজ। প্রাচীন সূর্য শুক্রবার যে দিবসকে কালস্রোতে বিলীন করে পশ্চিমে
অস্ত গেল, তা আজ ফেলে আসা দিন। প্রতিবছর থার্টি ফার্স্টে বিশ্বের কোটি কোটি
মানুষ পরমানন্দে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়। করোনার কারণে অনেক দেশেই সেটি
এবার হচ্ছে না। কারণ করোনার নতুন রূপ ওমিক্রনের ঢাকা পড়েছে গোটা বিশ্বে।
তবুও বিশ্বের মানুষ নানা আয়োজনে নতুন বছর ২০২২- কে বরণ করেছে নতুন নতুন
স্বপ্ন নিয়ে।
যারা মহামারীর এই সময়ে ২০২১ সালটা পার করেছেন, তারা হয়ত
নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন। তবে মুছে যাবে গ্লানি, ঘুচে যাবে সব জরা- এমনটা
আশা করা হয়ত একটু বেশি হয়ে যাবে। শুধু আমাদের দেশেরই নয়, গোটা বিশ্বের
মানুষ দৃঢ় আশাবাদী যে, করোনা মহামারী থেকে সবাই উত্তরণ পাবেন। করোনা
ভ্যাকসিন নিয়ে পুরো বিশ্ব থেকে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস বিদায় নেবে।
নানা
ধরনের দুর্যোগ-দুর্বিপাক, মড়ক-মহামারীর অভিজ্ঞতা বিশ্ববাসীর আছে।
প্রাণঘাতী অসুখও আগে একাধিকার হয়েছে। মহামারীতে মৃত্যুর ঘটনাও নতুন নয়।
কিন্তু অদৃশ্য প্রাণঘাতী করোনা নামক ভাইরাসটি পৃথিবীজুড়ে মানুষের মধ্যে যে
ভয় ও অসহায় অবস্থার তৈরি হয়েছে তা তুলনাহীন। তাই ২০২১-কেও বিদায় জানাতে
এবার মানুষের মন ভারাক্রান্ত হয়নি। তাই নতুন বছর ২০২২-কে মানুষ স্বাগত
জানাচ্ছে নতুন আশায় বুক বেঁধে। ২০২২ হোক করোনা মহামারীমুক্ত আশা ও প্রেরণার
বছর।
করোনার কারণে এবার উন্নত বিশ্বেও বর্ষবরণের কোন ব্যাপকতা ছিল না।
তবুও শুক্রবার রাত ১২টার পরই সারাবিশ্বে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই নতুন বছরকে
স্বাগত জানানো হয়েছে নানা আনুষ্ঠানিকতায়। হিসাবের খাতায় ব্যর্থতার গ্লানি
মুছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে নতুন বছরে শান্তিকামী মানুষের
প্রার্থনা ছিল- করোনামুক্ত সুন্দর পৃথিবীর। আর কোন সহিংসতা নয়, কোন
হত্যা-খুন কিংবা হানাহানির রাজনীতি নয়, ২০২২ হবে শান্তির বীজ বপনের সাল।
অস্ত্র বা হানাহানির মহড়া হবে না, থেমে যাবে সব যুদ্ধ-সন্ত্রাস। সবার
প্রত্যাশা অনুযায়ী টানা হ্যাটট্রিকবার ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সরকার নতুন বছরেও উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারা
অব্যাহত রেখে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত একটি সুখী ও সমৃদ্ধ উন্নত বঙ্গবন্ধুর
স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ উপহার দেবে জাতিকে।
একযুগ ধরেই চালকের আসনে শেখ
হাসিনা ॥ বিদায়ী বছরেও রাজনীতিতে চালকের আসনে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা। শুধু বিদায়ী বছর ২০২১ নয়, ক্ষমতার গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে দেশের
মানুষসহ গোটা বিশ্ব দেখছে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সফলতার ক্ষেত্রে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ম্যাজিক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় ও
সাহসী নেতৃত্ব, মানবিক গুণাবলী আর কৌশলী অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশ আজ
নব-পরিচয়ে পরিচিতি পাচ্ছে গোটা পৃথিবীতে। বিদায়ী বছরে প্রাণঘাতী করোনা
মহামারীসহ শত প্রতিকূলতার মধ্যেও এগিয়ে যাওয়ার রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। আর
এই এগিয়ে যাওয়ার গল্পের প্রধান কারিগরই হচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা ও রেকর্ড
সংখ্যক চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা।
নতুন
বছরেই খুলে যাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় ও সাহসী প্রত্যয়ে নিজস্ব
অর্থায়নে নির্মিত সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতু। বিশ্বব্যাংকের
দুর্নীতির অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মিত করে
গোটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর
দাঁড়িয়ে থাকার সামর্থ্যরে কথা। আবার সরকারের আরেকটি বড় মেগা প্রকল্প
রাজধানীর বুক চিড়ে নির্মিত মেট্টোরেল আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হবে। কর্ণফুলী
বঙ্গবন্ধু টানেলও খুলে দেয়া হবে নতুন এ বছরেই।
করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতির
মধ্যেও বিশ্বকে তাক লাগিয়ে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে বিদায়ী বছরে ভয়াল করোনা
সফলভাবে মোকাবেলা, স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতির চাকাকে সচল করে রাখা, স্বপ্নের
পদ্মা সেতুর অবকাঠামো নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা, মেট্টোরেলের কাজ দ্রুত
এগিয়ে নেয়া, করোনায় একটি মানুষকে বুভুক্ষ যেন না থাকে সেজন্য সবার ঘরে ঘরে
খাদ্য-নগদ অর্থ পৌঁছে দেয়ার বিশাল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার পাশাপাশি পুরো বছর
ধরে রাজনীতির মাঠ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে সর্বত্র উন্নয়ন-অগ্রগতির চাকা
অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
দুর্নীতি-সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের
দেশের কালো তকমা মুছে ফেলে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতি-সন্ত্রাস ও জঙ্গীবিরোধী ‘জিরো
টলারেন্স’ নীতি শুধু দেশেই নয়, এখন সারাবিশ্বও প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বিশেষ করে
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান এবং নিজ ঘর থেকে শুদ্ধি অভিযানের সাহসী
পদক্ষেপ বঙ্গবন্ধুর কন্যার প্রতি দেশের মানুষের আস্থা-বিশ্বাসকে আরও
কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
তবে ভয়াল করোনার ভয়াল থাবা থেকে দেশের মানুষকে
রক্ষা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি সমূলে উৎপাটন, জঙ্গীবাদ দমন,
শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত, বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি, আইন-শৃঙ্খলা
পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, স্বাধীনতাবিরোধী অন্ধকারের শক্তির
বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিরোধ, অর্থনীতির আরও গতিসঞ্চার, সংসদকে কার্যকর করে
নতুন বছরে একটি শান্তিময় সমৃদ্ধশালী দেশ উপহার দিতে ২০২২ সাল সরকারের সামনে
অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়েই সামনে এসেছে। দলের মধ্যে সৃষ্ট অনৈক, বিভেদ ও
দ্বন্দ্ব দ্রুত মিটিয়ে দলের সকল সাংগঠনিক শক্তিকে ইস্পাতকঠিন ঐক্যের বাঁধনে
বাঁধাও নতুন বছরে বর্তমান সরকারের আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ।
উগ্র
ধর্মভিত্তিক-সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বিশেষ করে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি
নিষিদ্ধ করে প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আবারও বিশ্বের দরবারে
মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে কিনা, নতুন বছরে এ কঠিন সিদ্ধান্তটি নিষ্পত্তি করতে
হবে সরকারকে। হঠাৎ করে মাথা তুলে দাঁড়ানো জঙ্গীবাদী অপশক্তির শিকড় সমূলে
উৎপাটন ও এদের নেপথ্যের গডফাদারদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি দাঁড়
করানোর বিশাল চ্যালেঞ্জও রয়েছে সরকারের সামনে। তাই গত বছরের মতো নতুন বছরেও
জঙ্গীবাদী, স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের পালিত সন্ত্রাসী-জঙ্গীদের মাথা
তুলে দাঁড়াবার সম্ভাবনা কম।
সমাপ্ত বছরে রাজনীতির মাঠ ছিল বিগত
বছরগুলোর তুলনায় অনেকটাই শান্ত। ছিল না হরতাল কিংবা আগুনে পোড়া, বোমায়
বিধ্বস্ত কোন শোকাতুর পরিবেশ। দেশবিরোধী নানা ষড়যন্ত্র শক্ত হাতে মোকাবেলা
করে সৃষ্টির জাগরণে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে বর্তমান সরকার। সকল
ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বেড়াজাল ছিন্ন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের দক্ষ
রাষ্ট্র পরিচালনায় আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আর এখন
মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত সত্য ইতিহাস যাতে আগামী প্রজন্ম যুগ যুগ ধরে
লালন-পালন করতে পারে- নতুন বছরে সেই পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে।
তাই
বিপুল প্রত্যাশা ও চ্যালেঞ্জ নিয়েই আজ থেকে যাত্রা শুরু করল আরও একটি নতুন
বছর। নতুন খ্রিস্টাব্ধের সূচনামুহূর্ত নিয়ে উচ্ছ্বাস-উল্লাস বাঙালী
সংস্কৃতির নিজস্ব কোন অঙ্গ না হলেও পাশ্চাত্য প্রভাবে শহারাঞ্চলে এর
ব্যাপ্তি ঘটেই চলেছে। কালপক্রিমায় নববর্ষ আসে, নতুন আশায়, স্বপ্নে উদ্দীপিত
হয় মানুষ। নতুন বছরটিতে বিশ্ব করোনামুক্ত হবে, সাফল্যে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে,
মুছে যাবে ব্যর্থতার গ্লানি, এ রকম প্রত্যাশায় মানুষ উজ্জীবিত হয়। বৈশ্বিক
পটভূমিতে খ্রিস্টীয় নববর্ষের গুরুত্ব এবং তাৎপর্য উপেক্ষা করার মতো নয়
মোটেও। সবার প্রত্যাশা নতুন বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বিদায়ী
বছরের মতো করোনা মোকাবেলা করে একটি সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ উপহার দেবে
জাতিকে।
ক্ষমতার গত এক যুগে অনেক কিছু ঘটলেও দেশবাসীর সামনে আশার
উজ্জ্বল বাতিঘর হয়ে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দুর্যোগ-দুর্বিপাক-সঙ্কটে তাঁর উপস্থিতি মানুষকে আশ্বস্ত করেছে,
অনুপ্রাণিত করেছে। শেখ হাসিনা আছেন, কাজেই উপায় একটা হবেই- এই ভরসার
জায়গাটি অবিচল থাকায় আমাদের এগিয়ে চলা বন্ধ হয়নি।
ইংরেজী নববর্ষের
শুভলগ্নে দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি
মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গোধূলি বেলায় রক্তিম সূর্য
অস্ত যাওয়ার মধ্য দিয়ে হারিয়ে গেছে ঘটনাবহুল ২০২১ সালটি। উদিত হয়েছে নতুন
বছরের নতুন সূর্য। প্রত্যাশা কেবল মানুষের করোনামুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ,
শান্তি, স্বস্তি, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বিনির্মাণ, শক্ত হাতে
জঙ্গী-সন্ত্রাসী দমন এবং সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির দেশ গড়ার। চতুর্থবারের মতো
ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ
শক্তির সরকারের কাছে এ প্রত্যাশা রেখেই আজ শনিবার থেকে যাত্রা শুরু হলো
নতুন বছরের। স্বাগত ২০২২, বিদায় ২০২১।