ম্যারাথন
দৌড় মূলত সমতলের দৌড় প্রতিযোগিতা। কিন্তু এই দৌড় আরও ছন্দময় ও
উত্তেজনাপূর্ণ করতে অনেক আগেই শুরু হয়েছে পাহাড়ের ঢাল ও গিরিপথ দিয়ে
ম্যারাথন প্রতিযোগিতা। আলপাইন পর্বতমালার সুইজারল্যান্ড অংশের নয়নাভিরাম
ইন্টারলাকেন এলাকায় ‘ইয়ুংফ্রাউ’ নামে ম্যারাথন শুরু হয়েছে ১৯৯৩ সালে। সেই
দৌড়ের ৩০ বছর পূর্তি এবার।
ইয়ুংফ্রাউ ম্যারাথনে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশের
আন্তর্জাতিক ম্যারাথন দৌড়বিদ শিব শংকর পাল। ৯ সেপ্টেম্বর সুইজারল্যান্ডের
ইন্টারলাকেন এলাকায় ইয়ুংফ্রাউ ম্যারাথনে পৃথিবীর ৭৫টির বেশি দেশ থেকে প্রায়
৪ হাজার ক্রীড়াবিদ অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে জার্মানি থেকে অংশ নেওয়া
প্রতিযোগীদের সংখ্যা ৩০ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ শতাংশ এবং বাকিরা নানা
দেশের প্রতিযোগী।
বাংলাদেশের শিব শংকর পাল এই ম্যারাথন দৌড়ের অভিজ্ঞতা
নিয়ে জানিয়েছেন, ‘দিনটি ছিল চমৎকার রৌদ্রোজ্জ্বল। আবার আলপাইন পর্বতমালার
চূড়ায় চূড়ায় ছল তুষারের প্রলেপ। প্রকৃতির এই অপরূপ পরিবেশের মধ্যে ৪২.২
কিলোমিটার পাহাড়ের ঢাল আর গিরিপথ দিয়ে দৌড়ানোর আনন্দটা অন্য রকম।’
তবে
তাঁকে আরও বেশি করে অনুপ্রাণিত করেছেন জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের
রাষ্ট্রদূত মোশাররাফ হোসেন ভূঁইয়ার উপস্থিতি। রাষ্ট্রদূত মোশাররাফ হোসেন
ভূঁইয়া জানিয়েছেন, জার্মানির মিউনিখে বসবাসকারী প্রতিভাবান এই
ম্যারাথনবিদের কথা অনেক আগেই শুনেছেন, তবে স্বচক্ষে দেখতে সুদূর বার্লিন
থেকে এই পর্বতসংকুল এলাকায় এসেছেন।
দেশ–বিদেশের চার হাজার প্রতিযোগীর
মধ্যে শিব শংকর পাল ছিলেন একমাত্র বাংলাদেশি। এ বছর ইয়ুংফ্রাউ ম্যারাথনে
পুরুষদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন ইউক্রেনের সাফার ভিটালি আর মেয়েদের মধ্যে
সুইজারল্যান্ডের লেবুয়েফ টেরেস।
বাংলাদেশের শিব শংকর পাল ম্যারাথন
প্রতিযোগিতায় দৌড়াচ্ছেন ১৯৯৭ সাল থেকে। এটি তাঁর ১২৩তম ম্যারাথন। পাঁচ বছর
আগে ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে নিউইয়র্কে নিজের শততম ম্যারাথন দৌড় সম্পন্ন
করেন। নিউইয়র্ক, হনুলুলু, ভিয়েনা, দুবাই, নেপাল, সাইপ্রাস, বার্লিন,
জুরিখ—পৃথিবীর নানা প্রান্তে যেখানেই ম্যারাথন দৌড়েছেন, শেষ টাচ মার্কের
কাছে এসে যতেœর সঙ্গে রাখা বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকাটি দুই হাতে মেলে
ধরেন।
ঢাকার দোহারের নবাবগঞ্জের অধিবাসী শিব শংকর পাল বলেন, ‘আমি সমতলের
মানুষ, তবে ইউরোপে আসার পর থেকে পাহাড় দেখে পাহাড়ের প্রতি একটা অন্য রকম
টান অনুভব করলাম। তখন থেকেই স্বপ্ন ছিল পাহাড় বা সমতল—সর্বত্রই ম্যারাথনে
অংশগ্রহণ করার।’ তাই অদম্য সাহস আর মনোবল নিয়ে তাঁর স্বপ্ন পূরণের আশায়
তিনি মিউনিখেই প্রস্তুতি অনুশীলন শুরু করেন। প্রতিদিনই কাজের শেষে তিনি
১৫-২০ কিলোমিটার পথ দৌড়ান। ছুটির দিনগুলোতেও তিনি কঠোরভাবে অনুশীলন করতেন
এবং ঢালু উঁচু-নিচু জায়গায় অনুশীলন করেন।
জার্মানির মিউনিখে শিব শংকর
পালের একটি ইলেকট্রনিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ব্যবসা সফল শিব শংকর পাল ২০১৭
সালে মিউনিখ সিটি করপোরেশনে সফল অভিবাসী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সম্মাননা
পুরস্কার পেয়েছেন।