বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের আগের
কার্যালয় ছিল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামেই। ফিফার অর্থায়নে ২০০৩-০৪ সালের
দিকে মতিঝিলস্থ আরামবাগে নিজস্ব ভবন নির্মাণ করে বাফুফে। ফিফার শর্ত ছিল
ভবন নির্মাণের ব্যয় পেতে হলে জমির মালিকানা বা স্বত্ব নিশ্চিত করে এমন কাগজ
থাকতে হবে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ২৫ বছরের জন্য মতিঝিল ঝিলপাড় এলাকায় ৩৩
শতাংশ জায়গা বাফুফেকে দিয়েছিল।
২৫ বছরের চুক্তি প্রায় শেষের দিকে।
বাফুফে তাই নতুন করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে আবেদন করে। কয়েক মাস
পর্যালোচনার পর আজ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও বাফুফে দুই পক্ষের মধ্যে
সমঝোতামূলক চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এই চুক্তির আলোকে বাংলাদেশ ফুটবল
ফেডারেশন কিছু শর্তের মাধ্যমে আজ থেকে আগামী ৫০ বছর মতিঝিল আরামবাগস্থ
বিদ্যমান বাফুফে ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। ভূমি ব্যবহারকারী
হিসেবে কর ও অন্যান্য বিষয়াদি বাফুফেকেই বহন করতে হবে। এই ভূমিতে স্থাপনা ও
উন্নয়ন সংক্রান্ত কাজে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পূর্বানুমতি নিতে হবে
বাফুফেকে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পক্ষে সচিব আমিনুল ইসলাম ও বাফুফের পক্ষে
সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার এতে স্বাক্ষর করেন।
জাতীয় ক্রীড়া
পরিষদের সচিব আমিনুল ইসলাম বলেন, 'বাফুফের আবেদনের প্রেক্ষিতে
বিচার-বিবেচনা করে আগামী ৫০ বছর লীজ বৃদ্ধি করা হয়েছে। যাতে দেশের ফুটবলের
কর্মকান্ড ও উন্নয়ন আরো সহজ হয়।’ বাফুফের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার
বেশ বড় সময়ের জন্য লীজ পাওয়ায় খানিকটা নির্ভার, 'পাঁচ দশকের জন্য লীজ
পাওয়ায় এখন আমাদের ফিফা-এএফসির অনেক আনুষ্ঠানিকতা ও সাহায্য পেতে সহজ হবে।
পাশাপাশি কোনো স্থাপনা সম্প্রসারণ বা নতুন নির্মাণের ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রীয়
অনুমতিও সহজে মিলবে।’
বাফুফে ভবন চার তলা। নিচ তলা স্টোর ও গাড়ি
পার্কিংয়ে ব্যবহৃত। দ্বিতীয় তলা বোর্ড রুম, সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি, চার
সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কয়েকটি প্রশাসনিক কক্ষ রয়েছে। তৃতীয় তলায়
সম্মেলন কক্ষ, কোচিং-ট্যাকনিক্যাল, মার্কেটিং বিভাগের কক্ষ রয়েছে। চতুর্থ
তলায় নারী ফুটবলাররা ক্যাম্প করেন। ধীরে ধীরে বাফুফেতে নারী ফুটবলারদের
সংখ্যা বাড়ছে। চতুর্থ তলায় সংকুলান হচ্ছে না। উপরের এক তলা বৃদ্ধি বা
নিচতলায় মিডিয়া সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে ফেডারেশনের। লীজ বৃদ্ধি
হওয়ায় এখন সেটা করতে আর তেমন বাধা নেই। ভবনের সামনেও একটি মাঝারি আকারের
গালিচা রয়েছে। যেখানের এক অংশে সম্প্রতি জিম করেছে বাফুফে।
জাতীয় ক্রীড়া
পরিষদ বাফুফেকে ৩৩ শতাংশ জায়গা লীজ দিয়েছিল ২০০১ সালের দিকে। সেই জায়গার
উপর বাফুফে ফিফার অর্থায়নে ভবন নির্মাণ করে। ভবনটি বাফুফের অনেকটা স্থায়ী
সম্পদ। এত দিন বাফুফের আর্থিক প্রতিবেদনে ভবন সম্পদক হিসেবে কখনো দেখায়নি।
২০২৩ সালের অডিট রিপোর্টে প্রথমবারের মতো ভবনকে সম্পদ হিসেবে ৩ কোটি ২৬ লাখ
৯ হাজার ৭৯৪ টাকা দেখানো হয়েছে।
দেশের সকল ক্রীড়া স্থাপনার মালিকানা
ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।
ক্লাব-ফেডারেশনের অফিসসমূহ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের স্থাপনায় পরিচালিত।
বাফুফের মতো দেশের আরেক শীর্ষ ফেডারেশন ক্রিকেট বোর্ড ও মিরপুর শেরে বাংলা
স্টেডিয়াম জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের লীজকৃত। ২০০৬ সালে ১৫ বছরের জন্য দুই
পক্ষের মধ্যে চুক্তি হয়েছিল। ২০২১ সালে সেই চুক্তি শেষ হয়েছে। বিসিবির
আবেদনের প্রেক্ষিতে আরো ১৫ বছরের চুক্তিতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ লীজ বৃদ্ধি
করেছে। যদিও এখনো দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা স্মারক হস্তান্তর হয়নি।