শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪
১২ শ্রাবণ ১৪৩১
বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি কমানোর চেষ্টা করুন
অধ্যাপক ডাঃ মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪, ১:১৩ এএম |


 বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি কমানোর চেষ্টা করুন
দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৬ হাজার মেগাওয়াটের মত। গ্রীষ্মে উৎপাদিত হয় ১৩ থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াট এবং শীতে ৮ থেকে ৯ হাজার মেগাওয়াট। মোট উৎপাদন ক্ষমতার ৪২ শতাংশ গ্যাস, ২৪ শতাংশ ফার্নেস অয়েল এবং ১৭ শতাংশ তৈরি হয় কয়লাভিত্তিক। বাকী ১১ শতাংশ আমদানি করা বিদ্যুৎ এবং ডিজেল ও নবায়নযোগ্য জ¦ালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ৩ শতাংশ করে। সারাবছরই বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার বড় অংশ অলস থাকে। ফলে বসিয়ে বসিয়ে কেপাসিটি চার্জ নামে বিপুল অঙ্কের কেন্দ্র ভাড়া দিতে হয়। গত বছর আনুমানিক ৪১ শতাংশ (সিপিডির মতে) অলস ছিল। গত বছর কেপাসিটি চার্জ বাবদ প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা দিতে হয়েছে।
যেহেতু সক্ষমতার তুলনায় উৎপাদন কম, সেহেতু কম ব্যয়ের জ¦ালানি ব্যবহার করে উৎপাদন করাই লাভজনক। তারপরও বেশি ব্যয়ের তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চলছে। গতবছরে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৫২ শতাংশ গ্যাস থেকে, ২৩ শতাংশ তেল থেকে, ১২ শতাংশ কয়লা থেকে, ১১ শতাংশ আমদানি থেকে ও ২ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ¦ালানি থেকে, উচ্চ ব্যয়ের কারণে ডিজেল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র কমিয়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু ফার্নেস তেলের কেন্দ্রগুলি চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাস, কয়লা ও নবায়নযোগ্য জ¦ালানির বিদ্যুৎকেন্দ্রই চালানোর প্রয়োজন। এতে ব্যয় অনেক কমে যাবে। দেশে আরও গ্যাস উত্তোলনের সুযোগ রয়েছে। সেই প্রচেষ্টা বাড়িয়ে দ্রুততম সময়ে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানো দরকার। তাহলে ডলারের উপর চাপও কমবে। এদিকে বিশ^বাজারে গ্যাস ও কয়লার দামও কমেছে। ২০২২ সালে খোলাবাজারে যে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম উঠেছিল ৬০ ডলারে তা এখন ১০ ডলারের কাছাকাছি মিলছে। ৪০০ ডলারের কয়লা নেমেছে ৮০ ডলার টনপ্রতি। জ¦ালানি তেলের দামও কমেছে তবে গ্যাস ও কয়লার মত হারে নয়। ক্যাবের সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুৎ খাতে ৩০ হাজার কোটি টাকার মত বাড়তি ব্যয় হয়। সেটি কমালে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না।
পিডিবি সূত্র থেকে জানা যায়, ফার্নেস তেলভিত্তিক কেন্দ্র থেকে এখন ১ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে জ¦ালানি খরচ গড়ে ১৭ টাকা। গ্যাসে খরচ দাঁড়ায় চার টাকার আশেপাশে। কয়লায় ব্যয় ছয় টাকার মত। ব্যয় বেশি হলেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৩ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে তেল ব্যবহার করে। একই অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় ২৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রতি ইউনিট ১১ টাকা ৫২ পয়সায়। যার একটি কারণ হচ্ছে তেল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন। পিডিবি সূত্রে জানা যায়, তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ১০ শতাংশ কমালে বছরে সাশ্রয় হবে অন্ততঃ ৯ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ খাতে বিপুল অঙ্কের টাকা বকেয়া। বিদেশি প্রতিষ্ঠানের দেনাও শোধ করা যাচ্ছে না। ফলে গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোদমে চালানো যাচ্ছে না। কর্তৃপক্ষের দাবি, বাধ্য হয়েই তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো হচ্ছে। ভর্তূকি বাবদ প্রয়োজনীয় অর্থ এবং আমদানির জন্য মার্কিন ডলার পাওয়া গেলে গ্যাস ও কয়লা আমদানি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো যাবে।
পিডিবির কর্মকর্তারা বলেছেন, এখন গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের পাইকারী দাম ৬ টাকা ৬০ পয়সা। আইএমএফ এর শর্ত মেনে বিদ্যুৎ খাত থেকে ভর্তূকি কমাতে হলে বিদ্যুতে পাইকারি দাম ১২ টাকা ১১ পয়সা করতে হবে। সেক্ষেত্রে ভোক্তা পর্যায়ে গড়ে বিদ্যুতের দাম হবে প্রায় ১৫ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ৮ টাকা ২৫ পয়সায়। অবশ্য এটিকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো বলতে নারাজ কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষ বলেন, খরচের চেয়ে বেশি দাম নিলে মূল্যবৃদ্ধি বলা যেত। এখন ঘাটতি অনেক, তাই দাম সমন্বয় করা হচ্ছে, জ¦ালানি খরচের উপর ভিত্তি করে সারা বিশে^ই দাম সমন্বয় করা হয়। বিদ্যুতের দাম তিন বছর ধরে ধীরে ধীরে বাড়ানো হলে একসঙ্গে চাপ পড়বে না, এটা ঠিক, কিন্তু ধারাবাহিকভাবে শিল্পখাতে ব্যয় বাড়বে। মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে।
বিদ্যুৎখাতে দক্ষতা বাড়িয়ে সঠিক জ¦ালানির ব্যবহার করে উৎপাদন খরচ কমানো সম্ভব। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) গণশুনানীর মাধ্যমে মূল্য সমন্বয় করা হলে এ বিষয়গুলো আসত, অংশীজনেরা পর্যালোচনা করতে পারতেন, যুক্তি তুলে ধরতে পারতেন। কিন্তু নির্বাহী আদেশে দেশে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে। ফলে কর্তৃপক্ষ যা বলেছে, তা-ই মেনে নিতে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ¦ালানি তেল আমদানি করতেও ডলার লাগে। সেই ডলার দিয়ে গ্যাস ও কয়লা আমদানি করা যায়। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোকে মূল্য সমন্বয় বলছে। কারণ তাঁরা উৎপাদন খরচের কম দামে বিক্রি করে। আসলে এটাই মূল্যবৃদ্ধি। মূল্যবৃদ্ধিকে অবধারিত ধরা ঠিক নহে। উৎপাদন খরচ কমানোর চেষ্টা কোথায়? নবায়নযোগ্য জ¦ালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রচেষ্টা কোথায়?
সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ












সর্বশেষ সংবাদ
শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলিনি
অপরাধীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করুন : প্রধানমন্ত্রী
গ্রেপ্তার বাড়ছে কুমিল্লায়
চিরচেনা রূপে অর্থনীতির লাইফলাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
আহতদের চিকিৎসা ও রোজগারের ব্যবস্থা করবে সরকার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
শিক্ষার্থীদের আমি রাজাকার বলিনি, বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
কুমিল্লায় আট মামলায় গ্রেপ্তার দেড় শতাধিক
আবু সাঈদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন
অফিসে হামলার সময় চেয়ে চেয়ে দেখলেন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
আন্দালিভ রহমান পার্থ ৫ দিনের রিমান্ডে
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২ | Developed By: i2soft