স্কোরবোর্ডে
আজীবন লিখা থাকবে ডাক ওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে অস্ট্রেলিয়া ২৮ রানে হারিয়েছে
বাংলাদেশকে। আইসিসির বৃষ্টি আইনটাই এমন। অথচ ম্যাচের পর্যালোচনা করলে দেখা
মিলবে, বৃষ্টির আগেই পরাজয়ের ষোলোকলা পূর্ণ করেছে বাংলাদেশ।
অস্ট্রেলিয়ার
জন্য তখন জয় ছিল স্রেফ সময়ের ব্যাপার। স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস ক্রিকেট
স্টেডিয়ামে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ মাত্র ৮ উইকেটে ১৪০ রান করে। জবাবে
অস্ট্রেলিয়া ১১.২ ওভারে ২ উইকেটে ১০০ রান তুলে নেয়। জয় যখন উঁকি দিচ্ছিল
তখনই আকাশের মন খারাপ। শুরু হয় বৃষ্টি। শুরুতে অল্পসল্প বৃষ্টি হলেও এক
পর্যায়ে তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়। তাতে ম্যাচের ভাগ্য লিখা হয়ে যায়।
বৃষ্টি
আইনে অস্ট্রেলিয়া তখন ২৮ রানে এগিয়ে। আম্পায়াররা খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা
করলেন না। ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে অস্ট্রেলিয়াকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। তাতে
বিশ্বকাপের সুপার এইটের লড়াইটা দারুণভাবে শুরু করলো অস্ট্রেলিয়া।
সহজ
লক্ষ্য তাড়ায় ডেভিড ওয়ার্নারের ৫৩ রানের ইনিংস গড়ে দেয় পার্থক্য। ৩৫ বলে ৫
চার ও ৩ ছক্কায় খেলেন ফিফটি ছোঁয়া ইনিংস। এছাড়া ট্র্যাভিস হেড ২১ বলে ৩১
রান করেন ৩ চার ও ২ ছক্কায়। ৬৫ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন তারা। রিশাদ হোসেন
হেডকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন। এরপর অসি অধিনায়ক মার্সকেও টিককে দেননি এই লেগ
স্পিনার।
৪ রানের ব্যবধানে বাংলাদেশ ২ উইকেট তুলে নিলেও ওয়ার্নার ও
ম্যাক্সওয়েলের ব্যাটে দ্রুত লক্ষের পথে এগিয়ে যায় তারা। তাতে বৃষ্টির কারণে
ম্যাচ পণ্ড হয়ে গেলেও জিততে অসুবিধা হয়নি তাদের।
ব্যাটসম্যানদের পর
বোলাররাও খুব একটা ভালো করেনি। জাকেরের পরিবর্তে দলে ফেরা মাহেদী ৪ ওভারে
২২ রান দেন। তানজিম ১ ওভারে দেন ৯ রান। তাসকিন ১.২ ওভারে ২২ রান এবং
মোস্তাফিজ ২ ওভারে ২৩ রান দেন। প্রায় ১২ ওভার পেরিয়ে গেলেও সাকিবকে বোলিং
আনেননি শান্ত।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ওপেনিং জুটি
ভাঙে শূন্যরানে। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে রানের খাতা খোলার আগেই আউট তানজিদ
হাসান। পেসার মিচেল স্টার্কের বলে বোল্ড হন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। আরেক
ওপেনার লিটন দাস ব্যাটিংটাই যেন ভুলে গেছেন! ২৫ বলে ২ বাউন্ডারিতে ১৬ রান
আসে তার ব্যাট থেকে। তবুও ভালো দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে শান্তকে কিছুটা
সাহায্য করেছেন। ৫৮ রান আসে তাদের জুটি থেকে।
শান্ত চরম অফফর্ম থেকে
ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন। হ্যাজেলউডের বলে এগিয়ে এসে যে ছক্কাটি মেরেছেন
তাতে পেয়েছেন করতালি। এছাড়া ড্রাইভ, পুলে পাওয়া বাউন্ডারিগুলোও চোখে ভালো
লেগেছে। জাম্পার বলে এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে ৩৬ বলে ৪১ রান করেন ৫ চার ও ১
ছক্কায়। চারে রিশাদকে পাঠিয়ে বাংলাদেশক চমকে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু রিশাদ
পারেননি সুযোগ কাজে লাগাতে। ৪ বলে থেমে যান ২ রানে।
সেখান থেকে
বাংলাদেশের ইনিংস একাই টানেন তাওহীদ হৃদয়। সাকিব (৮), মাহমুদউল্লাহ (২),
মাহেদীরা (০) যখন সিঙ্গেল ডিজিটে আউট হন বড় পুঁজির আশা শেষ হয়ে যায়।
স্টয়েনিসকে পরপর দুই ছক্কা উড়ানো তাওহীদ ২৮ বলে করেন ৪০ রান। ২টি করে চার ও
ছক্কা আসে তার ব্যাট থেকে।
শেষ দিকে প্যাট কামিন্সের হ্যাটট্রিক
বাংলাদেশকে আটকে রাখতে বড় ভূমিকা রাখে। ১৮তম ওভারের শেষ দুই বলে
অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কামিন্স মাহমুদউল্লাহ ও মাহেদীকে
ফেরান। ২০তম ওভারের শুরুর বলে কামিন্সের শিকার তাওহীদ। ব্রেট লি ও নাথান
এলিসের পর বাংলাদেশের বিপক্ষে এটি অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের তৃতীয় হ্যাটট্রিক।
ব্রেট লি ২০০৭ বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করেছিলেন। এলিস ২০২১ সালে। আজ কামিন্স
বিশ্বকাপ মঞ্চে পেলেন তৃতীয় হ্যাটট্রিকের স্বাদ। ম্যাচসেরার পুরস্কারটা
পেয়েছেন এই পেসারই।