ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
৩২৬ থেকে ৩০২
Published : Friday, 8 October, 2021 at 12:00 AM, Update: 08.10.2021 1:01:24 AM
৩২৬ থেকে ৩০২রণবীর ঘোষ কিংকর।বর্তমানে সামাজিক অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় আইনের ধারা সম্পর্কেও বেশ তৎপর মানুষ। এক সময়ের গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ আইন সম্পর্কে অজ্ঞ থাকলেও বর্তমানে সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধি পাওয়ায় থানা ও আদালতে বেড়েছে মামলার সংখ্যা। পক্ষের আইনজীবিদের কল্যাণে দিনে দিনে গ্রামাঞ্চলের মানুষগুলো আইনের ধারা সম্পর্কে পরিপক্ক হতে শুরু করে।
সামান্য ঝগড়া-বিবাদে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করে ছুটাছুটি শুরু হয় হাসপাতাল, আদালত ও আইনজীবিদের দ্বারে দ্বারে। হাসপাতালে চিকিৎসাপত্রে গ্রিভিয়াস লিপিবদ্ধ করা এবং মামলার অভিযোগ পত্রে হত্যা চেষ্টা মামলার ধারা ৩২৬ নিশ্চিত করাই হয় প্রধান লক্ষ্য।
এমনই আইনের ধারায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে কুমিল্লার চান্দিনায় পিতার হাতে নৃশংস ভাবে খুন হয় মাদ্রাসা পড়ুয়া কিশোরী সালমা আক্তার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জমি সংক্রান্তের বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের সাথে তুচ্ছ মারামারিতে আহত হয় সালমা আক্তারের মাতা। ওই ঘটনায় থানায় মামলা করেন সালমা আক্তারের পিতা সোলেমান ব্যাপারী। থানা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে বহু চেষ্টা করেছিলেন ৩২৬ ধারা যুক্ত করে মামলা লিপিবদ্ধ করতে। পুলিশের সন্মতি না পেয়ে অবশেষে ৩২৩ ধারায় মামলা করেন সোলমান ব্যাপারী। কিন্তু বাদীর মাথা থেকে কিছুতেই নামছে না ৩২৬ ধারা। পরদিন তিনি কুমিল্লার এক আইনজীবির কাছে পরামর্শ নেয়। আইনজীবিও তাদেরকে জানিয়েছিলেন, ‘বড় ধরণের কাটাছেড়া না হলে পুলিশ ৩২৬ ধারায় মামলা নেয় না’।
চান্দিনা থানা পুলিশ জানান, আইনজীবির সাথে পরামর্শের পর থেকে সোলেমান ব্যাপারী ও তার সহযোগিরা পরিকল্পনা করতে শুরু করেন কিভাবে নিজেদের শরীর নিজেরা কেটে প্রতিপক্ষকে ৩২৬ ধারায় মামলায় ফাঁসানো যায়। সোলেমান এর বন্ধু খলিল মিয়া পেশায় পরোটা তৈরির কাজ করলেও থানায় যাতায়াত করে মানুষের কাছে নিজেকে একজন বিশেষ ব্যক্তির পরিচয় দিতে শুরু করেন। ওই খলিল মিয়া ধারণা দেন কিভাবে কাটাছেড়া করতে হবে।  সোলেমান এর উকিল শ্বশুর আব্দুর রহমান এর ঘরে বসেই প্রথমে পরিকল্পনা করেন মেয়েকে কুপিয়ে রক্তাক্ত যখম করা। পরবর্তী তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, মেয়ে যদি প্রকাশ করে দেয় তাহলে নিজেরাই ফেঁসে যাবে। মেয়েকে খুন করে হত্যা মামলা করাই হবে নিরাপদ। ১ অক্টোবর রাতে পরিকল্পনা মোতাবেক মেয়েকে খুনের পরদিন ২ অক্টোবর প্রতিপক্ষ ভাতিজাদের বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় হত্যা মামলা করলে সোলেমান। বিধিবাম! তাতে নিজেই ফেঁসে গেলেন জঘন্য পিতা সোলেমান ব্যাপারী।
চান্দিনা থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আরিফুর রহমান জানান, ৩২৬ ধারাই কাল হলো নিষ্পাপ সালমা আক্তারের। জঘন্য পিতার হাতে নির্মম ভাবে খুন হয় কিশোরী সালমা। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে আরও একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হবে।