দোরিভাল
জুনিয়র কিছুটা হলেও চিন্তায় পড়তেই পারেন। ব্রাজিলের কোচ হিসেবে যাত্রাটা
ছিল সুন্দর। ইংল্যান্ডকে হারিয়েছেন তাদেরই মাটিতে। স্পেনের বিপক্ষে ৩-৩
গোলের ড্র দিয়ে নিজেদের নতুন যাত্রা শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিল ব্রাজিল।
মেক্সিকোর সঙ্গেও বিষ্ময়বালক এন্ড্রিকের গোলে এসেছিল জয়। রীতিমত উড়ন্ত
ছন্দে ছিল দোরিভালের ব্রাজিল।
কিন্তু কোপা আমেরিকা শুরুর আগে
যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ১-১ গোলের ড্র আর কোপার উদ্বোধনী সূচিতে
কোস্টারিকার বিপক্ষে ড্র খানিকটা হলেও ধাক্কা দিয়েছে দোরিভাল জুনিয়রের
পরিকল্পনাতে। এই দুই ম্যাচেই বোঝা গিয়েছিল লো-ব্লক ডিফেন্সের বিপক্ষে
ব্রাজিলকে এখনো বড় পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। ভোগাচ্ছে দলের বড় তারকা নেইমার
জুনিয়রের অনুপস্থিতি।
এরমাঝেই অবশ্য প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ৪-১ গোলের জয়
পেয়েছে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু পরের ম্যাচটাতেই বড় পরীক্ষা
দিতে হবে ব্রাজিলকে। এখনো কোপা আমেরিকায় কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত না করা
ব্রাজিল মুখোমুখি হবে টানা ২৫ ম্যাচ অপরাজিত থাকা কলম্বিয়ার।
দক্ষিণ
আমেরিকার ফুটবলে অনেকটা একক রাজত্ব ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার। উরুগুয়েকেও
রাখা যায় বড় দলের কাতারে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এসে বেশ ভালো রকমের জাদুই
দেখাচ্ছে কলম্বিয়া। একঝাঁক তরুণ আর পরীক্ষিত মুখেদের নিয়ে দারুণ এক দল গড়ে
তুলেছেন কলম্বিয়ার আর্জেন্টাইন কোচ নেস্টোর লরেঞ্জো। যে কোস্টারিকাকে গোল
দিতে ব্রাজিল হিমশিম খেয়েছে গত ম্যাচে তাদের জালে ৩ গোল পুরেছে লুইস
দিয়াজরা।
হামেস রদ্রিগেজের মতো অভিজ্ঞ ফুটবলার নেস্টোর লরেঞ্জোর অধীনে
নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন নতুন করে। কোপা আমেরিকায় করে ফেলেছেন ৩ অ্যাসিস্ট।
দলে আছেন লিভারপুলের বড় তারকা লুইজ দিয়াজ আর রাশিয়ান লিগ মাতানো জন
কর্ডোবা। মাঝমাঠে জেফেরসন লেরমা বড় তারকা। তবে রিচার্ড রিওস বা ম্যাথিউস
উরিবেও কম যান না। বর্তমানে দলটি আছে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের ১২তম স্থানে।
ব্রাজিলের
বড় সমস্যা দলে লো-ব্লক ভাঙার মতো কার্যকরী মিডফিল্ডারের অভাব। রদ্রিগোর
সঙ্গে ভিনিসিয়ুস কিংবা রাফিনহার চ্যানেল বন্ধ করতে পারলেই ভোগান্তিতে ফেলা
সম্ভব ব্রাজিলকে। নেইমার জুনিয়রের মতো সৃষ্টিশীল নাম্বার টেনের রোল
ভালোভাবেই মিস করছে তারা।
কোয়ার্টারে যাওয়ার লড়াইয়ে এই কলম্বিয়ার
বিপক্ষেই মাঠে নামবে তারা। যেখানে জয় ছাড়া ভিন্ন কিছু ভাবতে চাইবে না
দোরিভালের শিষ্যরা। ৩ ম্যাচ থেকে ৪ পয়েন্ট পেয়েছে ব্রাজিল। পরের ম্যাচে
হেরে গেলে এবং কোস্টারিকা প্যারাগুয়েকে হারালে বিপাকে পড়তে হবে তাদের। যদিও
ব্রাজিল ড্র করে ফিরলেও চলে যাবে কোয়ার্টারে। যদিও তাতে অপেক্ষা করছে আরও
বড় বিপদ।
ড্র করলে ব্রাজিল হবে ‘ডি’ গ্রুপের দ্বিতীয় দল। কোয়ার্টারে
খেলতে হবে ‘সি’ গ্রুপের সেরা দল উরুগুয়ের বিপক্ষে। মার্সেলো বিয়েলসার অধীনে
যে দলটি রীতিমত অপ্রতিরোধ্য। ২০২২ সালের বিশ্বকাপের পর উরুগুয়ের দায়িত্ব
নিয়ে তারুণ্যনির্ভর এক দল গড়েন ক্ষ্যাপাটে কোচ বিয়েলসা।
কোচদের কোচ
নামে পরিচিত বিয়েলসা তার দলে তুলে এনেছেন ফেডে ভালভার্দে, ম্যানুয়াল
উগার্তে, রোনাল্ড আরাউহো কিংবা ডারউইন নুনিয়েজের মতো ইউরোপ মাতানো
তারকাদের। সঙ্গে নিকোলাস ডে লা ক্রুজ, ফাকুন্দো পেলেস্ট্রিরা উরুগুয়ের
রসায়ন জমিয়েছেন বেশ। ১৯৬০ সালের পর থেকে প্রথম দল হিসেবে একইবছরে ব্রাজিল ও
আর্জেন্টিনা দুই দেশকেই হারিয়ে বিয়েলসার শিষ্যরা।
আর গ্রুপের সেরা হয়ে
উঠলে ব্রাজিলের সামনে পড়তে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কদিন আগেই যাদের
সঙ্গে ড্র করে ফিরতে হয়েছিল ভিনিসিয়ুস-রদ্রিগোদের। কোয়ার্টার পেরিয়ে
সেমিফাইনালে গেলেও এই তিন দলেরই কাউকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পাবে ব্রাজিল। সে
বিবেচনায় বেশ কঠিন সব প্রতিপক্ষের সামনেই পড়তে হচ্ছে সেলেসাওদের।