কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের হায়দ্রাবাদ সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ'র গুলিতে নিহত আনোয়ারের মরদেহ হস্তান্তর করছে বিএসএফ। রবিবার সন্ধ্যা ৬ টা ১৫ মিনিটে ভারতের নগর এলাকা কলসীমোড়া বিএসএফ ক্যাম্প দিয়ে মরদেহ বাংলাদেশে হস্তান্তর করা হয়। বিজিবি ৬০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল এএম জাবের বিন জব্বার উপস্থিত থেকে মরদেহ স্বজনদের কাছে তুলে দেন।
এসময় তিনি জানান, ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত এবং এই মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত হবে।
এর আগে সকাল সাড়ে ৮ টায় বুড়িচং উপজেলার জামতলা ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের গুলিতে আনোয়ার নামে ওই বাংলাদেশী এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। স্থানীয় ৬৬ নং পিলার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত আনোয়ার হোসেন (৫০) বুড়িচং উপজেলার মিরপুর গ্রামের চারু মিয়ার ছেলে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কাশেম জানান, রবিবার সকাল আটটায় স্থানীয়রা জামতলা উত্তরপাড়া সীমান্ত এলাকায় গুলির শব্দ শুনতে পান। তিনি স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পারেন, ভারত থেকে চিনি আনতে গিয়ে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর বিএসএফের গুলিতে একজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। পরে স্থানীয় শংকুচাইল ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যদের সাথে নিয়ে তিনি কাঁটাতার বেড়া এলাকায় গিয়ে মরদেহ দেখতে পান। তিনি আরও জানান, এ বিষয়ে বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফ এর সাথে আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। যোগাযোগ সম্পন্ন হলে মরদেহ আনার ব্যবস্থা করা হবে।এর আগে সকালে বিজিবি ৬০ এর অধিনায়ক এএম জাবের বিন জব্বার সাংবাদিকদের বলেন, সকালে আনোয়ার হোসেন ভারতে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে। এ সময় বিএসএফ সদস্যরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়লে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।এমন সংবাদ স্থানীয়দের মাধ্যমে বিজিবি শুনেছে। এ বিষয়টি নিয়ে বিএসএফ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে বিএসএফ ঘটনার বিষয়টি অস্বীকার করে যে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী নিহত হয়েছে। তবে তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করে বাংলাদেশী হলে নিহতের লাশ বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে বলে জানিয়েছে। বিএসএফের আলোচনা চলমান রয়েছে। বিজিবি অধিনায়ক আরো জানান-স্থানীয়দের বরাতে বিজিবি জানতে পেরেছেন নিহত আনোয়ার ভারত থেকে চোরাইপথে আনা চিনি বহনকারী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন বলে জানা গেছে।
সবশেষ দুপুরে ঘটনাস্থল জামতলা এালাকায় বিজিবি ও বিএসএফ ই- কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠক শেষে সিদ্ধান্ত হয় কলসীমোড়া বিএসএফ ক্যাম্পের কাছে সীমান্তে বিজিবির কাছের মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
পরে বুড়িচং উপজেলার ১ নং রাজাপুর ইউনিয়নের হায়দ্রাবাদ সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে নিহত আনোয়ারের মরদেহ হস্তান্তর করে বিএসএফ।
২নং বাকশিমুল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবদুল করিম জানান, নিহত আনোয়ার চিনি চোরালানের শ্রমিক হিসেবে কাজ করবো। রবিবার সকালেও সে চিনি আনতে জামতলা যায়। সেখানেই এই ঘটনা ঘটে।
জামতলা গ্রামবাসী জানায়, গত এক সপ্তাহ ধরেই বিএসএফের সাথে স্থানীয় সীমান্তবর্তী গ্রামবাসীর উত্তেজনা পূর্ণ সম্পর্ক চলে আসছিল। গত সপ্তাহে বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে বিএসএফের একজন দু একজন গ্রামবাসীকে ধাওয়া করার পর থেকে এই উত্তেজনা চলে আসছে। সে সময় ওই বিএসএফ সদস্যকে ধরে তার নিরাপত্তা সরঞ্জাম রেখে দেওয়ার ঘটনা ঘটে বলে জানায় স্থানীয়রা। তবে বিজিবির চেষ্টায় ঘটনাটি মীমাংসা হলেও আজ রবিবার আবার এক চিনি চোরচালান শ্রমিক বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটে।