আমরা
এখন প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে। শত প্রতিযোগিতায় সফলতার প্রত্যাশায় আমরা।
বিশ্বের সব কিছু আজ প্রযুক্তি নির্ভর। ইচ্ছে করলেই মানুষ স্বল্প সময়ে ঘুরে
আসতে পারে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। প্রযুক্তিকে মানুষ এতটাই আয়ত্ত করেছে,
যা মানুষের অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবুও দুঃখজনক
হলে ও ধ্রুব সত্য আমরা নৈতিকতা বিবর্জিত হচ্ছি ধীরে ধীরে। মনুষ্যত্ববোধ,
মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ তো দূরের কথা বর্তমান যুব সমাজ যেন শৃঙ্খলা ভঙ্গের
প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে। আত্ম কলহে বেড়াজালে আজ যুব সমাজের সত্তা মন
মানসিকতা। তাইতো আজ যুব জনগোষ্ঠীর প্রয়োজন আত্মার প্রকৃত বিকাশ সাধন ও
উন্নয়ন এবং জাতি গঠনের দায়িত্ব হাতে নিতে ভিত্তি মজবুত করা।
সময়ের
প্রেক্ষাপটে যুব সমাজকে এ অন্ধকার থেকে মুক্তি দিতে পারে রোভারিং তথা রোভার
স্কাউট আন্দোলন। এটি একটি শিক্ষা, সেবা ও প্রশিক্ষণমূলক আন্দোলন। এর সাথে
সম্পৃক্ত থেকে নিজেকে চিনার মাধ্যমে যুগোপযোগী বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার
সুযোগ হয়। তাইতো বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে বিশ্বের ১০৫ টির দেশের কাব
স্কাউট, স্কাউট ও রোভার স্কাউটিং স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের
সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্কাউট দল থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
আত্ম-উন্নয়ন
কি? আত্ম বলতে সাধারণত নিজে বোঝায়, আর উন্নয়ন বলতে আমরা সেই সব পরিবর্তনকে
বুঝি যা ধাপে ধাপে উন্নতির দিকে অগ্রসর হয়। সকল উন্নয়নই পরিবর্তন কিন্তু
সকল পরিবর্তনই উন্নয়ন নয়, কেননা আত্মার বা মনের এমন পরিবর্তন ও পরিলক্ষিত
হতে পারে যা মনকে উন্নতির জন্য সহায়ক না হয়ে বরং মনকে পিছিয়ে দিতে পারে।
তবে শুধুমাত্র ঐসব পরিবর্তনকেই উন্নয়ন বলা যায়, যা ধারাবাহিক শৃঙ্খলার
পরিবর্তিত হয় এবং যার মাধ্যমে আত্মিক মানসিক ও নৈতিক অগ্রগতি সাধিত হয়।
এবার জাতি গঠন নিয়ে আলোচনা। জাতি গঠন বলতে একটি জাতি তথা দেশ, সমাজ বা
রাষ্ট্র সম্মানজনক অবস্থানে পৌঁছে দেয়া। সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক
সমৃদ্ধি সাধনের মাধ্যমে উন্নতর আত্মনির্ভরশীল জনগোষ্ঠী গড়ে তোলাই জাতি গঠন।
এবার
দেখা যাক রোভারিং কি? রোভারিং এমন একটি বিশ্বব্যাপী যুব আন্দোলন যার
লক্ষ্য হচ্ছে স্ব-স্ব দেশের যুব সমাজকে সৎ, আত্মনির্ভরশীল ও যোগ্য নাগরিক
হিসেবে গড়ে তোলা। যাতে করে তারা স্থানীয় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীয়
ভূমিকা পালনে সক্ষম হয়। সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্যই চাই দৈহিক ও
মানসিক বিকাশ। রোভারিং শরীর চর্চা থেকে শুরু করে সমস্ত কার্যক্রমের মাঝেই
এই বিকাশের ব্যবস্থা করা আছে। এতে জীবনের নানা দিক জানা যায়। চরিত্র গঠন
ব্যক্তিগত সততা, নিয়মানুবর্তিতা ইত্যাদি।
এছাড়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে
দৈহিক ও মানসিক শক্তির উন্মেষ ঘটে। এজন্যই রোভারিং ও চরিত্র গঠনমূলক
আন্দোলন। এই আন্দোলনের মাধ্যমে চরিত্র গঠনের কৌশলটা সহজে আয়ত্ত করা যায়।
এটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সংগঠন। এখানে স্বেচ্ছায় রোভারগণ সেবামূলক কাজ করে
থাকে। যেহেতু কোন ধর্মই অন্যায় প্রশ্রয় দেয় না। সেহেতু এ আন্দোলনে স্ব-স্ব
ধর্ম পালনের নির্দেশ দেয়া হয়ে থাকে। এটি ধর্মনিরপেক্ষ কিন্তু ধর্মহীন নয়।
এটি মূলত সমস্ত সম্প্রদায়িকতার উর্ধ্বে।
রোভারিং হচ্ছে যুদ্ধাঙ্গনে
সেবার আদর্শে অনুপ্রাণিত ভ্রাতৃত্ব বিশেষ করে পরিভ্রমণকারী রোভাররা ঘরের
কোনে বসে থাকতে পারে না। তারা বাইরের প্রবাহমান সমাজ পরিবেশ প্রকৃতির
আহবানে সাড়া দিয়ে প্রবল আগ্রহে জ্ঞান অর্জন করে থাকে।
রোভার স্কাউট এর
প্রোগ্রাম পর্যবেক্ষণ করলেই দেখা যাবে স্কাউটিং জীবনের সাথে কতটা সম্পৃক্ত।
রোভাররা সহচর থেকে শুরু করে সেবা স্তর পর্যন্ত বিভিন্ন পাদর্শিতা ব্যাজ
অর্জন করতে হয়। এখান থেকে দেখা যায়, যে নানা রকম প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা
অর্জনের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা একজন রোভারের জীবন হয় গতিশীল ও সুন্দর।
একজন
যুবক তার দৈনন্দিন জীবনে মদ, নারী, জুয়া শঠতা ও নাস্তিকতার যে কোন একটি
প্রতিবন্ধকতার সংস্পর্শে পেলে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া তার পক্ষে অত্যন্ত
কষ্টকর হয়ে পড়ে। জীবনের লক্ষ্যে পৌছানো অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এরূপ
ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখা যায় জীবনের গতিধারা বাধাগ্রস্থ হয়ে অপ্রত্যাশিত দিকে
মোড় নেয়। তাই একজন যুবককে এ বাধাসমূহ অতিক্রম করে জীবনের নির্দিষ্ট লক্ষ্যে
পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে রোভার স্কাউটিং আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ব্যাডেন
পাওয়েলের মূল চিন্তা ধারার উপর ভিত্তি করে রোভার প্রোগ্রাম প্রতিষ্ঠিত।
মানুষ
সামাজিক জীব বলেই সমাজের উন্নতি বা অবনতিতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত।
সমাজে যত উন্নত পরিবেশ বিরাজ করবে ততই সমাজে বসবাসকারী মানুষ সুন্দর
পরিবেশ বাস করতে পারবে। এর জন্য দরকার সমাজের উন্নয়ন। আর সমাজের পরিবর্তন ও
উন্নয়নের সুযোগ এনে দিতে পারে রোভারিং। রোভাররা বাহিরের মুক্ত অঙ্গনে
কাজের অভ্যস্ত থাকে। বাইরের জগৎ, বাইরের প্রকৃতি, বাইরের বিশাল রহস্যময় এ
জ্ঞানপূর্ন পরিবেশ থেকে জ্ঞান অর্জন করে থাকে।
যা নিজ জীবনে এর বাস্তব
প্রয়োগের মাধ্যমে রোভাররা হয়ে উঠে যোগ্য নাগরিক। তাই আমরা প্রত্যাশা করি
অধিক সংখ্যক যুব সম্প্রদায় রোভারিং আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে নিজেকে
চিনার মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল হয়ে দেশ তথা জাতির কল্যাণে এগিয়ে আসবে।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, কুমিল্লা আইডিয়াল কলেজ, বাগিচাগাঁও, কুমিল্লা।