নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছেই
Published : Saturday, 9 October, 2021 at 12:00 AM
বাজারে নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে পেঁয়াজ ও মুরগির দাম। হঠাৎ করেই ৪০ টাকা কেজি পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা দরে। একইভাবে ১১০ টাকা কেজি দরের ব্রয়লার মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম এখনও ২০০ থেকে ২২০ টাকার বেশি। মোটা চালের দাম এখনও ৫০ টাকা কেজি। আর চিকন চালের দাম ৭০ টাকা কেজি।
এদিকে, শীত শুরুর আগেই বাজারে এসেছে শীতকালীন সবজি। তবে অধিকাংশ সবজির দামই বেড়ে গেছে। দাম বেশি হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী সবজিও কিনতে পারছে না সীমিত আয়ের মানুষেরা। শুধু তাই নয়, অধিকাংশ পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের মধ্যে অস্বস্তি দেখা গেছে।
এ প্রসঙ্গে রাজধানীর কাওরান বাজার এলাকায় বাজার করতে আসা বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ বলেন, এখনই বাজার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। কারণ, অধিকাংশ পণ্যের দাম এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
রাজধানীর গোপীবাগ রেলগেট সংলগ্ন বাজারে কথা হয় আজিজুল ইসলাম নামের এক সরকারি কর্মকর্তার। তিনি বলেন, যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, তাতে সরকারি কর্মকর্তাদের পক্ষেও সার্ভাইভ করা সম্ভব না। অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে বাজার নিয়ন্ত্রণ হওয়া জরুরি।
বাজারের চিত্র বলছে, টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে বাড়তে থাকা ব্রয়লার ও পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির দাম নতুন করে আরও বেড়েছে। গত সপ্তাহের তুলনায় রাজধানীর বাজারগুলোতে কেজিতে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। আর সোনালি মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা।
শুক্রবার (৮ অক্টোবর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা। আর সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে ছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে। এ হিসাবে মাসের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৬০ টাকা বেড়েছে। আর আগস্টের শুরুতে বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা কেজি দরে।
মুরগি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্রয়লার মুরগির মতো পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির দামও দফায় দফায় বেড়েছে। সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে ২১০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া সোনালি মুরগির দাম কয়েক দফা বেড়ে এখন ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে এই মুরগির কেজি বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা।
রাজধানীর গোপীবাগ বাজারের আকসেদ আলী বলেন, একদিকে বাজারে মুরগি সরবরাহ কম। অন্যদিকে হোটেল-রেস্টুরেন্টসহ সবকিছু খুলে দেওয়া হয়েছে। এখন বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান হচ্ছে। ফলে মুরগির চাহিদা বেড়েছে। সবমিলিয়ে মুরগির দাম বেড়ে গেছে।
দুই সপ্তাহ আগে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পেঁয়াজের দাম বেড়ে এখন ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। এছাড়া বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহও কিছুটা কমেছে। সবমিলে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়েও ঢাকার বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের খুচরা মূল্য ছিল সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি)বৃহস্পতিবারের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক মাসের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম (খুচরা মূল্য) প্রায় ৫৮ শতাংশ বেড়েছে।
বাজারের তথ্য বলছে, দেশি পেঁয়াজের পাশাপাশি আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের দরও বেড়েছে। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগে ভারতীয় পেঁয়াজের সর্বোচ্চ দাম ছিল ৩৫ টাকা।
রাজধানীতে মসলাজাতীয় পণ্যের পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৬৪ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর কারওয়ান বাজারের আড়তে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৭০ টাকায়। তবে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা দরে।
শীত শুরুর আগেই বাজারে এসে গেছে শীতকালীন সবজি। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বস্তি মিলছে না দামে। বাজারে এখন বেশিরভাগ সবজির কেজি ৫০ টাকার ওপরে। শুধু আলু, কচুরমুখী ও পেঁপের কেজি ৫০ টাকার নিচে। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে আগাম শীতকালীন সবজি উঠছে। তাই দামও একটু বেশি। সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে গাজর। মানভেদে এক কেজি গাজর ১০০ থেকে ১৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা।
তবে শীতের আগাম সবজি শিমের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে। এখন শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা। এর সঙ্গে কমেছে ঝিঙের দাম। এক সপ্তাহ আগে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ঝিঙের দাম কমে এখন ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
শীতের অন্য আগাম সবজির মধ্যে ছোট ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকায়। এছাড়া করলা বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পটল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়শ ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে, বরবটির কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। এছাড়া কাঁচকলার হালি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, লাল শাকের আঁটি ১০ থেকে ২০ টাকা, মুলা শাকের আঁটি ১৫ থেকে ২০ টাকা, কলমি শাকের আঁটি ৫ থেকে ১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
সাদা ও লাল আলুর কেজি ২৫ টাকা। ভর্তার জন্য জনপ্রিয় জাম আলু ৪০ টাকা আর দেশি ছোট ঝুরি আলু ৩০ টাকা কেজি। লেবুর হালি ২০ টাকা, মাঝারি সাইজের লাউ ৩০ টাকা, জালি কুমড়া ২৫ টাকা পিস।
নদীর চিংড়ির কেজি ৭০০ টাকা। তবে বড় সাইজের চিংড়ির দাম আরও বেশি। প্রতি কেজি ৮০৯ টাকা। লাল চিংড়ি ৪৪০ টাকায় মিলছে।
চাষের ট্যাংরা মাছ ৪৫০ টাকা। এক থেকে দেড় কেজি ওজনের রুই ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আইর মাছ ৬০০, বোয়াল ৪৫০, কাতল ৪০০ টাকা। তেলাপিয়া ১৪০ টাকা কেজি। নদীর সরপুঁটি ৪০০ টাকা, চাষের দেশি সরপুঁটি ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দেশি ছোট রসুনের কেজি ৬০ টাকা হলেও দেশি বড় রসুন ৮০ টাকা। ভারতীয় রসুনের দাম দেড়শ টাকা কেজি। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা ময়দার দাম বেড়েছে কেজিতে সাত টাকার বেশি। অর্থাৎ দুই সপ্তাহ আগে যে ময়দা ৩৫ টাকা কেজি পাওয়া যেত, এখন সেই ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকা কেজি দরে। দুই সপ্তাহ আগে যে চাল ৬৫ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে, এই সপ্তাহে সেই চাল বিক্রি হয়েছে ৬৬ টাকা কেজি দরে।
গরুর মাংস প্রতিকেজি ৫৬০ টাকা, খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। ডিমের দাম কমেছে। একই দোকানে ডিম (লেয়ার) প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়, যা খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। দেশি মুরগির ডিম ডজন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা এবং হাঁসের ডিম ১৬০ টাকা।