বাংলাদেশ নারী ও
পুরুষ হকি দল জুনিয়র এএইচএফ কাপে অংশ নেবে। এই টুর্নামেন্ট উপলক্ষ্যে
প্রায় এক মাস প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ। পুরুষে ৩৮ ও নারী দলে ৩২ জন
খেলোয়াড় ছিলেন অনুশীলনে। দুই দলের কোচ ১৮ জন করে খেলোয়াড় চূড়ান্ত করেছে। আজ
ফেডারেশন সেই তালিকা প্রকাশ করেছে।
প্রস্তুতি এক মাস আগে শুরু করলেও
টুর্নামেন্টে শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। দুই দলের খেলোয়াড়,
কোচিং স্টাফ সব মিলিয়ে ৪০ এর বেশি কন্টিনজেন্ট। বিমান ভাড়াই প্রায় ৩০ লাখ
টাকা। দেশে প্রশিক্ষণ, সিঙ্গাপুরে আবসান ও অন্যান্য খাতে আরো অনেক ব্যয়
রয়েছে। সব মিলিয়ে অর্ধ কোটির উপর খরচ এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণে। হকি
ফেডারেশন বেশ ঝুঁকি ও দেনা করেই সিঙ্গাপুরে দুই দল পাঠাচ্ছে। ১২ জুন রাতে
নারী ও পুরুষ দুই দল একত্রে দেশ ত্যাগ করবে।
ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক
মমিনুল হক সাঈদ আজ হজ্বব্রতে রওনা হয়েছেন। ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক এহসান
রানা আর্থিক বিষয়ে বলেন,‘বিমান টিকিট সাধারণ সম্পাদক ব্যবস্থা করেছেন। যা
দুই মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। ফেডারেশনের অ্যাকাউন্টে যা ছিল সেই
অর্থের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক নিজেও অর্থ দিয়েছেন এ নিয়ে সিঙ্গাপুর আবাসন ও
খাবার হবে। এশিয়ান হকি ফেডারেশনকে অনুরোধ করা হয়েছে লোকাল যাতায়াতে সহায়তা
করার জন্য। ’
ফেডারেশনের আর্থিক সংকট এতটাই যে কোচিং স্টাফরা এখনো
সম্মানী পাননি। এমনকি ফেডারেশনে যারা স্টাফ রয়েছেন তাদের বেতন-বোনাসও এখনো
হয়নি। ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদকের তথ্য অনুযায়ী, ফেডারেশনের সঞ্চয়ী ব্যাংক
অ্যাকাউন্টে অর্থ একেবারে শেষের দিকে। হকি অঙ্গনে গুঞ্জন রয়েছে, ফেডারেশন
স্থায়ী আমানতের অর্থ উঠিয়ে খরচ শুরু করেছে। তবে সেটি গুঞ্জন বলে আখ্যায়িত
করে যুগ্ম সম্পাদক বলেন,‘স্থায়ী আমানত খরচ করা হয়নি।’
হকি ফেডারেশনের
আর্থিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে অনেক। সেই সীমাবদ্ধতার মধ্যেই জুনিয়র এশিয়া কাপের
নারী ও পুরুষ দুই দলেরই এন্ট্রি দিয়েছে। ফেডারেশন কর্তাদের ভরসা ছিল জাতীয়
ক্রীড়া পরিষদ, মন্ত্রণালয়, স্পন্সর বা ক্রীড়াপ্রেমী বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ
থেকে আর্থিক সহায়তা পাওয়ার। বেশ কয়েক জায়গায় চিঠি চালাচালি ও দৌড়ঝাপ করে
ব্যর্থ হয়েছে ফেডারেশন। টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ না করলে আবার জরিমানার
শঙ্কা। তাই বাধ্য হয়েই দল পাঠাতে হয়েছে।
বাংলাদেশের হকিতে একই সঙ্গে
নারী ও পুরুষ দুই দলের দেশ ত্যাগের নজির ইতোপূর্বে নেই। বাংলাদেশ হকি
ফেডারেশনের নির্বাহী সদস্য ইউসুফ আলী দীর্ঘদিন হকির সঙ্গে জড়িত। সাবেক
খেলোয়াড় ও বর্ষীয়ান ক্রীড়া সংগঠক এই সফরকে বিশেষ হিসেবেই আখ্যায়িত
করলেন,‘হকিতে কখনো নারী ও পুরুষ দল একসঙ্গে বাইরে খেলতে যায়নি। এটা অবশ্যই
বিশেষ সফর বাংলাদেশের হকির জন্য।’
গত বছর ওমানে ফাইভ এ সাইড হকিতে
বাংলাদেশ নারী ও পুরুষ উভয় দল অংশগ্রহণ করেছিল। সেই টুর্নামেন্টে দুই দল
ভিন্ন ভিন্ন সময়ে গিয়েছিল। ফাইভ এ সাইড হকির খেলোয়াড় সংখ্যাও কম। জুনিয়র
এশিয়া কাপের টুর্নামেন্টের দল ও খেলার পরিধি স্ট্যান্ডার্ড। তাই হকি
ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক জাতীয় খেলোয়াড় মাহবুব এহসান রানা আসন্ন
সফরকে ঐতিহাসিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন,‘ আমরা নারী হকি নিয়েও কাজ করছি।
ঘরোয়া পর্যায়ের পাশাপাশি তাদের আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। শত
সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা নারী ও পুরুষ দুই দলই পাঠাতে পারছি এটা একটা
ঐতিহাসিক বিষয় এবং আমাদের কমিটির কৃত্তিত্ব।’
১৪ জুন সিঙ্গাপুরে জুনিয়র
এএইচএফ কাপ শুরু হবে। বাংলাদেশের এ গ্রুপে রয়েছে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড,
শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়া। দুই গ্রুপের দুই শীর্ষ দল সেমিফাইনাল
খেলবে। নারী বিভাগে গ্রুপিং নেই। চাইনিজ তাইপে, হংকং, থাইল্যান্ড,
সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া ও শ্রীলঙ্কা একে অন্যের সঙ্গে খেলবে। বাংলাদেশ
পুরুষ দল গত আসরের চ্যাম্পিয়ন।
আশি-নব্বইয়ের দশকে ফুটবলের পরই
জনপ্রিয়তা ছিল হকির। কালের বিবর্তনে সেই হকি এখন অন্য অনেক খেলার চেয়ে
পিছিয়ে। আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও সাংগঠনিক ব্যর্থতায় সম্ভাবনাময় খেলাটি
পরিস্ফুটিত হতে পারেনি। বিশেষ করে ফেডারেশনে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে
ক্লাবগুলো দ্বিধা-বিভক্ত থাকে। যার প্রভাব পড়ে পুরো হকিতে। গত বছর
ফেডারেশনে নির্বাচনে নজিরবিহীনভাবে আবাহনী, মোহামেডান, মেরিনার, উষা মমিনুল
হক সাঈদকে সাধারণ সম্পাদকে সমর্থন দিয়ে এক প্যানেলের সমঝোতার কমিটি করেছে।
সেই সমঝোতা অবশ্য নির্বাচন বৈতরণী পার হওয়া পর্যন্তই। এর পরই পক্ষ-বিপক্ষ
তৈরি হয়েছে ধীরে ধীরে। হকি ও ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন এমন অনেকে
কমিটিতে আছেন। তাদের নিয়েছিল আর্থিক প্রয়োজনে সহায়তা পাওয়ার জন্য। সেই আশা
এখন দুরাশায় পরিণত হয়েছে। কমিটির মেয়াদ মাত্র এক বছর পেরিয়েছে আরো তিন বছর
কিভাবে পার করে সেটাই দেখার বিষয়।