হিজরতের আগে প্রতি
সোম ও বৃহস্পতিবার কাবার দরজা খোলা হতো। এ দু’দিন লোকেরা আল্লাহর ঘরে
প্রবেশের সৌভাগ্য লাভ করতো। একদিন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কয়েকজন সাহাবাকে নিয়ে বায়তুল্লায় প্রবেশ করতে চাইলেন।
কিন্তু বাধা হয়ে
দাঁড়ালেন কাবার চাবির দায়িত্ব পালন করা উসমান ইবনে তালহা, তিনি তখনও
মুসলমান হননি। তাই নবীজির প্রতি মক্কার অন্যান্য অমুসলিমদের মতো স্বভাব
সূলভ শত্রুতার কারণে রাসূল সা.-কে সেদিন কাবার চাবি দেননি তিনি।
নবী
করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধৈর্যের সঙ্গে উসমানের বাধা মেনে
নিলেন। সেই সঙ্গে বললেন, ‘উসমান! একদিন তুমি এই চাবি আমার হাতে দেখতে পাবে।
আমি তখন যাকে ইচ্ছে চাবিটা দেব।’
এরপর অনেক দিন কেটে যায়। উসমান ইবনে তালহা এক সময় ইসলাম কবুল করেন।
এরপর
মক্কা বিজয়ের দিন মক্কার সবকিছুই যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের অধীনে ছিল. তিনি তখন উসমানের কাছে কাবার চাবি চাইলেন।
বরকতময়
সে চাবি সঙ্গে সঙ্গে নবী সা.-এর হাতে তুলে দিলেন উসমান। চাবি নিয়ে আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে বায়তুল্লাহর দরজা খুললেন।
ভেতরে প্রবেশ করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন।
বাইরে তখন অপেক্ষমান
জনতা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হওয়ার পর সবাই
সীমাহীন কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে রইলো তার দিকে। কাকে দেওয়া হবে কাবার চাবি, কে
পাবে এই মোবারক দায়িত্ব?
হজরত আব্বাস রা. এবং হজরত আলী রা. উপস্থিত
ছিলেন সেখানে। দু’জনই চাবি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করছিলেন। এমনকি তারা এ
ব্যাপারে আবেদনও করেছিলেন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
কাছে।
কিন্তু না, সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নবী করিম সা. দরাজ গলায় ডাকলেন উসমান ইবনে তালহাকে। তার হাতেই দিলেন কাবার চাবি।
বললেন, ‘এখন থেকে এ চাবি তোমার বংশধরের হাতেই থাকবে, একেবারে কেয়ামত পর্যন্ত। তোমাদের হাত থেকে এ চাবি কেউ নিতে চাইলে সে হবে জালিম।’
সেই ধারা এখনও চলমান। ইসলাম পূর্ব জাহিলী যুগ ও ইসলাম পরবর্তী যুগে কাবার চাবির রক্ষক উসমান ইবনে তালহা রা.-এর বংশধররা।
তাদের
কাছ থেকে চাবি নিয়েই বিভিন্ন সময় সৌদি আরবের বাদশাহ এবং গণ্যমান্য
ব্যক্তিবর্গ পবিত্র কাবা ঘরে প্রবেশ করে থাকেন। তারাই কাবার দরজা খুলে দেন।
বর্তমানে
সাহাবি হজরত উসমান ইবনে তালহা রা.-এর ১০৮তম উত্তরসূরি শায়খ সালেহ আল শাইবা
কাবার চাবি সংরক্ষণের দায়িত্ব পালন করছেন। চৌদ্দশ’ বছর পরেও নবী করিম
সা.-এর সেই ওয়াদা বহাল আছে। এখনও ওই বংশের কাছেই কাবার চাবি থাকে। শায়খ
সালেহ আল শাইবা ওই বংশের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি, তাই তিনিই এখন পালন করছেন
কাবার চাবি সংরক্ষণের দায়িত্ব।