
নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপি-জামায়াতের ডাকা
রবিবারের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কুমিল্লায় ঢিলেঢালাভাবে পালিত হয়েছে। সকাল
১০টার পর হরতাল সমর্থনকারী কাউকে মাঠে দেখা যায়নি। বেলা বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক ভাবেই শুরু হয়েছে কুমিল্লাবাসীর গতকালের নিয়মিত জীবন। একটু বেলা
করে দোকানপাট খুললেও শহরের বেশির ভাগ এলাকাতেই নির্বিঘœ ভাবে
প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রাখা হয়েছে। নগরীর চকবাজার এলাকায় বিএনপির মিছিলে
পুলিশের ধাওয়ার ঘটনার পর সে এলাকায় কিছুটা থমথমে ভাব বিরাজ করে। দুপুরের
দিকে সেখানকার পরিস্থিতিও ঠিক হয়ে যায়। এছাড়া দুপুর পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন
এলাকায় মোড়ে মোড়ে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আওয়ামীলীগ ও
অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের অবস্থান নিতে দেখা যায়। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে দেখা যায় পুলিশ
ও গোয়েন্দা পুলিশের মহড়া। মহাসড়কে দেখা গেছে হাইওয়ে পুলিশের টহল।
কুমিল্লার শাসনগাছা ও জাঙ্গালিয়া কেন্দ্রিয় বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা ও
সিলেট রুটে বেশ কয়েকটি বাস সকালেই ছেড়ে যায়। দুপুরে থেকে স্বাভাবিক হয়
বাসস্ট্যান্ডের স্বাভাবিক কার্যক্রমও।
হরতাল উপলক্ষ্যে রবিবার সকাল
সাতটা থেকে কান্দিরপাড় কলেজ রোডে দক্ষিণ জেলা বিএনপি কার্যালয়ে
নেতাকর্মীদের আসার আহ্বান জানায় বিএনপি। অন্যদিকে সকাল থেকে স্ব ্স্ব
এলাকায় হরতালের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে জড়ো হয় যুবলীগের নেতাকর্মীরা এবং সকাল
সাড়ে ৯ টায় নগরীর পূবালী চত্বরে শান্তি সমাবেশ ও শান্তি মিছিল আহ্বান করে
মহানগর আওয়ামীলীগ। সকালে বিএনপি নেতাকর্মীরা কান্দিরপাড় থেকে মিছিল নিয়ে
চকাবাজারের দিকে যায়। এসময় তারা রাস্তার দুই পাশের দোকান বন্ধ রাখতে চিৎকার
চেঁচামেচি ও ধমকি দেয়। এসময় দূর থেকে বিকট শব্দও শোনা যায়। পরে মিছিলটি
চকবাজার ফয়সাল হাসপাতালের সামনে গেলে পুলিশের বাঁধার মুখে ফেরত আসতে থাকে-
এসময় বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া করে পুলিশ। পুলিশের লাঠিচার্জে ছত্রভঙ্গ
হয়ে যায় মিছিলটি। ঘটনাস্থল থেকে চারজনকে আটক করে পুলিশ। পরে জানা গেছে, মোট
ছয় জনকে আটক করে পুলিশ। চকবাজার এলাকা থেকে ৯টি পেট্রলবোমা ও ককটেল উদ্ধার
করে পুলিশ।
বিএনপির মিছিল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল র্চার্জ করা
হয়েছে এমন অভিযোগ এনে পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান জানান, চকবাজারের ঘটনায়
৬-৭ জনকে আটক করা হয়েছে। হরতালের সমর্থনে মিছিল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে
ককটেল ছুঁড়ে মারায় আমরা তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছি।
কুমিল্লা দক্ষিন
জেলা বিএনপির আহবায়ক আমিন উর রশিদ ইয়াছিন দাবী করেন, হরতাল সমর্থনে আমাদের
শাšিতপূর্ণ মিছিলটি নগরীর চকবাজার যাওয়া মাত্র পুলিশ অর্তকিত লাটিপেটা,
টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও গুলি করে। এসময় আমাদের কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহবায়ক
উৎবাতুল বারী আবু, আমিরুজ্জামান আমিরসহ প্রায় ১০ নেতাকর্মী আহত হয়।
গ্রেপ্তার করা হয় জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এডভোকেট আলী আক্কাসসহ
চারজনকে।
গতকাল রাতে কুমিল্লা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার
কামরান হোসেন জানান, চকবাজারে হরতালকারীদের হামলায় এক পুলিশ সদস্য আহত
হয়েছেন। এই ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন ।
এদিকে কুমিল্লার পূবালী চত্বরে
সকাল ১০ টায় শুরু হয় হরতালের প্রতিবাদে মহানগর আওয়ামীলীগের শান্তি সমাবেশ।
কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আ ক ম
বাহাউদ্দিন বাহারের নেতৃত্বে শান্তি সমাবেশ শেষে একটি শান্তি মিছিল নগরীর
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এছাড়া কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দও পৃথক কর্মসূচির অংশ হিসেবে মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
খোঁজ
নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লা মহানগরীসহ দাউদকান্দি, চৌদ্দগ্রাম, চান্দিনা,
বুড়িচং, লাকসাম সহ সকল উপজেলা হরতালের প্রতিবাদে শান্তিসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সকল উপজেলাতেই ঢিলেঢালা ভাবে হরতাল পালিত হয়।
হরতালের দিন দুপুরে
কুমিল্লার জাঙ্গালিয়া বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেছে- টার্মিনালের সামনে
নিরাপত্তায় পাহাড়া দিচ্ছেন পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। সেখান থেকে
স্বল্পদূরত্বে বাস ছেড়ে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যাত্রী কিছুটা কম থাকায়
অলস সময় পাড় করছে পরিবহন শ্রমিকরা। পদুয়ারবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে,
দূরপাল্লার কিছু বাস দাঁড়িয়ে আছে মহাসড়কের পাশে। মহাসড়কে যাত্রীবাহী
যানবাহন কম থকালেও বিপুল পরিমানে পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলছে।
এছাড়া লোকাল লেগুনা-মাইক্রোবাসগুলোও চলছে নির্বিঘেœ। আলেখারচর এলাকায় গিয়ে
দেখা গেছে, সেখানে হাইওয়ে কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে টহল
চলছে। হাইওয়ে কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোঃ খাইরুল আলম বলেন, মহাসড়কে
যানবাহনের নিরাপত্তা দিতে হাইওয়ে পুলিশ সচেষ্ট আছে।
দুপুরের পর থেকে
কুমিল্লা নগরীর স্বাভাবিক দিনের চিত্র দেখা যায়। কোথাও কোন প্রতিবন্ধকতা
ছাড়াই ব্যবসা প্রতিষ্ঠা খোলা ও যানবাহন চলাচল।
