মুরাদনগরে ১২ দিনেও গ্রেফতার হয়নি যৌতুকলোভী স্বামী
মো. হাবিবুর রহমান, মুরাদনগর
|
![]() তখনো সূর্যের আলো পৃথিবীর বুকে আঁচড়ে পরেনি, চার দিকে ভোরের নিস্তব্ধতা, জীবন যুদ্ধে হারিয়ে না যাওয়া এক মায়ের চারদিকে অমানিশার ঘোর নেমে এলো মুহূর্তেই। বাড়ী থেকে মেয়ের বাড়ীর দুরত্ব মাত্র ৩ কিলোমিটার। কিন্তু সময় আর রাস্তা যেন শেষ হচ্ছে না এ হতভাগা মায়ের। বলছিলাম এক অভাগা হাজেরার কথা। এ হতভাগা মেয়েটির নাম হাজেরা (২৩)। মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউনিয়নের বি-চাপিতলা গ্রামের মৃত সুন্দর আলীর মেয়ে। প্রায় ৯ বছর পূর্বে কামাল্লা ইউনিয়নের দক্ষিণ নোয়াগাঁও গ্রামের আবদুল হাকিমের ছেলে নুরুল ইসলামের নিকট পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয় তার। বিয়ের সময় মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে ধার দেনা ও সুদে টাকা এনে নগদ আড়াই লক্ষ টাকা দেন নুরুল ইসলামকে। এই টাকা দিয়ে সে একটি সিএনজি কিনে সংসার পরিচালনা শুরু করেন। এরই মধ্যে দুই লাখ টাকা যৌতুকের জন্য নুরুল ইসলাম তার স্ত্রী হাজেরাকে প্রায়ই মারধর করেন। দাবিকৃত যৌতুকের টাকা দিতে অপরগতা প্রকাশ করায় সে তার স্ত্রী হাজেরার গলায় ছুরি লাগিয়ে মেরে ফেলার অপচেষ্টা চালায়। রক্তাক্ত হাজেরাকে চিকিৎসা করে সুস্থ্য করে তার বৃদ্ধ মা। এ কারনে হাজেরাকে আর স্বামীর বাড়ীতে দেওয়ার ইচছা ছিল না মায়ের। বিয়ের দুই বছরের মাথায় তাদের সংসারে আসে একটি পুত্র সন্তান। নাম রাখা হয় হাসিবুল। পুত্র সন্তানের দিকে তাকিয়ে পরিবারের সবাই তাকে বুঝিয়ে হাজেরাকে আবারো স্বামীর বাড়ীতে পাঠায়। কিছুদিন যেতে না যেতেই যৌতুকলোভী নুরুল ইসলাম আবারো ৫০ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল দাবি করে। গরিব মায়ের পক্ষে টাকা ও মোবাইল দিতে অপরগতা প্রকাশ করে। ফলে নুরুল ইসলামের দবিকৃত যৌতুকের টাকা ও মোবাইলের দাবিতে পরিবারের সবাই মিলে হাজেরার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। নির্যাতন সইতে না পেরে হাজেরা গত ১৮ মার্চ রাতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কুমেক হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় হাজেরার মা হনুফা বাদী হয়ে স্বামী ঘাতক নুরুল ইসলামসহ ৪ জনকে আসামি করে মুরাদনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এরমধ্যে পুলিশ আসামী আছমা বেগম (৩৮) ও আবুল হোসেনকে (৩২) গ্রেফতারপূর্বক আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে। মুরাদনগর থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর দৈনিক কুমিল্লার কাগজকে বলেন, আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। দু’জনকে গ্রেফতার করেছি। অপর আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। |