ঋণ পরিশোধ
জাকাতের অর্থ ব্যয়ের অন্যতম খাত। কোরআনে আল্লাহ তাআলা জাকাতের অর্থ ব্যয়ের
খাতসমূহের মধ্যে ঋণগ্রস্তদের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তাআলা
বলেন,
নিশ্চয় সদাকা হচ্ছে দরিদ্র ও অভাবীদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত
কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য; তা বণ্টন করা
যায় দাস আজাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্লাহর রাস্তায় এবং
মুসাফিরদের মধ্যে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী,
প্রজ্ঞাময়। (সুরা তওবা: ৬০)
জাকাত প্রদানকারী নিজে যদি জাকাত
গ্রহণের উপযুক্ত অর্থাৎ নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নয় এবং দারিদ্র্যের
কারণে ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না এমন ব্যক্তির কাছে টাকা পাওনা থাকে, তাহলে
জাকাতের টাকায় তার ঋণ পরিশোধ করতে পারবে। এ রকম ক্ষেত্রে প্রথম জাকাতের
টাকা ওই দরিদ্র ব্যক্তিকে দেবে, তারপর তার কাছ থেকে নিজের পাওনা আদায় করে
নেবে। জাকাতের টাকা তার হাতে দেওয়া জরুরি। জাকাতের টাকা তাকে না দিয়ে জাকাত
আদায়র নিয়তে ঋণ মাফ করলে জাকাত আদায় হবে না।
জাকাত প্রদানকারী ছাড়া
অন্য কেউ যদি কোনো দরিদ্র ব্যক্তির কাছে টাকা পাওনা থাকে, তাহলে জাকাত
প্রদানকারী ওই ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির অনুমতি নিয়ে জাকাতের টাকায় তার ঋণ পরিশোধ
করে দিলে জাকাত আদায় হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে জাকাত আদায়ের জন্য জাকাতের অর্থ
তার হাতে দেওয়া জরুরি নয়, তবে অনুমতি নেওয়া জরুরি। অনুমতি ছাড়া কারো ঋণ
পরিশোধ করলে জাকাত আদায় হবে না।
জাকাত ইসলামের ফরজ বিধান, ইসলামের
পঞ্চস্তম্ভের একটি। প্রত্যেক স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক ও সম্পদশালী মুসলমান
পুরুষ ও নারীর প্রতি বছর নিজের সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ
দরিদ্র-দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণের নিয়মকে জাকাত বলা হয়। শরিয়ত নির্ধারিত
সীমার বেশি সম্পদ হিজরি ১ বছর ধরে কারো কাছে থাকলে তাকে সম্পদশালী গণ্য করা
হয় এবং তার বর্ধনশীল সম্পদের ২.৫ শতাংশ বা ১/৪০ অংশ দান করতে হয়। কোরআনে
জাকাত শব্দের উল্লেখ এসেছে ৩২ বার, নামাজের পর জাকাতের কথাই সবচেয়ে বেশি
বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
আর তোমরা সালাত কায়েম কর ও যাকাত দাও
এবং যে নেক আমল তোমরা নিজদের জন্য আগে পাঠাবে, তা আল্লাহর নিকট পাবে।
তোমরা যা করছ নিশ্চয় আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা। (সুরা বাকারা: ১১০)
হিজরি
ক্যালেন্ডার হিসেবে প্রতি বছর একবার জাকাতের হিসাব করতে হয়। আমাদের দেশে
অনেকে রমজান মাসে জাকাতের হিসাব করে থাকেন। জাকাতের হিসাব করার পর সাথে
সাথে পুরো অর্থ আদায় করা জরুরি নয়, বরং ওই অর্থ সারা বছরই অল্প অল্প করে
আদায় করা যায়।