মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫
৩১ আষাঢ় ১৪৩২
বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ কী
আহসান হাবিব
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০১ এএম |


চলছে ফেব্রুয়ারি মাস। ভাষা আন্দোলনের মাস। ফেব্রুয়ারি মাস এলেই আমরা বাংলা ভাষার ওপর বই প্রকাশ করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ি। কিন্তু বাংলা ভাষাকে আমরা যথাযথ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি কিনা সেটা আজ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাবলীল বাংলার ব্যবহার বলতেই নেই। বাংলা একাডেমি থেকে গণমাধ্যম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং পরে এফএম রেডিও, সামাজিক গণমাধ্যমে সবখানে বাংলা ভাষার ব্যবহারের কোনো ধারাবাহিকতা নেই। সাইনবোর্ড থেকে বিজ্ঞাপন সবখানে বাংলার অশুদ্ধ ব্যবহার। ফেব্রুয়ারি এলে সেটা একটু-আধটু বলা হলেও সারা বছর কোনো খবর থাকে না। ১৯৪৭ সালে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে দেশ ভাগের পর থেকে পাকিস্তান বহুমুখী শত্রুতা চালাতে থাকে বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে। বাংলা ভাষাকে শরীর ও আত্মার বিনাশ করাই ছিল পাকিস্তানিদের লক্ষ্য। অনেক আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই মাসেই উর্দু ভাষা বাংলা ভাষায় রূপান্তরিত হয়েছে। বাংলার দামাল ছেলেরা বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলন করেছেন। নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়েছেন। বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালিকে একটি হীন, দুর্বলচিত্ত জাতি হিসেবে পরিচয় করিয়েছে ব্রিটিশরা। আজ এই পরিচয়ের কালিমায় সিক্ত হয়ে বাঙালি শাসিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশের ইতিহাস নানা জটিলতার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বাংলার সোনার ছেলেরা মায়ের ভাষা রক্ষার জন্য জীবন দিলেন। ইতিহাস পড়ে যাদের নাম আমরা জেনেছি, তারা হলেনÑ সালাম, বরকত, রফিক ও জব্বারসহ নাম না জানা আরও অনেকেই। যারা বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলন করলেন, যারা বাংলার জন্য জীবন দিলেন, যারা বাংলা ভাষার জন্য সম্ভ্রম হারালেন সেই বাংলা ভাষা (আমাদের মাতৃভাষা) কি আমরা সর্বত্র ব্যবহার করছি। করছি না। তা হলে বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ কী? বাংলা ভাষার পরিবর্তে অফিস, আদালতে, সরকারি-বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার হচ্ছে ব্রিটিশদের দেওয়া ইংরেজি ভাষা। কেন বাংলা ভাষা সর্বত্র ব্যবহার করতে পারছি না। সমস্যাটা কোথায়?
মানুষ তারই সঙ্গে শত্রুতা করে, যা তার স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়। বাঙালির কাছে বাংলা ভাষা এখনো পুরোপুরি শ্রদ্ধেয় ভাষা হয়ে উঠতে পারেনি। আড়াই শতাব্দী আগে তারা শ্রদ্ধা করেছে ফারসি ভাষাকে। দুইশ বছর ধরে শ্রদ্ধা করে আসছে ইংরেজি ভাষাকে। দুটিই সাম্রাজ্যবাদী রাজকীয় ভাষা, যা বাঙালির কাছে আভিজাত্যের প্রতীক। আমাদের রুগ্ন সমাজব্যবস্থা এমন কিছু মানুষ ও তাদের একটি শ্রেণি সফল হয়েছে, যারা অসুস্থভাবে ইংরেজিমনস্ক।
মানবগোষ্ঠীর সবচেয়ে বাচাল শ্রেণি হচ্ছে রাজনীতিক শ্রেণি। ভাষা তাদের প্রধান অস্ত্র। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সম্প্রদায় দ্বিভাষিক। পারিবারিক জীবনে ও জনতার সামনে তারা ব্যবহার করেন সাধু-চলতি, আঞ্চলিক মিশ্রিত বাংলা ভাষা। আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানগুলোতে তারা ইংরেজিতে বক্তব্য দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আমাদের দেশের উচ্চবিত্তশালীরা তাদের সন্তানদের ইংরেজি ভার্সনে লেখাপড়া করান। তারা বাংলা পছন্দ করেন না। এমনকি এমপি, মন্ত্রী, সরকারি আমলাদের সন্তানরাও বাংলার পরিবর্তে ইংরেজি ভার্সনে লেখাপড়া করেন। এজন্যই কি আমরা বাংলা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছিলাম। ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা সত্য, আমরা সব কিছুতেই পরনির্ভর, তাই পরের কাছে আবেদন-নিবেদনের জন্য ইংরেজি আমাদের সব সময় দরকার। ইংরেজি ব্যবহারকারীদের ভাবটা এমন পৃথিবীর সব জ্ঞান শুধু ইংরেজিতেই পাওয়া যায়, তাই ইংরেজি অত্যাবশ্যক ইত্যাদি নানা যুক্তি তারা পেশ করেন ইংরেজির পক্ষে।
বাংলা ভাষা যত বেশি ব্যবহার হবে, এর প্রতিশ্রুতিও তত বেড়ে যাবে। বাংলা ভাষা নিজস্ব স্বভাবেই বেড়ে উঠবে এবং একদিন প্রাচুর্য ও সমৃদ্ধির শীর্ষে আরোহণ করবে, কেবল তখনই এর সক্ষমতাকে অন্য ভাষার পাশে বিচার করা চলবে, তার আগে নয়। বাংলা ভাষা রাষ্ট্রীয় মর্যাদা বিকাশে শৈশবকাল অতিক্রম করছে। তাই শব্দ, পরিভাষা বা ব্যবহারের জটিলতা থাকবে কিন্তু তা ব্যবহারের মাধ্যমেই কেটে যাবে। মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের বা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। কেননা প্রতিদিনের ভাবের আলাপ, সুখ, দুঃখ, আশা-নৈরাশ্য, আনন্দ-বেদনার প্রকাশ পায় মাতৃভাষায়। মাতৃভাষা মনোভাব যত উপযোগী অন্য ভাষা তা নয়। মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করলে শিক্ষার্থীরা সহজেই সে বিষয়টি আয়ত্ত করতে পারে। মাতৃভাষা ভিন্ন অন্য ভাষার সহজবোধ্যতার ভিত্তি নেই। দেশ ও জাতির কল্যাণে তথা দেশকে সমৃদ্ধিশালী করতে হলে মাতৃভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। মায়ের সঙ্গে, মাটির সঙ্গে, দেশের সঙ্গে, প্রকৃতির সঙ্গে যোগসূত্র গড়তে হলে প্রয়োজন মাতৃভাষা। সবচেয়ে বড় কথাÑ মাতৃভাষা মায়ের ভাষা, স্বদেশি ভাষা। মাতৃভাষার চেয়ে সহজ অন্য কোনো ভাষা হতে পারে না। ভাষা হলো সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যম। ইতিহাস-ঐতিহ্যের বাহন। বাংলা ভাষায় সেরা সাহিত্যকর্ম লেখা হবে, বিকশিত হবে তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে। তাই সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
আহসান হাবিব : সাংবাদিক ও কলাম লেখক












সর্বশেষ সংবাদ
নতুন বইয়ের বর্ণিল নতুন বছর
নৌকায় ভোট নিতে ভাতার কার্ড আটকে রাখার অভিযোগ
শান্তির নোবেলজয়ী থেকে দণ্ডিত আসামি
শ্রমিক ঠকানোর দায়ে নোবেলজয়ী ইউনূসের ৬ মাসের সাজা
ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা অধ্যক্ষ পদে অধ্যাপক ডাঃ রুহিনী কুমার দাস এর দায়িত্ব গ্রহণ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
গাড়ির ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই বন্ধু নিহত
বরুড়ায় শ্রমিকদল নেতাকে ছুরিকাঘাত
অর্ধেক দামে ফ্রিজ বিক্রি করছেন ফ্রিজ প্রতীকের প্রার্থী
বাড়ির জন্য কেনা জমিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা যাওয়া একই পরিবারের ৪ জনের কবর
৫৫ কেজি সোনা চুরি, ফের রিমান্ডে দুই রাজস্ব কর্মকর্তা
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: newscomillarkagoj@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২