নিষ্পত্তি করা দরখাস্ত পুনর্বিবেচনার সুযোগ আইনে নেই: আইনমন্ত্রী
Published : Thursday, 30 December, 2021 at 12:00 AM
একবার নিষ্পত্তি করা দরখাস্ত আবার বিবেচনার কোনও সুযোগ দণ্ডবিধির ৪০১ ধারায় নেই উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, অনেকে বলছেন ৪০১ ধারা কারও বিদেশ যাওয়া বন্ধ করে না। আমি কখনও বলি নাই—দণ্ডবিধির ৪০১ ধারায় কাউকে বিদেশ যেতে দেওয়া হবে না। আমি বলেছি—একবার নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত আবার বিবেচনার কোনও সুযোগ ৪০১ ধারায় নেই।
বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি চত্ত্বরে আয়োজিত ক্র্যাবের বার্ষিক সাধারণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া বিদেশে যেতে না পারার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, তারা ১০ বারের বেশি হাইকোর্ট এবং আপিল বিভাগে গেছেন। মামলার প্রত্যেকটা বিষয়বস্তু নিয়ে হাইকোর্ট এবং আপিল বিভাগে তাদের বিরুদ্ধে রায় আছে।
তিনি বলেন, যেই মামলায় তিনি (খালেদা জিয়া) অভিযুক্ত হয়েছিলেন পরে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন সেই মামলাটা কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার করে নাই। এই মামলাটা করা হয়েছিলো ২০০৭ সালে কেয়ারটেকার সরকার থাকাকালে। পরে দুর্নীতি দমন কমিশন ২০১২ সালে অভিযোগপত্র দেয়। মামলা করার পর থেকে বিচারিক কাজ চলার শেষ পর্যন্ত তারা ১০ বারের বেশি হাইকোর্ট এবং আপিল বিভাগে গেছেন।
তিনি বলেন, মামলার প্রত্যেকটা বিষয়বস্তু নিয়ে হাইকোর্ট এবং আপিল বিভাগে তাদের বিরুদ্ধে রায় আছে। তারা অনেক বিচারকের প্রতি অনাস্থা দিয়েছেন, সেটাও হাইকোর্টে গিয়েছে, সেখানেও বিচারক পরিবর্তন হয়েছে। সব কিছু হওয়ার পর রায় দেওয়া হয়েছে। মামলায় প্রথমে বিচারিক আদালতে ৫ বছর সাজা দেওয়া হয়, তারপর হাইকোর্টে আপিলে সেটাকে ১০ বছর করা হয়েছে। এবং পরে আরেকটা মামলায় ৭ বছর দণ্ড দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক দৃষ্টান্তের কারণে খালেদা জিয়া জেলের বাইরে আছেন জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, এই মামলার সাজা যখন তিনি (খালেদা জিয়া) ভোগ করছিলেন, তখন একটা দরখাস্ত আমাদের কাছে আসে, সেই দরখাস্তের ওপর কোন ধারা ছিল না। কিন্তু সরকার যখন কোনও কাজ করে তা আইনের মাধ্যমে করতে হয়। যেহেতু ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী সরকার এই কাজটা করতে পারে তাই তার সাজা স্থগিত হয়। এখানে আইনের মধ্যে আছে শর্তযুক্ত অথবা শর্তমুক্ত। শর্তযুক্ত বিধানের সাপেক্ষে দুই শর্তে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এই যে তার দরখাস্ত, এই দরখাস্ত নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। আমার কথা হচ্ছে, আমি যেটা বারবার বলে আসছি—একটা নিষ্পত্তি করা দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার সুযোগ আইনে নেই।
বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া পুনরায় জেলে গিয়ে দরখাস্ত করতে পারেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, "এখন উনি যদি বলেন—আমি এই শর্তযুক্ত মুক্তি মানি না, আমাকে জেলে নেন, আমি আবার দরখাস্ত করবো, তখন উনি দরখাস্ত করতে পারেন। কিন্তু এই অবস্থায় ফৌজদারি কার্যবিধিতে কোথাও নাই যে—সেই দরখাস্ত বিবেচনা করে তাকে আমরা বিদেশ নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে পারি।"
আইনমন্ত্রী বলেন, অনেকে বলেছেন—দণ্ডবিধির ৪০১ ধারা কারও বিদেশ যাওয়া বন্ধ করে না। আমি কখনও বলি নাই—ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪০১ ধারায় কাউকে বিদেশ যেতে দেওয়া হবে না। আমি যেটা বলেছি—একবার নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত আবার বিবেচনার কোনও সুযোগ ৪০১ ধারায় নেই।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি ঘটেছে জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, আমি যতটুকু খবর পেয়েছি—তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এখানে তিনি যতটুকু সম্ভব সুচিকিৎসা পাচ্ছেন। এবং সেখানে সরকারের কোনও হাত নেই। তাদের ইচ্ছে মতো তারা চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং পাচ্ছেন।
ক্র্যাব বার্ষিক সাধারণ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন র?্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম, র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।