দিন দিন হোয়াটসঅ্যাপ গুরুত্বপূর্ণ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে। এটি আমাদের অনেক কাজ খুব সহজ করে দিয়েছে, তবে ইন্টারনেট এবং স্মার্টফোনের দ্রুত ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে প্রতারণা এবং কেলেঙ্কারির ঘটনাও হুহু করে বাড়ছে।
অ্যাপটিতে এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন সুবিধার মতো বেশ কিছু নিরাপত্তা ফিচার রয়েছে। তবে এর পরও প্ল্যাটফর্মটি সঠিকভাবে ব্যবহার করা উচিত। কারণ, কিছু ভুলের কারণে আপনার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হতে পারে। তাই অ্যাপটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সতকর্তা অবলম্বন করা উচিত।
আসুন জেনে নিই হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারে ভুলেও করা যাবে না যেসব কাজ—
১. নিজের পরিচিতি ভালোভাবে প্রকাশে অনেকেই প্রোফাইল ছবি ব্যবহার করেন। কিন্তু এসব ছবির স্ক্রিনশট বা ছবি তুলে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা করেন সাইবার অপরাধীরা। আর তাই অপরিচিত ব্যক্তিদের কাছে নিজের হোয়াটসঅ্যাপ প্রোফাইলের ছবি প্রদর্শন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এতে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বাড়বে। হোয়াটসঅ্যাপের সেটিংসে গিয়ে চাইলেই নিজের প্রোফাইল ছবি অপরিচিত ব্যক্তিদের কাছে লুকিয়ে রাখা যায়।
২. হোয়াটসঅ্যাপ নতুন ব্যবহারকারীরা প্রথমেই যে ভুলটি করেন তা হলো, ফোনের কন্ট্রাক্টলিস্টে থাকা নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারের ইনভাইটেশন পাঠান। কিন্তু এ কাজটা করা যাবে না। এতে আপনার ফোন বুকের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মীরা বিরক্ত হবেন।
৩. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব বা মিথ্যা তথ্য খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমেও গুজব ছড়ায়। অনেকেই যাচাই না করে অন্যদের পাঠানো মিথ্যা বার্তা বা ছবি ফরওয়ার্ড করেন। এতে বিভিন্ন ধরনের আইনি জটিলতার পাশাপাশি বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। এ সমস্যা থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে অন্যদের পাঠানো বার্তার সত্যতা যাচাই না করে ফরওয়ার্ড করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. বন্ধু বা সহকর্মীদের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগের জন্য হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ খোলেন অনেকেই। কেউ আবার অন্যদের খোলা গ্রুপে যুক্ত হন। কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপের সব গ্রুপের ধরন এবং আলোচনার বিষয় একরকম নয়। ফলে অপরিচিতদের খোলা গ্রুপে যোগ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার শিকার হওয়ার পাশাপাশি বিব্রতকর পরিস্থিতির ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই অপরিচিতদের চালু করা গ্রুপে যুক্ত হওয়ার আগে গ্রুপটির সদস্য ও আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে।
৫. ফেসবুকে যেমন আপনি সবার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করেন না, তেমনি হোয়াটসঅ্যাপেও সবাইকে যুক্ত করবেন না। যাকে প্রয়োজন তাকেই কেবল কন্ট্রাক্ট লিখে রাখুন। অপ্রয়োজনীয় বিরক্তিকর ব্যবহারকারীকে প্রয়োজনে ব্লক করে রাখুন।
৬. অনেক সময় জনপ্রিয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামে ভুয়া উপহার কার্ড ও গিফট ভাউচার পাওয়ার প্রলোভনে বার্তা পাঠিয়ে থাকে সাইবার অপরাধীরা। এ ধরনের বার্তায় সাধারণত একটি লিংকে ক্লিক করে বিভিন্ন তথ্য জমা দিতে বলা হয়। এসব লিংকে ক্লিক করলেই ব্যবহারকারীর ফোনে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করতে পারে। যার মাধ্যমে আপনি হগারাতে পারেন ফোনের যাবতীয় তথ্য। হতে পরেন সাইবার অপরাধীদের মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইলের শিকার।
৭. হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টও হ্যাক হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাই অ্যাকাউন্ট ঝুঁকিমুক্ত রাখতে টু স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু রাখুন। এতে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট লগ ইন করার সঙ্গে সঙ্গে আপনার মোবাইল ফোনে পিন আসবে। সেই পিন দিলেই লগ ইন হবে। অ্যাকাউন্টের সুরক্ষার ব্যাপারে কোনো ঘাটতি রাখা যাবে না।
৮. গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপল স্টোর থেকে হোয়াটসঅ্যাপ না নামিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তৈরি ভুয়া হোয়াটসঅ্যাপ নামিয়ে থাকেন অনেকে। তৃতীয় পক্ষের তৈরি ভুয়া হোয়াটসঅ্যাপের নাম ও চেহারা আসল হোয়াটসঅ্যাপের কাছাকাছি হওয়ায় অনেকেই না বুঝে সেগুলো ব্যবহার করেন। এই অ্যাপগুলো নামালেই মোবাইল ফোন থেকে তথ্য চুরি করে সাইবার অপরাধীদের কাছে পাঠাতে থাকে। আর তাই থার্ড পার্টি অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপ নামানো থেকে বিরত থাকতে হবে।৯. হোয়াটসঅ্যাপের আন-অফিশিয়াল অ্যাপ ব্যবহার করা ক্ষতিকারক। এটি অ্যাকাউন্ট ব্যান করতে পারে। আন-অফিশিয়াল হোয়াটসঅ্যাপ সংস্করণগুলো তৃতীয় পক্ষের ডেভেলপাররা তৈরি করে থাকে।
১০. হোয়াটসঅ্যাপ স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার পুরোনো সব চ্যাট গুগল ড্রাইভে কিংবা আইক্লাউডে ব্যাকআপ রাখে। এতে ফোনের গতি যেমন স্লো হয়ে যায় তেমনি ড্রাইভের জায়গা শেষ হয়ে যায়। তাই এই অপশনটি বন্ধ করে রাখুন।
১১. অনেক সময় হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজে বন্ধুরা পর্ন ক্লিপ পাঠায়। এসব ক্লিপে কখনোই ক্লিক করবেন না। নিজেও এই ধরনের ক্লিপ কাউকে সেন্ড করবেন না।
১২. ব্লক করা ছাড়াও ব্যবহারকারীরা কারো হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টের রিপোর্টও করতে পারেন। হোয়াটসঅ্যাপ পর্যালোচনার জন্য শেষ পাঁচটি বার্তার অ্যাক্সেস পায়। এটি নিশ্চিত করে যে সেই অ্যাকাউন্টটি কোনো নীতি লঙ্ঘন করেছে কি না। যদি একাধিক রিপোর্ট একই ধরনের লঙ্ঘন প্রকাশ করে, তাহলে সম্ভবত সেই হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট ব্যান হয়ে যাবে।
১৩. গ্রুপে কথা বলতে গেলে, কাউকে একটি গ্রুপে যুক্ত করার আগে সবসময় অনুমতি নেয়া উচিত। অন্যথায় হোয়াটসঅ্যাপ নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।১৪. হোয়াটসঅ্যাপ পরিষেবার শর্তাবলি ‘মিথ্যা, ভুল উপস্থাপন বা বিভ্রান্তিকর বিবৃতি প্রকাশ করার’ সঙ্গে জড়িত কনটেন্ট নিষিদ্ধ করে। কেউ যদি এ ধরনের কন্টেন্ট তৈরি করেন, তাহলে হোয়াটসঅ্যাপ সেই অ্যাকাউন্ট ব্যান করবে।