
বন্যায়
ঘরবাড়ি হারিয়ে দিশেহারা কুমিল্লার বানভাসী মানুষ। কারো বাড়িঘর বিলীন হয়ে
গেছে, কারো ঘর থাকলেও তাতে বসবাসের কোন পরিবেশ নেই। কারো কারো সব
আসবাবপত্র-তৈজসপত্র পানিতে ডুবে, পলি মাটির নিচে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।
বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষ মাথাগোঁজার ঠাঁই এবং আয় রোজগারের পথ হারিয়ে
নিঃস্ব দিশেহারা। নতুন করে ঘরবাড়ি বানানো কিংবা আসবাবপত্র কিনে বাড়িতে তোলা
অসম্ভব। কুমিল্লায় সাম্প্রতিক বন্যায় একেবারে বিধ্বস্ত হয়েছে ৮ হাজার ৬শ
৭৪টি ঘর। এসব ঘর মেরামত করেও থাকা যাবে না। নতুন করে ভিটা তৈরী করে ঘর
বানানো ছাড়া এসব বিধ্বস্ত ঘরের বাসিন্দা থাকার কোন উপায় নেই।
এছাড়া
আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭৪ হাজার ৮১টি ঘর। তবে এসব ক্ষতিগ্রস্থ ঘরের
বাসিন্দারাও নিম্ন আয়ের মানুষ। জেলা ত্রান ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা
কার্যালয়ের তথ্য মতে, জেলায় বন্যায় এক হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষয়ক্ষতি
হয়েছে মানুষের আবাসিক খাতে।
জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ঘর
বুড়িচং উপজেলায় সাড়ে ১৬ হাজার। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ৪ হাজার ১ শ
৪৩টি। মাটির এবং টিনের কাচা ঘরবাড়ি ভেঙ্গেছে সবচেয়ে বেশি। গোমতী নদীর বাঁধ
ভাঙ্গনে পানির স্রোত যে এলাকা দিয়ে গিয়েছে সে এলাকায় ঘরবাড়িসহ স্থাপনা
ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। স্রোতের ধাক্কায় ভেঙ্গে গেছে গ্রামীণ সংযোগ সড়ক, বিলীন
হয়েছে কৃষি জমি- হাস মুরগি, গবাদি পশুর খামার।
বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের
ইন্দ্রবতী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, অন্তত ১৫টি মাটির ঘর ধ্বসে গেছে বন্যার
পানিতে। কোন কোনটি মাটির সাথে মিশে গেছে। ঘরহারা হয়ে আত্মীয় স্বজনের বাড়ি ও
আশ্রয়কেন্দ্রে থাকছেন এসব পরিবারগুলো। ইন্দ্রবতী গ্রামের বাসিন্দা
ধীরেন্দ্র চন্দ্র দাসের ঘরটি মিশে গেছে মাটির সাথে। ছেলের বউ আর দুই নাতিন
নিয়ে তিনি এখন থাকেন আত্মীয়ের বাড়িতে। ধীরেন্দ্র চন্দ্র দাস জানান, আমার
ছেলে বিশ^জিত বিদেশে থাকে, কিন্তু সেখানে সে বেকার। চাইলেও এখন ঘর বানানোর
টাকা পাঠাতে পারবে না। কয় দিন আর মানুষের বাড়ি থাকা যায়।