প্রকাশ: রোববার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৮:১৩ পিএম আপডেট: ০৩.০৯.২০২৩ ৮:১৬ পিএম |

চারপাশে বাঁশঝাড় ও বন্য গাছপালায় ঘেরা ঝোঁপের ভিতর ভাঙাচোরা একটি টিনের ঘর। এ ঘরের টিনের চাল মরিচা ধরে ফুটো হয়ে গেছে বহু আগে। বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা পেতে টিনের চালার নিচে টানিয়ে দেওয়া হয়েছে পলিথিন। বেঁড়ার টিন ও লোহার অ্যাঙ্গেলে মরিচা ধরে খুলে পড়ছে। ঘরের বেশির ভাগ দরজা ও জানালা ভাঙাচোরা। শৌচাগার নেই। চৌকি ছাড়া মাটিতে ছেঁড়া পাটি ও পলিথিন বিছিয়ে রাত কাটানো যায় কোন রকম। জঙ্গলের ভিতরে এমন একটি স্যাতস্যাতে ঘরে বাস করছেন ভিটে মাটিহীন মামুন মিয়া। মামুনের সাথে থাকেন তাঁর ৬শিশু সন্তান ও স্ত্রী। রোববার দুপুরে মামুনের জীবন সংগ্রাম নিয়ে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তাৎক্ষনিক দেবিদ্বারের ইউএনও নিগার সুলতানার নির্দেশে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ রায়হানুল ইসলাম মামুনের জঙ্গলের বসবাস করা সেই বাড়ি যান। পরে তাকে পাশ^বর্তী বুড়িরপাড় আশ্রয়ন প্রকল্পে একটি ঘর বরাদ্দ দেন। ঘর পেয়ে খুশি হয়েছেন মামুনের পরিবার। মামুন দেবিদ্বার পৌরসভার বারেরা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর বাবার নাম মৃত আবদুল মালেক। গত তিন মাস ধরে দেবিদ্বার উপজেলার সুবিল ইউনিয়নের পোমকাড়া গ্রামের একটি জঙ্গলের ভিতওে বানানো ওই পরিত্যাক্ত ঘরে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন।
দরিদ্র মামুন মিয়া বলেন, আমি দিনমজুরের কাজ করি। আগে দেবিদ্বারের বারেরা এলাকায় পরিত্যক্ত একটি ঘরে বসবাস করতাম। ওই ঘরের মালিক নতুন ঘর তৈরী করায় আমাদেরকে চলে যেতে বলেছেন। এক লোকের মাধ্যমে এই জঙ্গলের ভিতর এ ভাঙা ঘরটির সন্ধান পাই। পরে বউ বাচ্চাদের নিয়ে এ ঘরে উঠি। বিকালে একজন অফিসার এসে আমাদের বুড়িরপাড়ে আশ্রয়ন প্রকল্পে একটি ঘর দিয়েছেন। কালকে ওই ঘরে উঠব। এর আগে অনেকজনের বলছি একটি সরকারি ঘর নিয়ে দিতে কিন্তু কেউ দেয়নি। দরিদ্র মামুন মিয়া আরও বলেন, মাটিতে ছেঁড়া পাটি বিছিয়ে ছয় ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে এক সাথে ঘুমাই। এখানে অনেক সাপ, পোকা-মাকড় ও মশার কামড় খেয়েছি। ঘরে কোন মশারিও নেই। এমন নোংরা পরিবেশে কেউ থাকতে চায়না। আমি বাধ্য হয়ে থাকি। এখানে থেকে ছেলে মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমি নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েছি। এরপরও কোন রকম মাথাগুজার ঠাঁই না পেয়ে এ ঘরে আশ্রয় নিয়েছি।
মামুনের স্ত্রী নিলুফা আক্তার বলেন, এমনও দিন গেছে ছেলে-মেয়েদের ভাগ্যে তিন বেলা খাবার জুটে নাই। এ সংসারে নুন দিয়ে ভাত খেয়েও দিন পার করেছি। স্বামী যেদিন কাজ পান না সেদিন খাই না পেলে উপোস থাকি। গত ৬ মাসে মাছ-মাংস চোখে দেখিনি। ভাত, ডাল ও আলুর ভর্তা আমাদের সবচেয়ে ভালো খাবার।
সুবিলের ইউপি চেয়ারম্যান মুকুল ভূঁইয়া বলেন, অসহায় এ পরিবারটির জন্য খারাপ লাগছে। আশ্রয়ণের ঘর যখন বরাদ্দ দেয়া হয় তখন তাঁরা জঙ্গলে বসবাস করতেন না। থাকলে আমি প্রকল্পে নতুন ঘর ব্যবস্থা করে দিতে পারতাম। বুড়িরপাড় আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনেক ঘর ফাঁকা আছে। এখান থেকে একটি ঘর বরাদ্দ দেওয়ার জন্য আমি ইউএনও বরাবর সুপারিশ করব।
দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিগার সুলতানা বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মামুনের জঙ্গলের বসবাসের খবর পেয়ে দ্রæত এসিল্যান্ডকে ওই জঙ্গলে পাঠানো হয়েছে। দরিদ্র মামুনকে ইতোমধ্যে বুড়িরপাড় আশ্রয়ন প্রকল্পে একটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।