সৌদি
আরবে দুই সপ্তাহের নিবিড় অনুশীলন, সুদানের বিপক্ষে দুটি আনঅফিসিয়াল
প্রস্তুতি ম্যাচ- এত কিছুর ফল অন্তত ফিলিস্তিনের বিপক্ষে প্রথম লেগে
মেলেনি। মরু প্রান্তরে ছোটাছুটি শেষে এবারে চেনা আঙিনায় ফিরতি লেগে
ফিলিস্তিনের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। বড় স্বপ্নের আঁকিবুকি নেই কোচ হাভিয়ের
কাবরেরার চোখে। বরং কুয়েতের ওই ম্যাচের, বিশেষ করে প্রথমার্ধের ৪০ মিনিটের
ছন্দ এবার পুরো ৯০ মিনিটে টেনে নিতে চান তিনি।
২০২৬ বিশ্বকাপ ও ২০২৭
এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের দ্বিতীয় ধাপের পথচলা যে মহাকঠিন হবে, তা ছিল
অনুমিতই। গ্রুপে চার দলের মধ্যে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে তলানিতে বাংলাদেশ,
১৮৩তম। অস্ট্রেলিয়া ২৩তম, ফিলিস্তিন ৯৭তম ও লেবানন ১১৫তম।
অস্ট্রেলিয়ার
বিপক্ষে ৭-০ গোলের হার দিয়ে ‘আই’ গ্রুপ শুরু করা বাংলাদেশ পরের ম্যাচে
লেবাননের বিপক্ষে করেছিল ১-১ ড্র। এরপর ফিলিস্তিনের বিপক্ষে কুয়েতে ৫-০
গোলে হারের হতাশা হয় সঙ্গী।
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে একশ’র মধ্যে থাকা, সবশেষ
এশিয়ান কাপের শেষ ষোলোয় কাতারকে (প্রতিযোগিতায় যারা পরে চ্যাম্পিয়ন হয়)
কাঁপিয়ে দেওয়া ফিলিস্তিনের শক্তি, সামর্থ্য নিয়ে একবিন্দু সংশয় নেই
কাবরেরা। তবে ফিরতি লেগের ভেন্যু বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনা বলেই নতুন আশায়
বুক বাঁধছেন বাংলাদেশ কোচ। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টায় মাঠে গড়াবে ম্যাচটি।
এ
পর্যন্ত কিংস অ্যারেনায় খেলা চার ম্যাচের কোনোটিতে হারেনি বাংলাদেশ। একটি
জয় ও তিনটি ড্রয়ের তৃপ্তি এই আঙিনায়। এই পরিসংখ্যানের সাথে কাবরেরা যোগ করে
নিতে চাইছেন কুয়েতে প্রথমার্ধে গোল হজমের আগের ৪২ মিনিটের সুখকব অভিজ্ঞতা,
যে সময়টুকুতে জামাল-সোহেল-মিতুলরা লড়েছিলেন ফিলিস্তিনের চোখে চোখ রেখে।
“নিশ্চিতভাবেই
আগামীকাল (মঙ্গলবার) আমাদের জন্য বড় একটি দিন। অনেক দিন পর ঘরে ফিরতে পেরে
খুবই খুশি। নিজেদের দর্শকদের সামনে খেলা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা আমরা জানি।
কিংস অ্যারেনায় আবারও দারুণ আবহ দেখতে চাই, যেখানে আমরা এখনও অপরাজিত।
অনেকের কাছে প্রথম লেগের ফল হতাশাজনক, কিন্তু তার মধ্যে অনেক ইতিবাচক দিক
আছে, বিশেষ করে প্রথমার্ধে আমরা উঁচু মানের এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ফুটবল
খেলেছিলাম।”
“বাছাইয়ের এই ধাপে এসে আমরা জানতাম, এটা পেরুনো খুব কঠিন
হবে। তবে আবারও বলছি, দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে দলের, এখন আমাদের মানিয়ে নেওয়া
এবং পরের ম্যাচে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন, যাতে আমরা সমর্থকদেরকে ভালো কিছু
দিতে পারি এবং আশা করি, পয়েন্টও পেতে পারি।”
পয়েন্ট পাওয়ার আশা কুয়েতেও
ছিল, কিন্তু রক্ষণভাগ হঠাৎই ভেঙে পড়ে হুড়মুড়িয়ে। প্রতিরোধের দেয়াল পরে আর
তুলতেই পারেননি তপু বর্মন, বিশ্বনাথ ঘোষ, রহমত মিয়ারা। এবার নিজেদের মাঠে
রক্ষণের দৃঢ়তা দেখতে চান বাংলাদেশ কোচ।
“সবসময় আমাদের লক্ষ্য সর্বোচ্চ
পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা, যেটা আমরা কুয়েতেও চেষ্টা করেছিলাম।
ফিলিস্তিনের শক্তির জায়গাটা আমরা জানি, সম্ভবত বক্সের ভেতরের খেলায় তারা
আমাদের জন্য ভীষণ হুমকি হতে পারে। তাই আমাদের চেষ্টা করতে হবে ডিফেন্সিভ
লাইনে আরও দৃঢ়তা আনার, আগ্রাসী হওয়ার। (প্রথম লেগে) প্রতিপক্ষের অর্ধে আমরা
অনেক বল কাভার করেছিলাম, ট্রানজিশনেও ভালো ছিলাম, যদি আমরা আরও বেশি
নিখুঁত হতে পারতাম, তাহলে তাদের আগেই গোল পেতে পারতাম। এটাই সত্যি... এরপর
তারা ম্যাচটা আমাদের জন্য কঠিন করে তুলল।”
প্রতিপক্ষের শক্তির জায়গা চিহ্নিত করে, সেই অনুযায়ী খেলার বার্তাও দিলেন কোচ।
“ফিলিস্তিন
আসলেই শক্তিশালী দল। বিশেষ করে আক্রমণভাগে তাদের পাওয়ারফুল খেলোয়াড় আছে।
যে মুহূর্তে তারা প্রথম গোলটি পেল, আমাদেরও সংগ্রাম শুরু হলো। সম্ভবত,
প্রথম গোলের পরের পরিস্থিতির সঙ্গে যদি আমরা মানিয়ে নিতে পারতাম, তাহলে
দ্বিতীয়ার্ধে ভিন্ন একটি ম্যাচ খেলতে পারতাম।“
“হয়ত প্রথমার্ধের
পারফরম্যান্সে আমরা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে গিয়েছিলাম, যখন দেখলাম ওদের
চোখে চোখ রেখে লড়তে পারি, তাতে আমরা উপরে উঠতে থাকলাম, চাপ দিতে লাগলাম,
তবে একটা সময় আমার উচিত ছিল ছেলেদের বলা, তোমরা শান্ত হও, নিজেদের রক্ষা
করে খেলো। যাই হোক, ওই পরিস্থিতি আমরা শিখব; ইতিবাচক দিকগুলো নিব।”
২০২২
সালে দায়িত্ব নেওয়া কাবরেরার হাত ধরেই গত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ১৪ বছরের খরা
কাটিয়ে সেমি-ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। তবে দলকে এখনও ‘অভিজ্ঞতা অর্জনের’
পর্যায়ে দেখছেন এই স্প্যানিশ কোচ। পাশাপাশি ফিরতি লেগ নিয়েও আশাবাদী কণ্ঠে
বললেন, প্রস্তুত তার দল।
“(কুয়েতে) শুরুর ৪২ মিনিট আমরা খুবই
প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফুটবল খেললাম এমন একটা দলের বিপক্ষে, যারা সবশেষ
এশিয়ান কাপের শেষ ষোলোয় খেলেছে। প্রতিযোগিতায় পরে চ্যাম্পিয়ন হওয়া কাতারকে
ধরাশায়ী করার খুব কাছাকাছি ছিল তারা। দেখা যাক, যে বিষয়গুলো মানিয়ে নেওয়ার
দরকার ছিল, সেগুলো করার পর আগামীকাল কী হয়। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এটা
আমাদের জন্য আরও অভিজ্ঞতা অর্জনের সময়, প্রথম লেগের পর আমাদেরকে এখন আরও
ভালো দল হতে হবে।”
“(৫-০ গোলে হার) এটা বিপর্যয় নয়ৃআমরা সংখ্যা বিশ্লেষণ
করি না, আমরা বিশ্লেষণ করি পারফরম্যান্স, উন্নতি, যেভাবে আমরা এগিয়ে
যাচ্ছি, সেটা। এটাই মূল বিষয়। অবশ্যই খেলোয়াড়রা মাঠে থাকে, তারাই পারফরম
করে, আমি মাঠের বাইরে থাকি। প্রথম লেগের পারফরম্যান্সে ছেলেরাও হতাশ। তবে
আবারও বলছি, ছেলেরা ঘুরে দাঁড়াতে প্রস্তুত। আমার কাছে সংখ্যার গুরুত্ব নেই,
পারফরম্যান্সই আসল।”