বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান, আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান॥- কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান। কিংবা বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল - কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের অনন্য উপন্যাস থেকে জনপ্রিয় প্রেমের নাটক। প্রিয় ঋতু বর্ষার সাথে কদম ফুলের রসায়নের উদাহরণ এর চেয়ে বেশি আর কি হতে পারে!
বর্ষার শুরু যেন কদম ফুলের মন মাতানোর রং ছাড়া ম্লান। যারা মনে করেন বর্ষা, তারা হয় কদম ফুল হাতে নিয়ে কিংবা কদম ফুলের ছবি দিয়ে প্রকাশ করেন আষাঢ় শ্রাবণের সাথে তাদের প্রেম। এটা চিরায়ত বাঙালির অন্য আরেক সংস্কৃতি।
কদম ফুল নিয়ে আরেকটু বলে রাখা ভালো- বড় বড় সবুজ পাতার ফাঁকে একেকটি কদমফুল ঝুলে থাকে। মূল বলটা হলুদ সোনালি রঙের। উপরিভাগে রয়েছে সাদা রঙের একটা প্রলেপ। বলে রাখা ভালো, আমরা যে গোল আকারের কদম ফুল দেখি সেটি কিন্তু একটিমাত্র ফুল নয়। অজস্র ফুলের সমারোহ। এর ভেতরের মাংসলপিণ্ড থেকে হলুদ রঙের নলাকৃতির হাজার হাজার ফুল বেরিয়ে এসে বলটাকে স্পঞ্জ বানিয়ে রাখে। ওপরের সাদার প্রলেপগুলো অজস্র ফুলের পরাগকেশ। বলতে পারেন, হাজার ফুলের সমন্বয়ে এটি একটি ফুল। কদমফুলের ঘ্রাণ তীব্র নয়। তবে চার পাশ মদির করে রাখতে পারে। বড় নষ্টলজিক সেই ঘ্রাণ। যে কাউকেই মোহময় করে তুলতে পারে।
কদম আমাদের নিজস্ব গাছ। তবে ভারতের উষ্ণ অঞ্চল, চীন ও মালয় এর আদি নিবাস। গাছের কাণ্ড সরল, উন্নত, ধূসর থেকে প্রায় কালো এবং বহু ফাটলে রূক্ষ, কর্কশ। শীতে সব পাতা ঝরে যায়। বসন্তে কচিপাতা আসে উচ্ছ্বাস নিয়ে।
প্রস্ফুটন মওসুমে ছোট ছোট ডালের আগায় একক কলি আসে গোল হয়ে। বর্ষাকালেই মূলত ফুল ফোটে। তবে জৈষ্ঠ্যের শেষ দিকে অনেক গাছে ফুল ফোটা শুরু হয়। গাছের ছাল, কাণ্ড, পাতা, ফল, ফুল, ফুলের রেণু ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বর্ণে গন্ধে সৌন্দর্যে কদম এ দেশের রূপসী তরুর অন্যতম হলেও অবহেলা-অনাদরে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে এ গাছ। এক সময় তো কদমগাছ ছাড়া কোনো গ্রাম আছে এটা কল্পনাই করা যেত না। এখন দশ গ্রাম ঘুরেও কদমের দেখা পাওয়া যায় না। বলা যায় না অবহেলায় একদিন হয়তো হারিয়ে যাবে এই গাছটা। তখন হয়তো কদম ছাড়াই বর্ষা উদযাপন করতে হবে আমাদের। তাই প্রয়োজন সচেতনতা। প্রকৃতির ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে অন্য গাছের পাশাপাশি কদমগাছ রোপণ করা প্রয়োজন।
শেষ করতে হয় হুমায়ুন আহমেদের বিখ্যাত গানের লাইন দিয়েই- এখানেও কদমকে বিরহীর উপহার হিসেবে তিনি গেয়ে গেছেন।
যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো,/ চলে এসো এক বরষায়.../
যদিও তখন আকাশ থাকবে বৈরী/ কদমগুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরি/
...কদমগুচ্ছ খোঁপায় জড়ায়ে দিয়ে/ জলভরা মাঠে নাচিব তোমায় নিয়ে/
তুমি চলে এসো, চলে এসো এক বরষায়...