মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১
‘পারিবারিক’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
#মাদরাসার তিনটি শ্রেণীকক্ষ দখল করে সুপারের সপরিবারে বসবাস #কমিটি ও একাধিক শিক্ষক পদে এক পরিবারের সবাই
শাহীন আলম, দেবিদ্বার
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১:২০ এএম |

‘পারিবারিক’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি, সুপার, শিক্ষক-কর্মচারী, আয়া থেকে শুরু করে পরিচালনা পর্ষদের সবই একই পরিবারের। অনিয়ম করে গত ১৭ বছর ধরে তিনটি শ্রেণীকক্ষও দখল করে সপরিবারে বসবাস করছেন প্রতিষ্ঠানটির সুপার। তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে নানা আর্থিক কেলেঙ্কারিও। এমনই অনিয়মে ডুবতে বসেছে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের গোপালনগর আব্দুল মজিদ খান জোহরা খাতুন দাখিল মাদরাসা। এ নিয়ে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। এ নিয়ে অভিযোগ করেছেন মাদরাসাটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এডভোকেট মিজানুর রহমান খান। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর।  
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গোপালনগর গ্রামের আ. হাকিম খান, মো. নুরুল হক খান, মিজানুর রহমান খান ও হামিদা বেগম তাদের বাড়ির পূর্ব পাশে প্রায় এক’শ শতাংশ জমিতে ১৯৯৫ সালে মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর ২০০১ সালের  ২ অক্টোবর মাদরাসাটি এমপিওভুক্ত হয়। প্রতিষ্ঠাতা চারজনের মধ্যে আব্দুল হাকিম খান পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি থাকাবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার মেয়ে কুলছুম আক্তারকে আরবি শিক্ষক ও মেয়ের স্বামী ফয়েজ আহম্মদ সরকারকে সুপার পদে নিয়োগ দেন। অভিযোগ রয়েছে সুপারের সকল শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদ ৩য় শ্রেণির থাকলেও অনিয়মের মাধ্যমে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। এছাড়াও সুপারের স্ত্রী কুলসুম আক্তার কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করলেও তাকে নিয়োগ দেয়া হয় প্রতিষ্ঠানের আরবি শিক্ষক পদে। শিক্ষার্থীরা বলেন, আরবিতে তিনি কিছুই জানেন না। অনিয়ম এখানেই শেষ নয়। স্বজন প্রীতি ও আর্থিক অনিয়মের মাধ্যমে সভাপতি তার ভাই সারোয়ার জাহান খানকে ইংরেজি শিক্ষক, সভাপতির ছেলে আতাউর রহমান খানকে কম্পিউটার শিক্ষক, সুপারের আপন ভাগিনা মোখলেছুর রহমানকে দপ্তরি, সুপারের নিকটআত্মীয় অলিউল্লাহকে পরিচ্ছন্নতা কর্মী, সভাপতির ননদের ছেলে আবু কাউছারকে অফিস সহকারী, সভাপতির নিকটাত্মীয় অভিভাবক সদস্য ইব্রাহিমের আপন বোন তাহমিনা আক্তারকে আয়া পদে নিয়োগ দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে অলিউল্লাহ ও তাহমিনাকে নিয়োগ দিতে ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় সুপার ও সভাপতি।   
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি সহসুপার পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। এতে তাদের পছন্দের লোক নিয়োগ দিতে ১০ লাখ টাকার চুক্তি করা হয়েছে বলে এলাকায় গুঞ্জন চলছে। এরই মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। অভিযোগ রয়েছে সুপার কোন ক্লাস না নিয়ে নিয়মিত হজ কাফেলায় লোক নিয়ে সৌদি আরবে থাকেন। ওই সময় আয়া ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী ক্লাস নেন। হজের সময় ছুটি নেন না। তবে নিয়মিত বেতন ভাতা নিয়ে থাকেন।  
শুধু শিক্ষক নিয়োগেই নয়, মাদরাসাটির পরিচালনা পর্ষদ নিয়েও রয়েছে অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ। সকল অনিয়ম জায়েজ করতে সুপার তার শ্বাশুড়ি হোসনে আরা খানমকে সভাপতি করেন। এছাড়াও সভাপতির দুই ছেলের মধ্যে আমানুর রহমান খান দাতা সদস্য, অপর ছেলে আতাউর রহমান খানকে রাখা হয় শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে ।
স্থানীয় লোকজন জানায়, মাদারাসাটিতে নানা অনিয়ম ও আর্থিক কেলেঙ্ককারীতে সুপারের পরিবারের উন্নতি হলেও মাদরাসাটি জারজীর্ন অবস্থায় আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার লোকজন জানান, শিক্ষার্থীদের জন্য ক্লাস রুমের সংকট থাকলেও সুপার মাদরাসাটি পরিণত করেছেন পারিবারিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে। তিনি মাদরাসার ৩টি শ্রেণি কক্ষ দখল করে পরিবার নিয়ে বাসবাস করছেন। এ বিষয়ে  মাদরাসার সুপার ফয়েজ আহম্মদ ও তার স্ত্রী কুলসুম আক্তার বলেন, কমিটি রেজুলেশন করে মাদরাসার দোতলায় থাকার অনুমতি দিয়েছে। তাই ওখানে পরিবার নিয়ে থাকি। মাদরাসায় এক পরিবারের এত লোক কিভাবে নিয়োগ পেল জানতে চাইলে সুপার বলেন, সবাই পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে , নিয়োগে কোন অনিয়ম হয়নি। মাদরাসার সভাপতি হোসনে আরা খানম বলেন, যেহেতু অভিযোগ হয়েছে, তদন্তেই সব সত্য বের হবে।
অভিযোগকারী প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মো. মিজানুর রহমান বলেন, মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা অনিয়ম ও আর্থিক কেলেংকারীর মাধ্যমে মাদরাসাটির শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। পারিবারিক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় নিয়মিত পাঠদানও হয় না। শ্রেণি সংকট থাকলেও জরাজীর্ণ টিনের ঘরে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে। কিন্তু শিক্ষ প্রতিষ্ঠানের সুপারকে বারবার বলা হলেও তিনি শ্রেণীকক্ষ ছাড়ছেন না। গত ১৭ বছর ধরে তিনি প্রতিষ্ঠানের ভবনের তিনটি শ্রেণী কক্ষ দখল করে পরিবার নিয়ে থাকেন।
রসুলপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো.শাহজাহান সরকার বলেন, নানা অনিয়মের মাধ্যমে  মাদরাসাটি এক পরিবারের সবাই মিলে হরিলুট চালাচ্ছে। দুনিয়ার কোথাও দেখিনি এক পরিবারের এত লোক মাদরাসায় নিয়োগ পেয়েছে। সরকারি অর্থ (এমপিও) পাচ্ছে। কমিটির সভাপতি থেকে শুরু করে আয়া পর্যন্ত সব এক পরিবারের। তাই তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
দেবিদ্বার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো .শফিউল আলম তালুকদার বলেন, নানা অনিয়মের বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমরা তদন্ত দেখছি। এরপর উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
এ বিষয়ে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন) মো. জিয়াউল আহসান বলেন, কথা শুনে মনে হচ্ছে এটি একটি পারিবারিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সুপার ওমরা ব্যবসা করলেই পারেন।  লিখিত অভিযোগ আমরা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেব।     














সর্বশেষ সংবাদ
শিক্ষার্থীদের ক্ষতির দায় কে নেবে?
কুবি শিক্ষক সমিতি ও প্রশাসনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ থানায়
অন্ত:সত্বা স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা
স্কুল থেকে ফেরার পথে ৯ বছরের শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ
মুরাদনগরে তীব্র তাপদাহে ৭ শিক্ষার্থী অসুস্থ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
তীব্র গরমে কুমিল্লায় একই স্কুলের ৭ শিক্ষার্থী অসুস্থ
প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা শিক্ষক সমিতির
নিউ ইয়র্কে গুলিতে কুমিল্লার এক ব্যক্তি নিহত
অন্ত:সত্বা স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা
মুক্তিযোদ্ধাকে মারধর করায় আ.লীগ নেতার ভাগিনা কারাগারে
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২ | Developed By: i2soft