ভারী বর্ষণে কুমিল্লার আলু চাষীদের সর্বনাশ
Published : Tuesday, 7 December, 2021 at 12:00 AM
শুরুতেই ক্ষতি ৪০ কোটি টাকা---
রণবীর ঘোষ কিংকর।
ঘুর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ এর প্রভাবে হেমন্তের শেষ দিকে হঠাৎ ভারী বর্ষণে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষক। টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে ফসলী মাঠ। সদ্য রোপন করা আলু ক্ষেতে পানি জমে ডুবে গেছে কুমিল্লার আলু চাষীদের স্বপ্ন। মৌসুমের শুরুতেই শুধুমাত্র আলু চাষে প্রায় ৪০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছে এ জেলার আলু চাষীরা। এমন পরিস্থিতিতে দিশেহারা প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি কৃষক।
আলু রোপনের মৌসুম আসলেই আলু রোপনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে কুমিল্লার কৃষকরা। কেউবা নিজের জমিতে আবার কেউবা অন্যের জমি বর্গা চাষ নিয়ে শুরু করে আলু চাষ। এ জেলায় প্রায় ১৩-১৪ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ করে কৃষক। বছর জুড়ে সবজি চাষাবাদের কারণে এবং এ অঞ্চলে অগ্রাহয়ের মাঝামাঝিতে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় হেমন্তের শেষ দিকেই আলু রোপন শুরু করে কৃষক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর কুমিল্লার ১৭টি উপজেলায় ১৩ হাজার ৪শ হেক্টর আলু চাষের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৬২৬ হেক্টর জমিতে রোপন করা হয়েছে। যার অধিকাংশই চারা গজায়নি। হেমন্তের শেষের ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভারী বর্ষণে কৃষকদের সৃজিত ওইসব আলু ক্ষেত নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি দেখা দিয়েছে।
চান্দিনা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর জানায়, কৃষক মাত্র আলু রোপন মাত্র শুরু করেছিল। যেসব জমিতে আলু রোপন করা হয়েছে সেসব জমিতে এখন পর্যন্ত প্রতি শতাংশে সাড়ে ৩শ টাকা খরচ হয়েছে। সেই হিসাব মতে হেক্টর প্রতি প্রায় ৮৬-৮৭ হাজার টাকা খরচ। ভারী বর্ষণে ওইসব আলু ক্ষেতে পানি জমে যাওয়ায় রোপনকৃত জমিগুলো মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে। কৃষি অফিসের ওই খরচের তালিকায় শুধুমাত্র বীজ ও সারের দাম নির্ধারণ করা হয়।
অপরদিকে, কৃষকদের দেওয়া তথ্যমতে বীজ, সার, শ্রমিক ও জমির খাজনা সহ প্রতি শতাংশ জমিতে প্রায় ৪৮০ টাকা খরচ হয়। সেই হিসাব মতে কুমিল্লায় ৩ হাজার ৬শ হেক্টর জমিতে প্রায় ৪০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষক।
উপজেলার তুলাতলী গ্রামের কৃষক রুহুল আমিন জানান, আমার নিজের জমিতে আলু চাষ করেছি। প্রতি শতাংশ প্রায় ৫শ টাকারও বেশি খরচ হয়েছে। যাদের নিজের জমি আছে এবং শ্রমিক না নিয়ে নিজেই চাষাবাদ করে কেবলমাত্র তাদের ৩৫০ টাকা খরচ পড়বে।
বড় গোবিন্দপুর গ্রামের আবুল হাসেম জানান, আমি এ পর্যন্ত এক একর ৪৪ শতাংশ আলু চাষ করেছি। জমি চাষ, জমির খাজনা, বীজ, সার, শ্রমিক খরচসহ প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। হঠাৎ বৃষ্টিতে আমার সব জমি তলিয়ে গেছে। এখন বৃষ্টি কমে গেলেও এক শতাংশ জমির আলু টিকবে না। সব আলুর বীজ মাটির নিচে পঁচে যাবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, মৌসুমের শুরুতে মারাত্মক ভাবে হোচট খেয়েছে আলু চাষীরা। জেলায় এ পর্যন্ত সাড়ে ৩হাজার হেক্টর জমিতে আলু রোপন করা হয়েছে। বৃষ্টিতে প্রায় সবগুলোই আক্রান্ত। তবে এখনও আমরা ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান নির্ধারণ করিনি।