বাঁধ মেরামত করে লোকালয়ে পানি প্রবেশ বন্ধের দাবি কুমিল্লার সাড়ে ১০ লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ কমছে না

কুমিল্লায়
গোমতী নদীর পানি কমলেও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি নেই। বাঁধের ভেঙ্গে যাওয়া
অংশ দিয়ে এখনো লোকালয়ে প্রবেশ করছে পানি। ফলে বন্যা কবলিত মানুষের দুর্ভোগ
কমছে না। এছাড়া বন্যা কবলিত প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে এখনো ত্রাণের জন্য
হাহাকার চলছে, তলিয়ে যাওয়া ঘরবাড়ি থেকে এখনো উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত
রেখেছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। সরকারি হিসেবে জেলার ১৪ উপজেলার ১০ লাখ ৬১ হাজার
মানুষ এখনো পানিবন্দী অবস্থায় জীবন যাপন করছেন।
জানা গেছে, কুমিল্লার ১৭
উপজেলার মধ্যে চান্দিনা, মেঘনা ও হোমনা উপজেলা ব্যতীত বাকি ১৪টি উপজেলা
বন্যা কবলিত হয়েছে। এর মধ্যে ভয়াবহ অবস্থা দেখা দিয়েছে অন্তত ৭টি উপজেলায়।
বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, বরুড়া
উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি একেবারে ভয়াবহ। এসব উপজেলার প্রত্যন্ত কিছু এলাকায়
ত্রাণসহায়তা একেবারে অপ্রতুল। অতি দুর্ভোগে দিন কাটছে তাদের।
লাকসাম
উপজেলার উত্তর দা ইউনিয়নের দিকধাইর গ্রামের বাসিন্দা নুরুন্নবী বলেন,
আমাদের এলাকাটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ায় এখানে ত্রাণ সামগ্রী তেমন আসছেই না।
বন্যায় বাড়িঘর প্লাবিত হওয়ার প্রথম এক সপ্তাহে এই এলাকায় কোনো ত্রাণ
আসেনি। পরে গত সোমবার নেত্রকোনা থেকে একটি স্বেচ্ছাসেবী দল প্রথমবারের মতো
আমাদের গ্রামে ত্রাণ নিয়ে আসে। একই চিত্র মনোহরগঞ্জ এবং নাঙ্গলকোট উপজেলার
প্রত্যন্ত এলাকাগুলোর। স্থানীয়রা বলছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় এবং
প্রত্যন্ত এলাকার তথ্য না থাকায় এসব অঞ্চলে ত্রাণ সামগ্রী তেমন আসছে না।
জেলা
ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবেদ আলী বলেন, কুমিল্লার ১৭টি উপজেলার মধ্যে
১৪ টি উপজেলায় বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এসব উপজেলার ১২৫টি ইউনিয়নের ১০ লাখ
৬১ হাজার মানুষ বন্যা কবলিত। পানিবন্দী মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য মোট
৭২৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
এদিকে গোমতী নদীর ভাঙ্গনের ফলে বন্যা
কবলিত বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায়ও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না।
গোমতী নদীর পানি বিপদসীমার নিচে প্রবাহিত হলেও বাঁধের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে এখনো
পানি ঢুকছে লোকালয়ে। এছাড়াও গোমতী নদী এবং ঘুংঘুর নদীর ভাঙ্গা বাঁধ দিয়েও
সদর উপজেলাসহ বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া প্লাবিত হচ্ছে। বন্যায় সদর উপজেলার ২
ইউনিয়ন, বুড়িচং উপজেলার ৫ ইউনিয়ন এবং ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ৮ ইউনিয়নের
মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স ম
আজহার ইসলাম বলেন, এখনো নতুন নতুন উপজেলা প্লাবিত হচ্ছে। আমরা বন্যার্তদের
মাঝে ত্রাণ ও খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রেখেছি। আটকে পড়া মানুষ জনকে উদ্ধার
করে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা এখন
কঠিন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার প্রধান প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে
গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে যাওয়ার পর বাঁধে ভাঙ্গা অংশ মেরামতের
দাবি উঠেছে। কারণ এই ভাঙ্গ অংশ হিসেবে এখনো হু হু করে পানি প্রবেশ করছে
লোকালয়ে। এরই মধ্যে বাঁধের ভাঙ্গা অংশের দৈর্ঘ ৫০০ ফিট ছাড়িয়েছে। বাঁধের
এতো বড় অংশ দিয়ে ভাঙ্গনের পানি প্রবেশের ফলে এই দুই উপজেলা বন্যা
দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ এই দুই উপজেলার চারপাশেই উঁচু
উঁচু সড়ক থাকায় এবং পাশর্^বর্তী সালদা ও ঘুংঘুর নদীর বাঁধ ভেঙ্গে এ অঞ্চলের
দিকেই প্রবেশ করায় পানি সরে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই দ্রুতার সঙ্গে
গোমতীর ভাঙ্গা বাঁধ দিয়ে প্রবেশ বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে।
ভাঙ্গন কবলিত
এলাকার বাসিন্দা রাকিব হোসেন বলেন, গোমতীর ভাঙ্গনের ফলে আমাদের এলাকায়
ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মানুষের ঘরবাড়ি সব তলিয়ে গেছে। বানের পানিতে ভেসে গেছে
মালামাল। এখন গোমতীর ভাঙ্গা বাধ দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। এই বাঁধ
মেরামত করে পানি প্রবেশ বন্ধ করতে হবে। না হয় মানুষের ক্ষতি আরো বাড়বে।
এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আমরা পানি বন্ধের বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য
জোড় দাবি জানাচ্ছি।
বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলমকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,
গোমতীর প্রতিরক্ষা বাঁধ মেরামতের বিষয়টি নিয়ে সেনাবাহিনীর সাথে আলোচনা করা
হবে।