কুমিল্লার
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সিদলাই ইউনিয়নের দত্ত পরিবারের দ্বারা নির্মিত
অপূর্ব কারুকার্যখচিত ঐতিহাসিক প্রত্নত্তাত্বিক নির্দশনগুলোর অন্যতম
শ্মশানবাড়িটি। অযত্ন-অবহেলায় বর্তমানে একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনিত
হয়েছে। দীর্ঘ দিনেও প্রয়োজনীয় সংস্কার ও রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে এ ঐতিহাসিক
নিদর্শনটি যে কোন সময় ধসে পড়ার আশংকা করা হচ্ছে।
ইতিহাস প্রসিদ্ধ বৃটিশ
আমলে নির্মিত উল্লেখযোগ্য নিদির্শনগুলো প্রায় একশত পঞ্চাশ বছর পূর্বে
নির্মাণ করা হয় বলে জানা গেছে। এ সব প্রাচীন নিদর্শন গুলোর অন্যতম হচ্ছে
দত্ত পরিবারের শ্মশানবাড়ি। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা থেকে সিদলাই ইউনিয়নের প্রায়
৩ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমকোনে লাড়ুচৌ গ্রামের খানিকটা নির্জন এলাকায়
মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতি পরিবেশে শ্মশানবাড়ীটি অবস্থিত। তৎকালীন বৃটিশ আমলে
দত্ত পরিবারের সদস্যদের শবদেহ দাহ করার জন্য এটি নির্মাণ করা হলেও এতে
রয়েছে অত্যন্ত কারুকার্যখচিত সুদৃশ্য কয়েকটি মিনার। এর মধ্যে প্রধান
মিনারটির উচ্চতা প্রায় ১শত ফুট। এছাড় একটি স্মৃতি সৌধসহ শ্মশানের
পুরোহিতদের বাসস্থান রয়েছে। প্রায় ৮ শতাংশ জায়গা জুড়ে নির্মিত শ্মশানবাড়ীতে
দৃশ্যমান ৯টি স্মৃতিস্তম্ভ বা মিনার রয়েছে যা দত্ত পরিবারে ৯ পুরুষের
মহিলার স্মৃতি ধারণ করে বলে জনশ্রুতি রয়েছে।বৃটিশ বিখ্যাত স্বর্গীয়
পিত্বৃদেব বসন্ত কুমার দত্ত স্মৃতি রক্ষার্থে ১৩৩৫ বাংলায় নির্মিত দত্ত
পরিবার তত্ত্বাবধানে এই স্মৃতিস্তম্ভ গুলো নির্মান করা হয় বলে জানা গেছে।
সুদৃশ্য এই শ্মশানবাড়ীটি দেখার জন্য প্রতিদিন প্রচুর দর্শনাথী এখান আগম
ঘটে। বর্তমানে এই শ্মশানের মিনারসহ স্তম্ভের ভিত্তি সংলগ্ন ঘরগুলোর রং উঠে
এগুলো প্রায় ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। শ্মশানবাড়ীর কারুকার্যময় সৌন্দর্য
হারিয়ে যাচ্ছে। শ্মশানের সুদৃশ্য মিনারগুলো আজও মানুষের মুগ্ধ দৃষ্টি কেড়ে
নেয়। ঐতিহাসিক এ নির্দশনটি রক্ষনাবেক্ষনের জন্য দীর্ঘদিনেও প্রয়োজনীয়
সংস্কার করা হয়নি।
এছাড়া শ্মশানবাড়ীতে রক্ষিত বহু দামী জিনিস পত্র চুরি
হয়ে গেছে। এমনকি শ্মশান সংলগ্ন বহুযায়গা বিক্রি হয়ে যায়। শুধু শ্মশানের
স্মৃতিস্তম্ভের জায়গাটুকু অবশিষ্ট আছে। অবিলম্বে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে হাতে
ন্যাস্ত করে শ্মশানবাড়ীটির প্রয়োজীয় সংস্কার ও রক্ষনাবেক্ষন করার দাবি
জানিয়েছে এলাকার সচেতন মহল। এই দত্ত বাড়ির মহাশ্মশানে যারা শায়িত আছেন
স্বর্গীয় বসন্ত কুমার দত্ত মৃত্যু ১৮৯৬ ইং,স্বর্গীয় বজ্রবাসী দত্ত,মৃত্যু
১৯৬৭ইং,স্বর্গীয় শিশ চন্দ্র দত্ত, মৃত্যু ১৯৬৬,স্বর্গীয় শ্রী বঙ্গময়ী দত্ত,
মৃত্যু ১৩৮৮ বাংলা, স্বর্গীয় জগদীশ দত্ত, স্বর্গীয় প্রতিভা রানি দত্ত,
স্বর্গীয় ধীরেন্দ্র চন্দ্র দত্ত, মৃত্যু ১৮৮৪ ইং,স্বর্গিয়া চিনু রানী দত্ত,
মৃত্যু ২০০৩ইং, স্বর্গীয় রেখা রানী দত্ত, মৃত্যু ২০১৭ ইং।
এ ব্যাপারে
লাড়োচৌ গ্রামের বিশিষ্ট সমাজ সেবক হাজী সহিদ মিয়া বলেন, দত্ত বাড়ির এই
মহাশ্মশানটি অনেক ঐতিহ্য লালন করেন, এক সময় তাদের প্রচুর জায়গা সম্পত্তি
ছিলেন তারা বর্তমানে এসব সম্পদ বিক্রি করে অনেকে ভারতে এবং অনেকেই
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে চলে যান। তারা মাঝেমধ্যে আসে আমি এই মহাশ্মশানটি
দেখাশোনা করে থাকি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিদলাই ইউনিয়ন পরিষদের
চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম আলাউল আকবর বলেন, আমি জানি আমার ইউনিয়নে একটি
মহাশ্মশান রয়েছে। এক সময় এ-ই এলাকাতে অনেক হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক ছিল।
বর্তমানে তারা ব্যবসার কাজে বিভিন্ন জায়গায় রয়েছেন। এটা রক্ষণাবেক্ষণের
জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স ম আজাহারুল ইসলাম সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান,
সম্প্রতি
বন্যার কারণে এর আরো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে রিপোর্ট পেয়েছি। এর বর্তমান
উপযোগিতা বিবেচনা করে এ অর্থ বছরে কিছু সংস্কার কাজ উপজেলা প্রশাসন হাতে
নিবে, এমন পরিকল্পনা রয়েছে।