রাজধানীর বাজারগুলোতে বেড়েছে সব ধরনের সবজির দাম। এর প্রভাব পড়েছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের ওপর। উচ্চ মূল্যস্ফীতি কারণে তারা জীবন চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। অন্যদিকে, বাড়তি দামের কারণে বিক্রি কমে গেছে বলে দাবি বিক্রেতাদের।
বাজারে ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। ছোট জালি কুমড়া কিংবা লাউও বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা। লাউ ও কচুশাকের আঁটি সর্বনিম্ন ৩০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
সবজির পাশাপাশি স্বস্তি নেই নিত্যপণ্যের বাজারেও। প্রতিদিনের দরকারি পণ্য পেঁয়াজের দাম বেড়ে ঠেকেছে ১২০ টাকায়। আলু প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা করে।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) নগরীর বিভিন্ন এলাকার কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, করলা, বেগুন, পটল, লাউ, কাঁচা পেঁপে, শসা, গাজর, ফুলকপি, বরবটি, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙা, কচুর লতি, ঢেঁড়স, লাউশাক, পালং শাক, লাল শাক, কলমি শাক, কচু শাকসহ সব ধরনের শাক-সবজি সরবরাহ রয়েছে। একইসঙ্গে শীতকালীন সবজি ফুলকপি, পাতা কপি, শিমও রয়েছে বাজারে। এসব সবজির অধিকাংশই বিক্রি হচ্ছে কেজি ৬০, ৭০ ও ৮০ টাকায়।
বাজারে সবজির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম হাঁকা হচ্ছে শিম, গাজর, বেগুনের। আকার ও মানভেদে প্রতি কেজির শিমের দাম ১০০-১৫০ টাকা পর্যন্ত হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা। আর ফুলকপি প্রতি পিস ৬০-৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে কেজি প্রতি ঢেঁড়স ৭৫-৮০ টাকা, করলা ৮০-৯০ টাকা, গোল বেগুন আকারভেদে ৮০-১০০ টাকা, মুলা ৭০-৮০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে কাঁচামরিচ কেজি ২৪০ টাকা, দেশি শসা ৮০-৯০ টাকা, হাইব্রিড শসা ৬০-৭০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, অতিরিক্ত বৃষ্টি এবং বন্যার প্রভাব পড়েছে বাজারে। বৃষ্টি হলে বাজারে সবজি আসে কম। যে কারণে দাম একটু বেশি। তাছাড়া শুক্রবার ছুটির দিন হিসেবে পাইকাররা বাড়তি দাম রাখেন।
বিক্রেতা রফিকুল বলেন, শীতের আগে বাজারে সবজির সরবরাহ বাড়ে। কিন্তু কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি হওয়ার কারণে এখন বাজারে সবজির সরবরাহ কম। তাই দাম একটু বেশি। সরবরাহ বাড়লে হয়তো দাম কমে আসবে।
নিত্যপণ্যের বাজারদর বিশ্লেষণে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, গত সপ্তাহ জুড়ে আটা (প্যাকেট), পাম অয়েল (লুজ), রাইস ব্রান তেল (১ লিটার বোতল), পাম অয়েল সুপার, ডাল (দেশি), ডাল (নেপালী), মুগ ডাল (মান ভেদে), ছোলা (মান ভেদে), পেঁয়াজ (দেশি), রসুন (দেশি), শুকনা মরিচ (আমদানি), হলুদ (আমদানি), আদা (আমদানি), দারুচিনি, এলাচ, ধনে, তেজপাতা, ডানো, চিনি, আয়োডিনযুক্ত লবণের দাম বেড়েছে।
এর বিপরীতে খোলা ও প্যাকেট ময়দা, সয়াবিন তেল (লুজ), সয়াবিন তেল (বোতল), সয়াবিন তেল (বোতল), অ্যাংকর ডাল, পেঁয়াজ (আমদানি), শুকনা মরিচ (দেশি), হলুদ (দেশি), জিরা, ডিপ্লোমা (নিউজিল্যান্ড), ফ্রেশ, মার্কস গুঁড়া দুধের দাম কমেছে। এছাড়া অন্যান্য পণ্যের মূল্য অপরিবর্তিত রয়েছে বলেও দাবি করা হয় সংস্থারটির পক্ষ থেকে।
বাজারে কথা হয় নজরুল ইসলাম নামে এক চাকরিজীবীর সঙ্গে। তিনি বলেন, সারা বছর জিনিসপত্রের দাম বাড়তে থাকে নানা অজুহাতে। কখনও বৃষ্টি, কখনও হরতাল-অবরোধ, কখনও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাতে। এগুলো যে শুধু অজুহাত তা এখন সবাই বুঝে গেছে।
তিনি বলেন, আগে গরুর মাংস কিনতে চিন্তা করতে হতো। এখন ডিম কিংবা সবজি কিনতে চিন্তা করতে হচ্ছে। এটাই হচ্ছে গরিব ও মধ্যবিত্তের ভাগ্য। এসব নিয়ে কথা বলেও কোনো লাভ হয় না।