শনিবার ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
২৬ মাঘ ১৪৩১
হৃৎকলমের টানেঃ আখতার হামিদ খান
ড. আরিফ মজুমদার
প্রকাশ: রোববার, ১৪ জুলাই, ২০২৪, ১২:০০ এএম |



দুই জন মহাপুরুষ আমার জীবনকে প্রভাবিত করেছেন। অথচ এদের দুজনের কারো সাথে আমার দেখা হয়নি, কথা হয় নি। 
প্রথম জনঃ ড. আখতার হামিদ খান।
উনার সাদাসিধে জীবন এবং বাংলাদেশের দরিদ্র্য মানুষের জন্য অবদান। তিনি পল্লী উন্নয়নে কুমিল্লা পদ্ধতির (ঈড়সরষষধ গড়ফবষ ভড়ৎ জঁৎধষ উবাবষড়ঢ়সবহঃ) জন্য সারা বিশ্বে সমাদৃত। 
দ্বিতীয় জনঃ ড.  ভূপেন হাজারিকা।
যার গান কৃষক, শ্রমিক এবং নিপীড়িত মানুষকে উজ্জীবিত করেছে। 
আজ ১৫ জুলাই ২০২৪ প্রথম জন ড. আখতার হামিদ খানের ১১০তম জন্মদিন।
শুভ জন্মদিন আমার দীক্ষাগুরু ড. আখতার হামিদ খান!
উনার অবদান আমাদের সরকার স্বীকৃতি না দিলেও কুমিল্লার জনগণ এখনও দেয়। 
তরুন প্রজন্ম উনাকে চেনে না, জানে না।
এটা কষ্টকর।
উনার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমীতে (যা বার্ড ইঅজউ: ইধহমষধফবংয অপধফবসু ভড়ৎ জঁৎধষ উবাবষড়ঢ়সবহঃ; বার্ড নামে পরিচিত)) দুই বছর ছয় মাস কাজ করতে পেরে নিজকে ধন্য মনে করি। উনার সাদাসিধে জীবন, নীতি এবং আদর্শ আমাকে প্রভাবিত করেছে।
প্রেসিডন্ট এরশাদের ইচ্ছায় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রকাশিত বই “আখতার হামিদ খান” (চিন্ময় মুৎসুদ্দী রচিত) গ্রন্থ পড়ে আমি মেজিস্ট্রেট না হয়ে একজন পল্লী উন্নয়ন  কর্মী হতে পেরেছি।
ড. আখতার হামিদ খান কবি, দার্শনিক এবং সুফী সাধক ছিলেন। জন্ম ভারতের উত্তর প্রদেশের আগ্রার সন্নিকটে বেরিলি গ্রামে।
 মাত্র তের বছর বয়সে তিনি চার শত বই পড়েন (গড়ৎহরহম ংযড়ংি ঃযব ফধু)।পুলিশ অফিসার বাবার ইচ্ছায় ব্রিটীশদের সাথে প্রতিযোগিতা মূলক ওহফরধহ ঈরারষ ঝবৎারপব (ওঈঝ) ট্রেনিং সম্পন্ন করে কর্মজীবন শুরু করেন বাংলাদেশে। 
নাটোর মুহকুমার ঝউঙ: ঝঁন উরারংরড়হধষ ঙভভরপবৎ থাকা কালীন, কর্দমাক্ত রাস্তায় কাঁধে বাঁশ বহন করে কৃষকের বাড়ি পৌঁছে দেন।
নেত্রকোনা মুহকুমার ঝউঙ থাকা কালীন দূর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষের জন্য সরকারী গোডাউন থেকে নিজ দায়িত্বে রিলিফ বিতরন করায় উনাকে শো-কজ করা হয়। তিনি রাগান্বিত হয়ে  ওঈঝ অফিসারের মতোন লোভনীয় চাকুরী ছেড়ে দেন। উনার বাবা এবং অনেক ওঈঝ সহকর্মী চাকুরী ছাড়তে অনুরোধ করেন। তিনি শুনেন নি।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে অধ্যক্ষ (১৯৫০ -১৯৫৮) থাকা কালীন ছাত্ররা কলেজ ফি পরিশোধ করতে কেন পারেনা - ছাত্রদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে জানার চেষ্টা করেন। ছাত্রদের ভববফ নধপশ দেন, “তোমাদের না পড়িয়ে তোমাদের বাবাদের পড়াতে হবে”। 
মূল কারণ, ফসলের ফলন কম হওয়া এবং বন্যায় ফসল নষ্ট হওয়া। ফসল বিক্রির টাকা দিয়ে কৃষক পুত্রের কলেজের বেতন দিতো।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট  আইয়্যুব খানকে আমরা যতই গালি দিই না কেন, তিনিই পাকিস্তান উন্নয়নের মাস্টার প্ল্যানার। আজ যে সুন্দর সংসদ ভবন দেখছি, এ কাজ কিন্তু তিনিই শুরু করেছিলেন। মানিক মিয়া এভিনিউর মতোন প্রশস্থ সড়ক ততকালীন মাস্টার প্ল্যান। আমাদের তরুণ প্রজন্ম এসব জানে না এবং মিডিয়া এসব বলে না। বরং গালি দিতে থুথু দিতে শিখায়।
আন্তঃরাস্ট্রীয় সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে আইয়্যুব খান যুক্তরাষ্ট্র (টঝঅ) থেকে অর্থ এনে পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানে দুটো পল্লী উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান গড়েন।
যার একটি কুমিল্লার কোটবাড়িস্থ বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী। 
এর প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাহী (পরিচালক) পদে দায়িত্ব দেন ড. আখতার হামিদ খানকে। যাকে বলে, জরমযঃ চবৎংড়হ ড়হ জরমযঃ চড়ংরঃরড়হ. 
কুমিল্লার এক গ্রামে বার্ডের (তখন নাম ছিল পার্ড চঅজউ: চধশরংঃধহ অপধফবসু ভড়ৎ জঁৎধষ উবাবষড়ঢ়সবহঃ) মাধ্যমে পল্লী উন্নয়ন কর্মকা- স্বচক্ষে দেখে খুশী হয়ে পাকিস্তানে ফিরে গিয়ে ড. আখতার হামিদ খানকে চিঠিতে লেখেনঃ ওঃ রং ঃযব ভরৎংঃ ঃরসব ঃযধঃ, ও ভড়ঁহফ ঃযব রফবধং ঃযধঃ বিৎব ড়হষু াধমঁবষু ঢ়ৎবংবহঃ রহ সু সরহফ ঢ়ঁঃ রহঃড় ঢ়ৎধপঃরপধষ ংযধঢ়ব রহ ধ ৎবধষরংঃরপ ধহফ ঢ়ৎধমসধঃরপ সধহহবৎ ঃড় যবষঢ় ঢ়বড়ঢ়ষব ঃড় ংঃধহফ ড়হ ঃযবরৎ ড়হি ভববঃ ধহফ নবঃঃবৎ ঃযবরৎ ষড়ঃ (ফধঃবফ ২২.০৩.১৯৬৩)
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান সরকার আখতার হামিদ খানকে কুমিল্লা থেকে পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে যান।স্বাধীনতার পর উনি স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরতে পারেন নি। 
বিশ্বব্যাঙ্কের অর্থায়ণে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বার্ডের আদলে বগুড়ায় পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (জউঅ: জঁৎধষ উবাবষড়ঢ়সবহঃ অপধফবসু) গড়ার নিমিত্তে বাংলাদেশে ড. আখতার হামিদ খানকে আনেন। আদর্শ মানব ড. খান সেখানে কাজ করতে গিয়ে নানা বাঁধার সম্মুখীন হন।
তিনি কুমিল্লায় ফিরে গিয়ে বার্ডে করা অসম্পন্ন কাজ শেষ করার জন্য প্রেসিডেন্ট জিয়াকে চিঠি লেখেন। আমলাতন্ত্রের কারনে তিনি প্রেসিডেন্ট জিয়ার সাথে দেখা করার সুযোগ না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে আমেরিকা ফিরে যান।
পরে আশির দশকে পাকিস্তানের করাচীর সন্নিকটে ওরাঙ্গী (ঙৎধহমর) শহরে কোন সরকারী সাহায্য ছাড়া ঙচচ: ঙৎধহমর চরষড়ঃ চৎড়লবপঃ এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য স্যানিটেশন এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার মাধ্যমে মানবিক উন্নয়ন সাধন করেন।
উনার বিখ্যাত প্রবন্ধঃ ডযধঃ ও যধাব ষবধৎহঃ রহ ইঅজউ ধহফ ঙৎধহমর তে তিনি তাঁর কাজের বর্ননা করেন। বলেননিঃ ডযধঃ ও যধাব ফড়হব. 
জধঃযবৎ যব ঃড়ষফ: ডযধঃ ও যধাব ষবধৎহঃ.
সারা বিশ্বে উন্নয়ন অর্থনীতিতে আখতার হামিদ খানের অবদান স্বীকৃত।আর জাতি হিসেবে আমরা এমন হীন যে, একমাত্র বার্ড ছাড়া উনাকে কেউ স্মরণ করে না। আমাদের রাজনীতি উনাকে স্মরণ করার যোগ্যতা এখনো অর্জন করেনি। 
আমি মনে করি, স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য বইতে উনাকে পরিচিত করানো উচিত। জাতীয়ভাবে উনাকে স্মরণ করা উচিত। 
উনাকে নিয়ে একটা উক্তি দিয়ে শেষ করছিঃ “ঝঁপয ঃড়বিৎরহম ভরমঁৎবং ধহফ ষড়ভঃু রহঃবষষবপঃং ধং অশযঃবৎ ঐধসববফ’ধৎব য়ঁরঃব ঁহপড়সসড়হ.  ঙহষু ধ ভবি বসবৎমব রহ ধহু মবহবৎধঃরড়হ”- উৎ. ঘড়ৎসধহ টঢ়যড়ভভ (ডড়ৎষফ ভধসড়ঁং ঝড়পরধষ ঝপরবহঃরংঃ) 
লেখক: প্রাক্তন সহকারী পরিচালক, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, কুমিল্লা।













সর্বশেষ সংবাদ
কুমিল্লার সাবেক পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান আটক
কুমিল্লায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের মাঝে গৃহ নির্মাণ সামগ্রী ও নগদ অর্থ বিতরণ
তৃণমূল থেকে দলকে শক্তিশালী করাই লক্ষ্য- জাকারিয়া সুমন
চৌদ্দগ্রামে আ'লীগ নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর হালিম গ্রেফতার
অধ্যক্ষ রউফের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কক্ষে তালা
কুমিল্লার সাবেক পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান আটক
কুমিল্লা আমড়াতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের গৌরব ও ঐতিহ্যের ৫০ বছর পূর্তি
কুমিল্লায় বাহারের বাড়িতে ফের ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ
তৃণমূল থেকে দলকে শক্তিশালী করাই লক্ষ্য- জাকারিয়া সুমন
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২