কুমিল্লায় স্কুল ছাত্র হত্যা মামলায় ১৩ বছর পর এক যুবককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে কুমিল্লার আদালত। ২০১৩ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির ছাত্র আল-আমিনকে হত্যার দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মোঃ নেয়ামত উল্লাহ (১৮) এর বিপক্ষে রবিবার (৩১ মার্চ) দুপুর বেলা কুমিল্লার বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পঞ্চম আদালতের বিচারক মোছা: ফরিদা ইয়াসমিন এ রায় দেন। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কুমিল্লা জেলার কোতয়ালী থানাধীন শালধর (সামারচর) গ্রামের মোঃ মোসলেম সরদারের ছেলে মোঃ নেয়ামত উল্লাহ।
মামলার বিবরণে জানা যায়- ২০১৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মাগরিবের নামাজ শেষে শালধর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ভিকটিম আল-আমিন (৯) মাহফিলের কথা বলে বাড়িতে ফিরে না আসায় তাঁর পিতাসহ আত্মীয়-স্বজন বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করে না পেয়ে পরদিন কোতয়ালী মডেল থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। পরবর্তীতে পরের দিন শালধরের জৈনক দেলোয়ার হোসেন এর বাগানের পাশের পুকুরে ছোট শিশুর মরদেহ ভাসতে দেখে শোর চিৎকার করিলে বাদী লোকমুখে শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে আল-আমিন এর মরদেহ পুকুর থেকে উপরে তুলে দেখেন আল-আমিনের ঘাড়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে।
এ ব্যাপারে ২০১৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ভিকটিম মোঃ আল আমিন এর পিতা কুমিল্লা কোতয়ালী থানাধীন শালধর গ্রামের মৃত মালু মিয়ার ছেলে মোঃ ফয়েজ আহমেদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে কোতয়ালী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করিলে তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক মোঃ সারওয়ার আলম তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আসামি মোঃ নেয়ামত উল্লাহ (১৮) ও মোঃ শাহ জাহানকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করেন। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর শালধর গ্রামের মোঃ মোসলেম সরদারের দুই ছেলে গ্রেফতারকৃত আসামি মোঃ নেয়ামত উল্লাহ (১৮) ও মোঃ শাহ জাহান (৩৪) এবং পলাতক আসামি মোর্শেদা (৫০) এর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/২০১/৩৪ ধারার বিধানমতে অভিযোগপত্র দাখিল করিলে ২০১৬ সালের ৯ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়। পরবর্তীতে মামলাটি বিচারে আসিলে রাষ্ট্রপক্ষে ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে যুক্তিতর্ক শুনানি অন্তে আসামি মোঃ নেয়ামত উল্লাহ এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারার বিধানমতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ২০১ ধারায় ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং বিশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ৩ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অপর আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়।
রায় ঘোষণাকালে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আদালত কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষে নিযুক্ত কৌশলী এপিপি মোঃ জাকির হোসেন উচ্চ আদালত উক্ত রায় বহাল রাখার প্রত্যাশা করে বিচার কার্য শেষ করেন।