নিউ 
জিল্যান্ডকে ৭৫ রানে অলআউট করে ৮৪ রানের জয়ে চমকে দিলো আফগানিস্তান। এর আগে
 দুই দল কেবল একবারই টি-টোয়েন্টি খেলেছিল ২০২১ সালে। সেটাও ছিল টি-টোয়েন্টি
 বিশ্বকাপে। তিন বছর পর দ্বিতীয় দেখায় আফগানিস্তান নিলো মধুর প্রতিশোধ। 
তাতে কিউদের এবারের বিশ্বকাপ যাত্রাটা শুরু হলো বিব্রতকর এক পরাজয় দিয়ে। 
অবশ্য আফগানিস্তান এই ম্যাচ যেভাবে খেলেছে, দোর্দা-প্রতাপ দেখিয়েছে তাতে 
নিউ জিল্যান্ড স্রেফ উড়ে গেছে বললেও ভুল হবে না। বরং আফগানিস্তানকেই 
শক্তিশালী মনে হয়েছে।
গায়ানায় আগে ব্যাটিং করে আফগানিস্তান ৬ উইকেটে ১৫৯
 রান সংগ্রহ করে। জবাবে রশিদ খানের ঘূর্ণি ও ফারুকির পেসে মাত্র ৭৫ রানে 
গুটিয়ে যায় নিউ জিল্যান্ড। ৮৪ রানের জয়ে আফগানিস্তান বিশ্বকাপের টানা 
দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়েছে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এর চেয়েও কম রানে আউট 
হওয়ার রেকর্ড রয়েছে নিউ জিল্যান্ডের। ২০১৪ সালে চট্টগ্রমে শ্রীলঙ্কার 
বিপক্ষে মাত্র ৬০ রানে অলআউট হয়েছিল। যা তাদের এই ফরম্যাটে সর্বনি¤œ রানও।
আফগানিস্তানের
 ব্যাটিং ইনিংস ছিল অনেকটা বিস্ময়কর। শুরুর ১০ ওভারে তাদের রান বিনা উইকেটে
 ৫৫। পরের ১০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১০৪। সব মিলিয়ে ২০ ওভারে পুঁজি ১৫৯ রান।
 শুরুটা মনঃপূত না হলেও শেষটা হয়েছে দারুণ। শেষের ঝড়ে চ্যালেঞ্জিং পুঁজি 
পায় রশিদ খানরা। উদ্বোধনী জুটিতে আফগানিস্তান আবারও সেঞ্চুরির দেখা পায়। 
রহমানুল্লাহ গুরবাজ পান টানা দ্বিতীয় ফিফটির স্বাদ।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে 
নেমে পাওয়ার প্লে’ ঠিক মতো কাজে লাগিয়ে গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান ৪৪ রান 
যোগ করেন। উইকেট আগলে, কোনো ঝুঁকি ছাড়া দুই ডানহাতি ব্যাটসম্যান রান তুলতে 
থাকেন। তাতে শেষ দিকে লাভ হয়েছে ঠিকই। কিন্তু ৬-১০ ওভারে রানের চাকা যেন 
থেমে ছিল। স্পিনার ব্রেসওয়েল ও পেসার ফার্গুসনের পরপর দুই ওভারে যোগ হয় 
কেবল ১১ রান। সেখানেই আফগানিস্তান খানিকটা ভুগতে থাকে।
এরপর পাশার দান 
পাল্টে যায়। ১১-১৪ এই ৪ ওভারে আফগানিস্তানের দুই ব্যাটসম্যান তোলেন 
যথাক্রমে ২১, ১০, ১১ ও ৫ রান। ১৪তম ওভারে তাদের রান শতকের ঘর ছুঁয়ে ফেলে। এ
 সময়ে তাদের ব্যাট থেকে আসে পাঁচ ছক্কা। প্রতি আক্রমণে গিয়ে তারা শুধু 
বাউন্ডারি মারেননি, রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে ছিলেন দারুণ। দলের সেঞ্চুরির 
সঙ্গে গুরবাজ ৪০ বলে তুলে নেন ফিফটি। সঙ্গে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে দুই 
উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের জুটির রান শতক ছুঁয়ে ফেলে।
বড় রানের জন্য 
আক্রমণাত্মক ব্যাটিং ছিল একমাত্র ভরসা। সেই কাজটাই শেষ দিকে করতে গিয়ে 
দ্রুত উইকেট হারায় আফগানরা। তবে রানও এসেছে। ১৫তম ওভারে ইব্রাহিমকে ৪৪ রানে
 ফিরিয়ে নিউ জিল্যান্ডকে প্রথম সাফল্য এনে দেন পেসার হেনরি। আজমতউল্লাহ 
ক্রিজে এসে ২ ছক্কা ও ১ চারে ১৩ বলে ২২ রান করেন চোখের পলকে। তাকেও থামান 
হেনরি। মোহাম্মদ নবী ও রশিদ খান ক্রিজে গিয়ে তেমন কিছু করতে পারেননি। নবী 
রানের খাতা খোলার আগেই আউট। আফগানিস্তানের অধিনায়ক রশিদ করেন ৬ রান।
আফগানিস্তান
 তাকিয়ে ছিল গুরবাজের দিকে। হতাশ করেননি এই ব্যাটসম্যান। শুরুর মতো শেষ 
দিকেও দায়িত্ব সামলেছেন ঠিকঠাক। শেষ ওভারে সাজঘরে ফেরার আগে ৫৬ বলে ৮০ রান 
করেন। ৫টি করে চার ও ছক্কায় সাজান তার ইনিংসটি। শেষ ওভারে ট্রেন্ট বোল্ট ২ 
উইকেট নিয়ে রানের চাকা থামিয়ে রাখেন। নয়তো আরো দূরে যেতে পারত তাদের রান। 
বল হাতে বোল্ট ও হেনরি ২টি করে উইকেট নেন। ১ উইকেট পেয়েছেন ফার্গুসন।
টি-টোয়েন্টি
 ১৬০ রানের সমীকরণ মেলানো খুব কঠিন বিষয় না। কিন্তু প্রতিপক্ষ দলে যখন 
ফারুকি, রশিদ, নূর, নবীর মতো বোলার থাকে তখন কাজটা কঠিন হয়ে যাওয়া 
স্বাভাবিক বিষয়। পেসার ফারুকি প্রথম বলে ফিন অ্যালেনকে বোল্ড করে শুরুতেই 
দলকে এগিয়ে নেন। বাঁহাতি পেসার পরের ২ ওভারে তুলে নেন আরো ২ উইকেট। তাতে 
পাওয়ার প্লে’তে নিউ জিল্যান্ড ৩ উইকেট হারিয়ে তুলতে পারে মাত্র ২৮ রান।
শুরুর
 ওই ধাক্কার পর আফগান বোলিং সামলাতে পারেনি কিউইরা। রশিদ খান বোলিংয়ে এসে 
তাদের আরো কঠিন পরীক্ষায় ফেলেন। স্পেলের প্রথম বলেই তার শিকার কিউই অধিনায়ক
 কেন উইলিয়ামসন। এক ওভার পর টানা দুই উইকেট তুলে নিয়ে হ্যাটট্রিকের 
সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলেন। এছাড়া নবী বোলিংয়ে এসে দশম ওভারে নেন ফিলিপসের 
উইকেট। ইনিংসের অর্ধেকতম ওভারে নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটিং স্কোরবোর্ডের 
চিত্রটা ছিল এরকম, ৫৪/৭।
সেখান থেকে আর ফিরে আসতে পারেনি কিউইরা। পরের 
ব্যাটসম্যান স্কোরবোর্ডে অল্প কিছু রান যোগ করে পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়েছে। 
ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়ে দাপট দেখিয়ে আফগানিস্তান যেভাবে ম্যাচ জড়িয়েছে তাতে 
নিউ জিল্যান্ডকে বেশ অসহায়ই লাগছিল। 
ফারুকি ৩.২ ওভারে ১৭ রানে ৪ উইকেট 
নেন। রশিদ একই রানে পেয়েছেন সমান ৪ উইকেট। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এটাই কোনো
 অধিনায়কের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড। এর আগে ড্যাটিয়েল ভেট্টরি ২০ রানে ৪ 
উইকেট পেয়েছিলেন। এদিকে ফারুকি প্রথম আফগানিস্তান পেসার হিসেবে বিশ্বকাপে 
টানা দুই ম্যাচে ৪ বা তার বেশি উইকেট নেওয়ার কীর্তি দেখিয়েছেন।
 বিজয়ের 
হাসি হাসা আফগানিস্তানের জয়ের নায়ক রহমানউল্লাহ গুরবাজ। টানা দুই ফিফটিতে 
উড়ছেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। সামনে তার ব্যাট হাসলে হাসবে আফগানিস্তানও 
তা বলতে দ্বিধা নেই কারো।
                                                                                
