সুস্থতা আল্লাহর বড় নেয়ামত। সুস্থ না থাকলে কোনো ভালো বা কল্যাণকর কাজ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব হয় না।
রাসুল (সা.) সব সময় সুস্থতার জন্য দোয়া করতেন। সাহাবায়ে কেরামকেও তিনি সুস্থতার জন্য দোয়া করার নির্দেশ দিতেন। রাসুল (সা.) বলেছেন,
আল্লাহর কাছে ক্ষমা, নিরাপত্তা ও সুস্থতা চাও, ঈমানের পর নিরাপত্তা ও সুস্থতাই সবচেয়ে উত্তম নেয়ামত। (সুনানে তিরমিযি, সুনানে নাসায়ি)
অসুস্থতা
আল্লাহর পরীক্ষা। অসুস্থ হলে বান্দা যদি অধৈর্য হয়ে হা-হুতাশ না করে
আল্লাহর কাছে রোগমুক্তি জন্য দোয়া করে, আল্লাহর ওপর ভরসা করে এবং তার রহমত
আশা করে, তাহলে অসুস্থ ব্যক্তির গুনাহ মাফ হয় ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। তাই
ধৈর্য ধারণ করতে পারলে অসুস্থতা আল্লাহর নেয়ামতও বিবেচিত হতে পারে।
আতা
ইবনে ইয়াসার (রহ.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে অসুস্থ অবস্থায় আল্লাহর
প্রশংসা করার ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
আল্লাহর কোনো বান্দা যখন রোগাক্রান্ত হয়, তখন
আল্লাহ তাআলা তার কাছে দুজন ফেরেশতা পাঠান এবং বলেন, রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে
কেউ দেখতে এলে সে তাদের কী বলে দেখ, যদি সে তাদের কাছে আল্লাহর প্রশংসা
করে, তাহলে ওই দুজন ফেরেশতা সে প্রশংসা নিয়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হয়।
আল্লাহ তো সে ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি জানেনই। তিনি বলেন, যদি আমি আমার ওই
বান্দাকে মৃত্যু দেই, তাহলে আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। আর যদি সুস্থ
করে দেই, তবে আগের চেয়ে উত্তম রক্ত-মাংস অর্থাৎ সুস্বাস্থ্য দান করবো এবং
তার গুনাহ মাফ করে দেব। (মুআত্তা মালেক)
তাই অসুস্থ অবস্থায় সঠিক
চিকিৎসা গ্রহণ ও সুস্থতার জন্য দোয়া করার পাশাপাশি আল্লাহর প্রশংসা করা
উচিত, আল্লাহর সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বিরক্তি বা হতাশা প্রকাশ করা ঠিক নয়।
অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া
কেউ
অসুস্থ হলে অন্যদের কর্তব্য তাকে দেখতে যাওয়া। মুসলিম ভাইয়ের একটি হক বা
অধিকার হলো অসুস্থতার সময় তাকে দেখতে যাওয়া, তার খোঁজ খবর নেওয়া ও তার
সুস্থতার জন্য দোয়া করা। রাসুল সা. বলেছেন,
এক মুসলিমের ওপর অপর
মুসলিমের হক পাঁচটি: সালামের জবাব দেওয়া, অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া, তার
জানাযার সঙ্গে যাওয়া, দাওয়াত কবুল করা এবং তার হাঁচির জবাব দেওয়া। (সহিহ
বুখারি, সহিহ মুসলিম)
অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া অত্যন্ত
ফজিলতপূর্ণ কাজ। আলী রা. বলেন, কেউ বিকেলে কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে
গেলে সত্তর হাজার ফেরেশতা তার সাথে রওয়ানা হয়, তারা তার জন্য ভোর হওয়া
পর্যন্ত ক্ষমা চাইতে থাকে এবং তার জন্য জান্নাতে একটি বাগান তৈরী করা হয়।
কেউ সকালে কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গেলে তার সাথেও সত্তর হাজার ফেরেশতা
রওয়ানা হয়, তারা সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে
এবং তাকেও জান্নাতে একটি বাগান দেওয়া হয়। (সুনানে আবু দাউদ)
আবু হোরায়রা রা. -থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসুল সা. বলেছেন,
যে
ব্যক্তি কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যায় বা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে
তার কোন দীনী ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করে, তাকে একজন ফেরেশতা ডেকে বলতে
থাকেন, মঙ্গলময় তোমার জীবন, মঙ্গলময় তোমার এই পথ চলা। তুমি তো জান্নাতে
তোমার আবাস নির্ধারণ করে নিলে! (সুনানে তিরিমিজি)