
দেশব্যাপী
প্লাস্টিক বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশগত দূষণ সম্পর্কে ৬০টি
পরিছন্নতা অভিযান এবং গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১০ ডিসেম্বর চলমান
পরিছন্নতা অভিযানের দ্বিতীয় উদ্যোগ অনুষ্ঠিত হলো কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম
উপজেলায়। উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠান বাস্তবায়িত হয়
টঘওউঙ-এর টেকসই প্লাস্টিক দ্রব্য ব্যবস্থাপনা এবং বাংলাদেশে নৌ-বর্জ্য
প্রতিরোধক কর্মসূচীর আওতায়। এই চলমান কর্মসূচী যৌথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে
সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তর এবং টঘওউঙ-এর যৌথ উদ্যোগে যা বাস্তবায়নে আর্থিক
সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশস্ত রয়াল নরওয়ে দূতাবাস ।
এই কর্মসূচীর প্রধান
লক্ষ্য হলো একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার সংকোচন এবং তার
পরিবর্তে পুনঃর্ব্যবহারযোগ্য এবং পুনঃপ্রক্রিয়াযোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রী
ব্যবহারের ব্যাপারে গণ-সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এই কর্ম উদ্যোগ পরিচালিত হচ্ছে
গণস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরূপ প্লাস্টিক বর্জ্য দ্বারা পরিবেশ
দূষণের বিরুদ্ধে এবং প্লাস্টিকের টেকসই বিকল্প ব্যবহারে জনগনকে উদ্বুদ্ধ
করা।
এই অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানের
প্রধান অতিথি চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোঃ রহমত উল্লাহ্,
ইউনিডো'র ন্যাশনাল প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর জনাব সত্য রঞ্জন ভট্টাচার্য,
ইউনিডোর ন্যাশনাল এক্সপার্ট জনাব এম. এম. আরাফাত ও অন্যান্য আমন্ত্রিত
বিশেষ অতিথিবৃন্দ। অনুষ্ঠানে স্বাগতঃ ভাষণে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী
পরিচালক, কুমিল্লা, অতিথি বৃন্দ এবং ২০ টি পরিবেশ ও গণস্বাস্থ্য বিষয়ক
বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান জনাব
খন্দকার মাহমুদ পাশা। তিনি প্লাস্টিক দূষণ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় ইতিমধ্যে
২০টি মামলা করা হয়েছে এবং এক লাখ টাকা অর্থদন্ড দেওয়া হয়েছে। তবে পরিবেশগত
পরিছন্নতার ব্যাপারে মানুষ ক্রমেই সচেতন হয়ে উঠছেন।
চৌদ্দগ্রামের
নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে সবার সম্মিলিত উগ্যোগে
প্রয়োজন। পলিথিন ও প্লাস্টিক দ্রব্যাদির ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
পাশাপাশি সমাজে দূষণের বিরুদ্ধে সচেতনতাও বেড়েছে। এই অপচনশীল বর্জ্যের
কারণে আমাদের ড্রেইনগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে, যার কারণে বিভিন্ন এলাকায়
জলবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।
ইউনিডো'র ন্যাশনাল প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর সত্য
রঞ্জন ভট্টাচার্য বর্জ্য স্তুপের ভয়াবহতা প্রসঙ্গে বলেন প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ
৬০ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে গিয়ে পড়েছে, এ থেকে সৃষ্টি হচ্ছে
মাইক্রোপ্লাস্টিকস, যা নৌ জীবনচক্রে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে। ইউনিডো'র
তিনটি মৌলিক অঙ্গীকার তুলে ধরে তিনি বলেন তিনটি 'আর' (অর্থাৎ রিডিউজ, রিইউজ
এবং রিসাইকেল) নিয়ে আমরা কাজটি করছি এবং পরবর্তী উদ্যোগে আমরা এই লক্ষ্যে
প্লাস্টিক সামগ্রীর উৎপাদনকারীদেরকেও এই ধরণের কর্মসূচিতে সংশ্লিষ্ট করবো।
ইউনিডো'র
ন্যাশনাল এক্সপার্ট এস.এম. আরাফাত তার ভাষণে প্লাস্টিক বর্জ্য
পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ বা রিসাইক্লিং এর উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। কুমিল্লার
পরিবেশ পরিদর্শক জোবায়ের হোসেন বলেন বাংলাদেশের নদী নালা খাল ও জলাধারে
দৈনিক ৮ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য নিক্ষিপ্ত হয়, যা অত্যন্ত ভয়াবহ পরিবেশ
বিপর্যয়ের কারণ। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ.
কে. মীর হোসেন, চৌদ্দগ্রামের সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাকিয়া সরওয়ার লিমা এবং
বাংলাদেশ ইয়ুথ ক্যাডেট ফোরামের চেয়ারম্যান শাহ মুজিবুল হক প্রমূখ। তারা
পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে গণসচেতনতা বৃদ্ধি, বিশেষ করে, দেশের তরুণ সমাজকে
এগিয়ে আসার আহবান জানান ।
২০টি পরিবেশ সংগঠনের প্রায় ২৫০ জন
স্বেচ্ছাসেবী এই পরিছন্নতা কর্মসূচী ও আলোচনাসভায় অংশ নেন। যাদের মধ্যে ছিল
রেড ক্রিসেন্ট, সিভিল ডিফেন্স এন্ড ফায়ার সার্ভিস, বিএনসিসি, রোড সেফটি
মুভমেন্ট, চৌদ্দগ্রাম হেলপ্প্লাইন-সহ বেশকিছু স্থানীয় এনজিও এবং শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান। সম্মানিত অতিথিবৃন্দ এবং এই পরিবেশ কর্মীরা নিজ হাতে অর্ধ
দিবসব্যাপী এই অভিযানে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে ৩৫০ কেজি বর্জ্য অপসারণ
করেন। উপজেলা পরিষদ এলাকায় বিভিন্ন জাগরণী বাণী সমৃদ্ধ ফেস্টুন, ব্যানার
প্রভৃতি প্রতিস্থাপিত হয় ।
চৌদ্দগ্রামের এই অনুষ্ঠানটি ছিল পরিবেশ
অধিদপ্তর ও ইউনিডো'র যৌথ উদ্যোগে চলমান ৬০টি অনুরূপ ক্লিন-আপ কর্মসূচী ও
সচেতনতা আলোচনাসভার দ্বিতীয় উদ্যোগ। এই কর্মসূচীর প্রধান অভীষ্ট লক্ষ্য হলো
একটি টেকসই, প্লাস্টিকমুক্ত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার লক্ষ্যে স্থানীয় কমিউনিটির
সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
