টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ছক্কাবৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্রকে জেতালেন অ্যারন জোন্স।
চাপের
মুখে ক্রিজে গিয়ে শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং করলেন অ্যারন জোন্স। একের পর
এক বাউন্ডারিতে দলকে এগিয়ে নিলেন যুক্তরাষ্ট্রের মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান।
শেষ পর্যন্ত নিখিল দত্তের বল ছক্কায় উড়িয়ে বিশ্বকাপের স্বাগতিকদের রেকর্ড
গড়া জয় এনে দিলেন জোন্স।
ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে
বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে কানাডাকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
জোন্সের ৪০ বলে ৯৪ রানের ঝড়ে ১৯৫ রানের লক্ষ্য ১৪ বল বাকি থাকতেই ছুঁয়ে
ফেলেছে স্বাগতিকরা।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এর চেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়
আছে আর মাত্র দুটি। ২০১৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের ২৩০
রান ও ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার ২০৬ রান।
আন্তর্জাতিক
টি-টোয়েন্টিতে এটিই যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়। গত এপ্রিলে
কানাডার বিপক্ষে ১৬৯ রানের লক্ষ্যে ৪ উইকেটে জিতেছিল তারা।
বিশ্বকাপে
কোনো আইসিসি সহযোগী সদস্য দেশের এটিই সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর। প্রথম ইনিংসে
নেদারল্যান্ডসের ২০১৪ সালে ১৯৩ রান টপকে রেকর্ডটি নিজেদের করেছিল কানাডা।
ঘণ্টা দুইয়ের ব্যবধানে তা কেড়ে নেয় যুক্তরাষ্ট্র।
স্বাগতিকদের রেকর্ড
গড়া জয়ের মূল কারিগর জোন্স। ৪০ বলের ইনিংসে ৪টি চারের সঙ্গে তিনি মারেন
১০টি ছক্কা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এক ইনিংসে এর চেয়ে বেশি ছক্কা শুধু
ক্রিস গেইলের। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১১টি।
জোন্সকে দারুণ সঙ্গ
দেন আন্দ্রিয়েস হাউস। ৪৬ বলে ৬৫ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। ৪২ রানে ২ উইকেট
পড়ার পর মাত্র ৫৮ বলে ১৩১ রানের জুটি গড়ে তোলেন হাউস ও জোন্স। সম্মিলিত
তা-বে জয়ের জন্য ৭২ বলে ১৪৭ রানের সমীকরণকে ৩০ বলে ২৭ রানে নামিয়ে আনেন
তারা দুজন!
যে কোনো উইকেটে এটিই যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ রানের
জুটি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তৃতীয় উইকেটে এর চেয়ে বড় জুটি আছে আর একটি।
২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের অ্যালেক্স হেলস ও ওয়েন মরগ্যানের
১৫২ রান।
বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম ওভারেই স্টিভেন টেইলরের উইকেট হারায়
যুক্তরাষ্ট্র। পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পর ১৬ বলে ১৬ রান করে ফেরেন আরেক
ওপেনার মোনাঙ্ক প্যাটেল। ৮ ওভারে স্বাগতিকদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৪৮
রান।
সেখান থেকেই শুরু হাউস ও জোন্সের ঝড়। পরের ৬ ওভারে আসে যথাক্রমে
১৯, ১৪, ১০, ১৫, ২০ ও ৩৩ রান। চাপের মুখে পাল্টা আক্রমণে ছয় ওভারে ১১১ রান
নেন হাউস ও জোন্স। পুরোপুরি বদলে যায় ম্যাচের গতিবিধি।
নবম ওভারে প্রথম
আক্রমণে এসে প্রথম ডেলিভারি 'নো' বল করেন নিখিল। ফ্রি হিটে করেন ওয়াইড বল।
বৈধ ফ্রি হিট বলে ছক্কায় ওড়ান হাউস। দুই বল পর স্লগ সুইপে আরেকটি ছক্কা
মারেন জোন্স।
এরপর আর থামাথামি নেই। প্রতি ওভারে ছক্কা মারতে থাকেন দুই
ব্যাটসম্যান। ক্রয়োদশ ওভারে কানাডা অধিনায়ক সাদ বিন জাফরের বলে ৩টি ছক্কা
মারেন জোন্স। মাত্র ২২ বলে পৌঁছে যান পঞ্চাশে। যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে যা
দ্রুততম।
সবচেয়ে বেশি তা-ব বয়ে যায় জেরেমি গর্ডনের ওপর। চতুর্দশ ওভারে ৩
ছক্কা ও ২ চারে ৩৩ রান দেন তিনি। ওভারের তৃতীয় বলে হাউসকে ডিপ মিড উইকেটে
ক্যাচে পরিণত করেন গর্ডন। কিন্তু ‘নো’ বল হওয়ায় বেঁচে যান আগের বলে পঞ্চাশ
ছোঁয়া হাউস।
সব মিলিয়ে ওই ওভারে ১১টি বল করেন গর্ডন। বিশ্বকাপে এক
ওভারে এর চেয়ে বেশি রান খরচের রেকর্ড শুধু স্টুয়ার্ট ব্রডের। ২০০৭
বিশ্বকাপে ইংলিশ পেসারের বলে ছয় ছক্কায় ৩৬ রান নেন ইউভরাজ সিং।
পঞ্চদশ
ওভারে জোন্সকে ফেরানোর সম্ভাবনা জাগান কালিম সানা। কিন্তু শর্ট থার্ড
ম্যানে ক্যাচ নিতে পারেননি নিখিল। ৭১ রানে বেঁচে যান জোন্স। পরে হাউসকে
ফিরিয়ে নিখিলই ভাঙেন রেকর্ড জুটি। ৭ চারের সঙ্গে ৩ ছক্কা মেরে ফেরেন হাউস।
জুটি
ভাঙলেও অবশ্য তাতে কোনো লাভ হয়নি কানাডার। যে নিখিলের ওভারে ঘুরে দাঁড়ানোর
শুরু, পরে সেই নিখিলের বলে ছক্কা মেরেই ম্যাচ শেষ করেন জোন্স।
এর আগে
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম বলে চার মারেন অ্যারন জনসন। আরেক ওপেনার
নাভনিত ধালিওয়াল দেখেশুনে খেললে উদ্বোধনী জুটিতে ৪৩ রান পায় কানাডা।
বাউন্ডারিতে
শুরুর পর তৃতীয় ওভারে আলি খানের বলে তিনটি চার মারেন জনসন। পাওয়ার প্লের
শেষ ওভারে ফেরেন ১৬ বলে ২৩ রান করা জনসন। তিন নম্বরে নেমে পারগাত সিং টিকতে
পারেননি। তৃতীয় উইকেটে নিকোলাস কার্টনকে নিয়ে ৩৭ বলে ৬২ রানের জুটি গড়ে
তোলেন ধালিওয়াল। বড় সংগ্রহের ভিত পেয়ে যায় কানাডা।
১৫তম ওভারে কোরি
অ্যান্ডারসনের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অফে ক্যাচ দেন ৪৪ বলে ৬১ রান করা
ধালিওয়াল। ৬ চারের সঙ্গে ৩টি চার মারেন তিনি। এরপর দলকে দেড়শ পার করিয়ে
থামেন কার্টন। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটির ইনিংসে ৩ চার ও ২
ছক্কায় ৩৩ বলে ৫১ রান করেন ২৬ বছর বয়সী বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। শেষ দিকে
দুটি করে চার-ছক্কায় ১৬ বলে ৩২ রান করেন মোভা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
কানাডা:
২০ ওভারে ১৯৪/৫ (জনসন ২৩, ধালিওয়াল ৬১, পারগাত ৫, কার্টন ৫১, মোভা ৩২*,
দিলপ্রিত ১১, হেলিগার ১*; আলি ৪-০-৪১-১, নেত্রাভালকার ২-০-১৬-০, হারমিত
৪-০-২৭-১, জাসদিপ ৩-০-২৪-০, শাকউইক ৩-০-৩৪-০, টেইলর ১-০-১৫-০, অ্যান্ডারসন
৩-০-২৯-১)
যুক্তরাষ্ট্র: ১৭.৪ ওভারে ১৯৭/৩ (টেইলর ০, মোনাঙ্ক ১৬,
হাউস ৬৫, জোন্স ৯৪*, অ্যান্ডারসন ৩*; সানা ৪-০-৩৪-১, গর্ডন ৩-০-৪৪-০,
হেলিগার ৩-০-১৯-১, সাদ ৪-০-৪২-০, নিখিল ২.৪-০-৪১-১, পারগাত ১-০-১৫-০)
ফল: যুক্তরাষ্ট্র ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: অ্যারন জোন্স