২০১৮
সালে আমেরিকার হাওয়ায় দ্বীপে সেমিনারে অংশগ্রহণকালে ২৫ দিন অবস্থান এবং
২০২৪-এ নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত হওয়ার অভিজ্ঞতা
থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে বলা যায়, মহাদেশটি বিশাল এবং সেখানকার
নাগরিকরা আইন মেনে চলেন, আচরণে সভ্য ও সৌজন্যবোধে অনন্য। স্ট্যাচু অব
লিবার্টির সামনে দাঁড়ালে গণতন্ত্রের বিশাল জয়যাত্রাক স্মরণ করা যায়। আর
এলিস আইল্যান্ডের ইমিগ্রেশন মিউজিয়ামে ঘুরলে আমেরিকায় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর
আগমন ও ক্রমবিকাশটি আবিষ্কার করা সম্ভব। আমেরিকা কেবল উন্নত রাষ্ট্র নয়,
সেখানকার মানবসমাজ পৃথিবীর অন্য মানুষের কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণও বটে। ১৫ লাখ
বাঙালির বসবাসের সূত্রে মহাদেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ নিবিড়।
প্রকৃতপক্ষে
আমেরিকা-বাংলাদেশ সম্পর্কের উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ স্রোতের বিপরীতে
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যু এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষের টেনশন ও
ভয়ের মধ্যে ৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৮তম স্বাধীনতা দিবস পালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ নিয়ে অপপ্রচারে ভুল বোঝাবুঝি এবং বিভিন্ন সামাজিক সমস্যায় কিংবা
তাদের ভূখ-ে অস্ত্রধারীদের হামলায় নেতিবাচক দৃশ্যপট তৈরি করলেও স্বাধীনতা
দিবসের তাৎপর্য স্মরণ করে এই মহাদেশটি এগিয়ে চলেছে। আসলে আমেরিকা বা
যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে অনেকগুলো তাৎপর্যবহ দিবস। মে মাসের শেষ সোমবার পালন
করা হয় ‘স্মৃতি দিবস’। এই দিনে সামরিক সেবা দিতে গিয়ে যারা নিহত হয়েছেন
তাদের স্মরণ করা হয়। সেপ্টেম্বরের প্রথম সোমবার পালন করা হয় ‘শ্রমিক দিবস’।
১৭
সেপ্টেম্বর ‘সংবিধান বার্ষিকী দিবস’ উদযাপিত হয়। ‘থ্যাঙ্কসগিভিং ডে’ পালন
করা হয় নভেম্বরের চতুর্থ বৃহস্পতিবার। ফসল সংগ্রহ উদযাপনে এই দিবস পালন করা
হয় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমল থেকেই। ‘প্রেসিডেন্ট ডে’ পালন করা হয়
ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সোমবার। দিনটি পালন করা হয় জর্জ ওয়াশিংটন এবং আব্রাহাম
লিঙ্কনের জন্মদিন স্মরণে। ১১ নভেম্বর পালিত হয় ‘সেনা দিবস’। জানুয়ারির
তৃতীয় সোমবার বেসামরিক অধিকার আন্দোলন নেতাদের অবদান স্মরণে বেসামরিক
অধিকার নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রকে স্মরণ করা হয়।
তবে বাংলাদেশের
বিজয় দিবসের মতোই আমেরিকার স্বাধীনতা দিবসটি অত্যন্ত মর্যাদা সহকারে ও
উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়। ২৪৭ বছর আগে ১৭৭৬ সালের ২ জুলাই ইংল্যান্ডের
শাসন থেকে পৃথক হওয়ার জন্য ভোট দেয় আমেরিকার দ্বিতীয় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস।
এর দুদিন পর ৪ জুলাই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে চূড়ান্ত অনুমোদন আসে কংগ্রেসের
হাত ধরে। অবশ্য ব্রিটেনের সঙ্গে পৃথক হওয়ার জন্য চূড়ান্ত স্বাক্ষর ২ আগস্ট
অনুষ্ঠিত হলেও প্রত্যেক বছর ৪ জুলাই স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করে আমেরিকা।
আসলে ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাইয়ের আগে ১৩টি ঔপনিবেশ রাজ্য একসঙ্গে ইংল্যান্ডের
রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করে।
দুই.
আমেরিকার
স্বাধীনতা লাভের যুদ্ধ ১৭৭৫ সালে শুরু হয়ে ১৭৮৩ সাল পর্যন্ত চলে। ১৭৭৫
সালে বিপ্লবী যুদ্ধের শুরু হয় ব্রিটিশ বাহিনী ও ঔপনিবেশের স্থানীয় সশস্ত্র
বাসিন্দাদের মধ্যে একটি ছোট খ-যুদ্ধের মাধ্যমে। খ-যুদ্ধটি সংঘটিত হয় ১৭৭৫
সালের ১৯ এপ্রিল। এই যুদ্ধের ফলে অন্য স্থানেও সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। এই যুদ্ধে
২৫০ জনের বেশি ব্রিটিশ সেনা হতাহত হয়, আর আমেরিকানরা হারায় ৯৩ জন
বিপ্লবীকে। এর মধ্যে ব্রিটিশরা বিদ্রোহ দমন করার জন্য বৃহৎ আকারে সেনা
সমবেত করে। মার্কিন বিদ্রোহী সেনাদের বিরুদ্ধে তারা গুরুত্বপূর্ণ বিজয়
অর্জন করে। এরপর ১৩টি ব্রিটিশ কলোনির স্বাধীনচেতা মানুষেরা একত্রিত হয়ে
সিদ্ধান্ত নেয় তারা স্বাধীনতার দাবিতে অস্ত্র হাতে নেবে।
ঔপনিবেশগুলো
হলো নিউ হ্যামশায়ার, ম্যাসাচুসেটস, কানেকটিকাট, রোড আইল্যান্ড, নিউইয়র্ক,
নিউ জার্সি, পেনসিলভানিয়া, ডেলেয়ার, ম্যারিল্যান্ড, ভার্জিনিয়া, নর্থ
ক্যারোলাইনা, সাউথ ক্যারোলাইনা ও জর্জিয়া। ১৭৭৬ সালের ২ জুলাই তারা
সম্মিলিতভাবে ‘ইউনাইটেড অব স্টেটস’ নামের দেশের ঘোষণা দেয়। ৪ জুলাই এ
ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়।
ফ্রান্স, স্পেন ও ডাচ প্রজাতন্ত্র ১৭৭৬ সালের
শুরুতে গোপনে বিপ্লবীদের রসদ ও অস্ত্র সরবরাহ করতে থাকে। স্পেন স্থল ও নৌ
ক্ষেত্রে মার্কিনিদের সহায়তা দিয়ে ব্রিটিশদের উত্তর আমেরিকা থেকে হটিয়ে
দেয়। ১৭৮১ সালে ব্রিটিশরা ভার্জিনিয়া দখলের চেষ্টা চালায় কিন্তু ফরাসি নৌ
বিজয়ের ফলে ফরাসি আমেরিকানরা ইয়র্কটাউন অবরোধ করে। এতে ৭০০০ এর বেশি
ব্রিটিশ সৈনিককে বন্দি করা হয়। ফলে যুদ্ধ এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে ব্রিটেনের
ইচ্ছায় পরিবর্তন আসে। ১৭৮২ সাল পর্যন্ত সীমিত আকারে লড়াই চলতে থাকে। ১৭৮৩
সালে স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। স্বাধীনতা
যুদ্ধে জয় পাওয়ার জন্য ২৫ হাজার বিপ্লবী আমেরিকানকে জীবন দিতে হয়। একইসঙ্গে
২৭ হাজার ব্রিটিশ ও জার্মান সেনার মৃত্যু ঘটে।
স্বাধীনতা যুদ্ধে
ভার্জিনিয়া ঔপনিবেশের জেনারেল জর্জ ওয়াশিংটন (আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট
১৭৮৯-১৭৯৭) ছিলেন প্রধান সেনাপতি। আর কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসের পাঁচজনের একটি
কমিটি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র রচনা করেন। টমাস জেফারসন, জন অ্যাডামস,
বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন ছিলেন এ কমিটির অন্যতম সদস্য। টমাস জেফারসন ছিলেন মূল
লেখক। রচিত ঘোষণাপত্রটি নিয়ে কংগ্রেসে তর্ক-বিতর্ক হয় এবং পরিশেষে সেটি
চূড়ান্ত রূপ লাভ করে।
‘প্রতিটি মানুষই সমান এবং একই সৃষ্টিকর্তার
সৃষ্টি’- এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার বাণী রচিত
হয়েছে। উল্লেখ্য, আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বিভিন্ন দেশের আরো অনেক
সমশ্রেণির দলিল প্রণয়নে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে এবং এর ধারণাসমূহ পরবর্তীসময়ে
ক্যারিবিয়ান, স্প্যানিশ আমেরিকা, বলকান, পশ্চিম আফ্রিকা, মধ্য ইউরোপসহ অন্য
দেশে ১৮৪৮ সাল পর্যন্ত অনুসৃত হয়।
অন্যদিকে আমেরিকার ইতিহাস থেকে
বিশ্বের অনেক দেশ নিজেদের শুধরে নিতে সক্ষম হয়েছে। ১৮৬৩ সালে প্রেসিডেন্ট
আব্রাহাম লিংকন দাস প্রথা বাতিল করেন, ১৮৭০ সালে কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকার
এবং ১৯২০ সালে নারীদের ভোটাধিকার দেওয়া হয়। ১৯৫০ সালের দিকে কালো লোকদের
ভালো স্কুলে যাওয়ার, ভালো রেস্টুরেন্টে খাওয়ার ও বাসে বসার অধিকার ছিল না।
মার্টিন লুথার কিংয়ের আন্দোলনের ফলে তারা সব অধিকার লাভ করে। এসব ঘটনা
বিশ্ববাসীকে মানুষের মর্যাদা রক্ষার জন্য অনুপ্রাণিত করেছে।
তিন.
২৪৮
বছরে উপনীত হয়ে স্বাধীনতা দিবসটি উদযাপনে বহুমাত্রিক বৈচিত্র্য এসেছে।
প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব জোয়ারে পুরোনো অনেক কিছুই এখনো বহাল
রয়েছে। সপ্তাহজুড়ে প্যারেডগুলো সম্পন্ন হয় সকালে, সন্ধ্যায় হয় আতশবাজি আর
পারিবারিক পুনর্মিলনী; রাত জেগে ওঠে সংগীতের মূর্ছনায়। কোনো কোনো শহরে
সুউচ্চ টাওয়ার থেকে আলোককিরণ ছড়িয়ে পড়ে গ্রীষ্মের বাতাসে। দিবসটিতে আপনি
শুনতে পাবেন দেশাত্মবোধক গান আর জাতীয় সংগীত, ‘গড ব্লেস আমেরিকা’, ‘আমেরিকা
বিউটিফুল’, ‘দিস ল্যান্ড ইজ ইয়োর ল্যান্ড’ স্লোগান। কখনো বা প্রত্যন্ত
অঙ্গরাজ্যের লোকায়ত সুরে যুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। প্রথম স্বাধীনতা
ঘোষণাকালে ছিল ১৩টি রাষ্ট্র; বর্তমানে আমেরিকার স্টেট ৫০টি। যুক্তরাষ্ট্র
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ; যার জনসংখ্যা ৩২ কোটি ৫০ লাখের বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরপূর্ব, দক্ষিণ, মধ্যপশ্চিম, দক্ষিণ-পূর্ব এবং
পশ্চিমাঞ্চলগুলোর রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ঐতিহ্য এবং রীতি। এ কারণেই
যুক্তরাষ্ট্র সাংস্কৃতিকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় দেশগুলোর একটি।
বিশ্বের
প্রায় প্রতিটি অঞ্চলের সংস্কৃতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংস্কৃতি প্রভাবিত
করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সংস্কৃতি সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে ইংরেজরা।
ব্রিটিশরা ১৬০০ খ্রিস্টাব্দ থেকেই সেখানে ঔপনিবেশ গড়ে তুলতে থাকে। এছাড়া
স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী (রেড ইন্ডিয়ান), লাতিন আমেরিকান, আফ্রিকান এবং
এশিয়ানরাও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করেছে।
আমেরিকার
স্বাধীনতা দিবসে কেন্দ্র থেকে প্রতিটি প্রান্ত জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহজুড়ে
থাকে ব্যস্ত। বছরের এ মাসে হয়তো একটানা তিনদিন ছুটি থাকে কিংবা
গ্রীষ্মাবকাশ শুরু হয়। ১৭৭৯ সালের ৪ জুলাই ছিল রোববার। এজন্য ৫ জুলাই ছুটি
দেওয়া হয়। ১৭৮১ সালের সর্বপ্রথম দিবসটি সাংবিধানিক স্বীকৃতি লাভ করে।
অন্যদিকে দিবসটিতে ১৭৮৩ সালে নর্থ ক্যারোলিনায় যে সংগীতানুষ্ঠানের সূচনা
হয়েছিল তা এখন পর্যন্ত প্রচলিত আছে। ১৮৭০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস
দিবসটিতে বিনা বেতনে ছুটি মঞ্জুর শুরু করলেও ১৯৩৮ সালে সেটি প্রত্যাহার করে
বেতনসহ দিবসটিতে ছুটি কার্যকর করা হয়। স্বাধীনতা দিবসকে কেন্দ্র করে
যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে উঠেছে উৎসবের নানামাত্রা।
এই দিবসে প্রায় চার কোটি ৮০
লাখ আমেরিকান নিজের বাড়ি থেকে শত মাইল দূরত্ব ভ্রমণ করে। স্বাধীনতা দিবসের
ছুটির সঙ্গে আরো কিছু দিন ছুটির ব্যবস্থা করে নিয়ে পুরো ফ্যামিলিসহ ট্রেন,
প্লেন বা অটোমোবাইলযোগে অন্য স্টেটের দর্শনীয় বস্তুগুলো, যেমন নায়াগ্রা
জলপ্রপাত, ডিজনি, ইয়োলস্টোন ন্যাশনাল পার্ক, স্যান্ডিয়েগো জু, সাউথ ডাকোটার
মাউন্ট রাশমোর, হাওয়াই দ্বীপ, আলাস্কা ইত্যাদি দেখতে বের হয়। কেউ কেউ অন্য
দেশ যেমন, কানাডা, মেক্সিকো, ইউরোপ প্রভৃতি ভ্রমণ করে। অনেকে সাউথ
আমেরিকার আর্জেন্টিনা, চিলি, পেরু, ব্রাজিলও যায়। অতি উৎসাহীরা আফ্রিকায়ও
ঢুঁ মেরে আসে।
বাচ্চাদের স্কুলের ছুটি থাকায় এ সময় অনেকে সপরিবারে তাদের
নিজেদের আদি দেশ যথা ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মিশর, ফিলিপাইন ইত্যাদি
বেড়িয়ে আসে। অনেকে স্থানীয় সিক্স ফ্ল্যাগ, সি ওয়ার্ল্ড, লোকাল জু, মিউজিয়াম
দেখতে যায়। আবার কেউ কেউ অনেক দিন ধরে সরিয়ে রাখা নিজেদের বাড়ির বিভিন্ন
অংশের বকেয়া মেরামত, পেইন্টিং, ডেক, রুম এডিশন, বেসমেন্ট ফিনিশিং ইত্যাদি
কাজগুলো সম্পন্ন করে। সারা বছরের সবচেয়ে প্রত্যাশিত ছুটির দিনগুলোর মধ্যে ৪
জুলাইয়ের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষের ছুটির মৌসুমটি বলতে গেলে সবচেয়ে আনন্দঘন
ও কর্মবহুল।
চার.
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে শেখ হাসিনা সরকারের নতুন
পথযাত্রা সামনে রেখে আমেরিকা-বাংলাদেশের নিবিড় সম্পর্ক তুলে ধরা দরকার। মনে
রাখা দরকার, বিএনপি-জামায়াতের লবিস্ট মারফ পাওয়া বিবরণ দিয়ে শেখ হাসিনার
শাসনকালকে মূল্যায়ন করা হলে তা বিভ্রান্তির জন্ম দেবে। বরং ২০২৪ সালে
অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের দিকে তাকালে কিংবা এদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি
বিবেচনায় নিলে উন্নয়নশীল এই দেশটির মহিমান্বিত রূপ উন্মোচন করা সম্ভব হবে।
এজন্য
আমেরিকার স্বাধীনতা দিবসে মনে রাখতে হবে- বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে
গৌরবান্বিত একটি দেশ। যেমন ব্রিটিশদের কাছ থেকে শুধু ভৌগোলিক স্বাধীনতা নয়
আমেরিকায় সেদিন উৎপাটিত হয়েছিল সব পরাধীনতার শৃঙ্খল, বহাল হয়েছিল
বাকস্বাধীনতা, পত্রিকা ও প্রকাশনার স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, এমনকি
কোনো আইন পরিবর্তনের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করার স্বাধীনতা পেয়েছিল সবাই,
আমেরিকায় বসবাসকারী প্রতিটি মানুষ, তেমনি পরিস্থিতি আজ বাংলাদেশেও
বিদ্যমান। অর্থাৎ নিজেকে প্রকাশ করার যে স্বাধীনতা, সংবাদপত্র,
রেডিও-টেলিভিশন তথা গোটা মিডিয়ার যে স্বাধীনতা তাও স্বীকৃতি পেয়েছে শেখ
হাসিনার শাসনকালে।
এখন বাংলাদেশের যে কোনো ব্যক্তি জানেন ধর্ম পালনে
রাষ্ট্র কাউকে বাধ্য বা নিষেধ করবে না। যে যার ধর্ম পালন করবে। নিরাপদে ও
নিশ্চিন্তে স্বাধীনভাবে নিজের ধর্ম পালনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মতো
বাংলাদেশও একমাত্র শান্তির ভূমি। প্রায় আড়াই’শ বছর ধরে নানা ধর্ম-বর্ণের
মানুষ আমেরিকায় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করে চলেছে যেমনটি গত সাড়ে ১৫ বছরে
বাংলাদেশের অবস্থা। এজন্য নির্বাচনে জয়ী আমেরিকার প্রেসিডেন্টের বক্তব্য হয়
এরকম- ‘আমি সব আমেরিকানের প্রেসিডেন্ট। ...আমি এজন্য এসেছি যেন আমরা
একসঙ্গে কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা
সবাই আমেরিকাকে গ্রেট করার জন্য কাজ করবো।’ বক্তব্যের এই স্পিরিট এসেছে
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র থেকে। একই ধরনের চেতনা রয়েছে
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রেও। এজন্য বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সুন্দর ও
বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সবসময়ের জন্য প্রশংসনীয়।
লেখক : বঙ্গবন্ধু
গবেষক, বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল
কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ এবং অধ্যাপক ও
চেয়ারম্যান, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।