শুক্রবার
প্রিমিয়ার হকি লিগে আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে আম্পায়ারের দেওয়া লাল কার্ডের
সিদ্ধান্ত না মেনে খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল মোহামেডান। খেলার ১৭ মিনিট
বাকি থাকতে খেলোয়াড়দের মধ্যে মারামারি শুরু হলে পরিস্থিতি চলে যায়
নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ওই সময় অবশ্য সাদাকালোরা এগিয়ে ছিল ৩–২ গোলে।
মোহামেডানের
ম্যানেজার আরিফুল হক শুক্রবারই দাবি করেছিলেন, তাদের চাওয়া অনুযায়ী
আম্পায়াররা ভিডিও রেফারেল না দেখে দুই খেলোয়াড় দ্বীন ইসলাম ও তানভীর
সিয়ামকে লাল কার্ড দেখান। আম্পায়াররা হলুদ কার্ড দেখান মোহামেডানের
মালয়েশিয়ান জুল পিদাউস মিজুনকেও। মারামারির ঘটনায় আবাহনীর ভারতীয় খেলোয়াড়
ইউসুফ আফ্ফানকেও হলুদ কার্ড দেখান, লাল কার্ড দেখেন আবাহনীর মোহাম্মদ
নাঈমুদ্দিনও।
এই কার্ড নিয়ে আপত্তি জানিয়ে মোহামেডান ম্যাচের বাকি ১৭
মিনিট আর খেলেনি। আম্পায়াররাও ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে শেষ বাঁশি বাজিয়ে দেন।
বাইলজ অনুযায়ী আবাহনীকে সে ম্যাচে ৫–০ গোলে জয়ী ঘোষণা করা হয়। আজ মোহামেডান
ক্লাবের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মোহামেডান ক্লাব এ ঘটনায়
যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
মোহামেডানের
ডিরেক্টর ইন চার্জ অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাজী ফিরোজ রশিদ বলেছেন, ‘খেলায়
হারজিত থাকবেই। মাঠের খেলায় কেউ জিতবে, কেউ হারবে। কিন্তু আমরা তো হকিতে
কোনো ন্যায়বিচারই পাচ্ছি না। এখানে খেলে কী লাভ। আমরা পুরো ঘটনায় যুব ও
ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। মন্ত্রিমহোদয়ের কাছে বিচার
চাচ্ছি।’
শুক্রবারের ম্যাচে আম্পায়াররা কার্ডের সিদ্ধান্ত ভিডিও রেফারেল
দেখে নিলে ঘটনার আসল চিত্র বেরিয়ে আসত বলেই মনে করেন মোহামেডান কর্তারা।
সাবেক হকি খেলোয়াড় ও মোহামেডানের হকি কমিটির সদস্য প্রতাপ শঙ্কর হাজরার
কথা, ‘সেদিন আম্পায়াররা যদি নিরপেক্ষভাবে কার্ডের সিদ্ধান্ত নিতেন, তাহলে
তো আবাহনীর পুষ্কর খীসা মিমোরও লাল কার্ড দেখার কথা। কিন্তু তাঁকে তো লাল
কার্ড দেখানো হয়নি।’
প্রতাপ শঙ্কর হাজরা বাইলজ ভঙ্গেরও অভিযোগ তুলেছেন
ফেডারেশনের বিপক্ষে, ‘হকি ফেডারেশন বাইলজের কথা বলছে, এবারের লিগেই দুটি
ম্যাচে বাইলজ পরিপন্থী ঘটনা ঘটেছে। আজাদ–বাংলাদেশ স্পোর্টিং ম্যাচে
গোলযোগের কারণে ম্যাচের ১২ মিনিট বাকি থাকতে খেলা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেই ১২
মিনিট পরদিন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারও আগে অ্যাজাক্স ও বাংলাদেশ স্পোর্টিং
ম্যাচে একটি গোলকে কেন্দ্র করে দুই দল খেলতে অস্বীকৃতি জানালে সেই ম্যাচের
বাকি অংশও পরদিন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আবাহনী–মোহামেডান ম্যাচে আরেক রকম কেন
হবে?’
মোহামেডান ক্লাব কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্যও দেওয়া
হয়েছে। সেই বক্তব৵ সংবাদ সম্মেলনে পড়ে শোনান কাজী ফিরোজ রশিদ। বক্তব্যের এক
জায়গায় লেখা আছে, ‘মারামারির ঘটনার পর দুই আম্পায়ার ভিডিও রেফারেল দেখে
কার্ডের সিদ্ধান্ত নেননি। আম্পায়ারদের দুইবার ওয়াকিটকিতে কথা বলতে দেখা
যায়। এরপরই মোহামেডানের দুই খেলোয়াড়কে লাল কার্ড দেখানো হয়। অথচ আমরা ভিডিও
রেফারেল ব্যবহার করে ঘটনা পর্যালোচনা করতে বলেছিলাম। আম্পায়াররা আমাদের
কথা শোনেননি।’
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন ওঠে আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে ৩–২
গোলে এগিয়ে থাকা অবস্থায় খেলোয়াড়দের মারামারিতে জড়িয়ে পড়া এবং এরপর কার্ডের
ঘটনায় খেলতে অস্বীকৃতি জানানো কতটুকু যুক্তিযুক্ত ছিল। প্রতাপ শঙ্কর হাজরা
বলেন, ‘আমাদের দুই খেলোয়াড়কে লাল কার্ড দেখানো হয়েছে, আবাহনীর একজন।
আমাদের একজনকে হলুদ কার্ডও দেখানো হয়। ২ খেলোয়াড়কে ছাড়া খেলাটা সম্ভব ছিল
না, তা ছাড়া, আমরা ভিডিও রেফারেলের দাবি করেছিলাম, সেটিও শোনা হয়নি। এই
ম্যাচ খেলার তো কোনো মানে নেই।’
মোহামেডান শুক্রবার ম্যাচটা জিততে
পারলেই শিরোপা জিতত। আবাহনীকে বিজয়ী ঘোষণা করায় এ মুহূর্তে লিগে মেরিনার্স ও
আবাহনীর পয়েন্ট সমান ৩৭। লিগের বাইলজ অনুযায়ী লিগ শিরোপা নিষ্পত্তিতে হবে
প্লে–অফ ম্যাচ। তবে আজ সেই ম্যাচ খেলার জন্য ফেডারেশন থেকে আবাহনী ও
মেরিনার্স দুই ক্লাবের কাছেই চিঠি দেওয়া হলেও তারা খেলতে অস্বীকৃতি
জানিয়েছে।