প্রথমার্ধে
এগিয়ে গেল ভারত। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে সমতা ফেরাল বাংলাদেশ। শুরু
হলো রোমাঞ্চকর টাইব্রেকার। সেখানেও হলো না ফয়সালা। এরপর টসে জিতে উৎসবে
মাতল ভারত। এই টস নিয়েই শুরু হলো বিতর্ক। তাতে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ উইমেন’স
চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা ভাগ্য ঝুলে থাকল দুই ঘণ্টারও বেশি সময়। শেষ পর্যন্ত
সুরাহা হলো, যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হলো ভারত ও
বাংলাদেশকে।
কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে
বৃহস্পতিবার ফাইনালে বিতর্কের শুরু ম্যাচ কমিশনার ম্যাচ কমিশনার ডি সিলভা
জয়সুরিয়া ডিলানের টসে শিরোপা মীমাংসার সিদ্ধান্তে। দুই দলের নির্ধারিত ৯০
মিনিটের খেলা শেষ হয়েছিল ১-১ সমতায়। এরপর পাঁচ শটের টাইব্রেকারে ৫-৫ সমতা।
এক শটের টাইব্রেকারেও দুই দল ছয় বার করে পায় জালের দেখা।
এরপর রেফারিকে
ডেকে নেন ম্যাচ কমিশনার। করা হয় টস। সেখানে ভাগ্যকে পাশে পেয়ে উচ্ছ্বাসে
মেতে ওঠে ভারত। তখন ম্যাচ কমিশনারকে ঘিরে আপত্তি জানাতে শুরু করে বাংলাদেশ।
বাইলজে ফাইনালে টসের সিদ্ধান্ত না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করা হয় স্বাগতিকদের
পক্ষ থেকে।
ম্যাচ কমিশনার নিজের ‘ভুল’ বুঝতে পেরে টাইব্রেকার চালিয়ে
যাওয়ার জন্য তখন ভারতকে রাজি করাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ভারত তখন তারা বেঁকে
বসে। খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে মাঠ ছেড়ে ড্রেসিংরুমে চলে যায় ভারত দল। সাড়ে
৮টার দিক থেকে শুরু হয় খেলোয়াড়, কোচ, সমর্থক, গণমাধ্যমকর্মীদের অপেক্ষার
পালা।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষা নিয়ে শীতের মধ্যেই মাঠে বসে থাকে
বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা। রাত ১০টা ১৮ মিনিটে বাংলাদেশের কয়েকজন খেলোয়াড়
মাঠ ছাড়ে। একটু পর মাঠ ছাড়েন স্বর্ণা, ইতিরা।
১০টা ২০ মিনিটে সাজানো
শুরু হয় মঞ্চ। বাফুফের মিডিয়া বিভাগ থেকে প্রেসবক্সে বার্তা পাঠানো হয়,
মঞ্চেই শিরোপা জয়ী দলের নাম ঘোষণা করা হবে। বাংলাদেশের মেয়েদেরকে উল্লাস
প্রকাশ করতে দেখা যায়। হাসিমুখে ক্যামেরাবন্দি হতে থাকেন তারা।
১০ টা ৩৫
মিনিটে মাঠে ঢোকেন ভারতের কয়েকজন খোলোয়াড় ও কর্মকর্তারা। একটু পর মঞ্চের
দিকে আসেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী নাজমুল হাসান। সাফের সাধারণ সম্পাদক
আনোয়ারুল হক হেলাল, বাফুফের নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণসহ
আরও অনেকে।
রাত ১০টা ৪১ মিনিটে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারতের নাম ঘোষণা করা হয়। দুই অধিনায়কের হাতে তুলে দেওয়া হয় ট্রফি।
আলোচিত এই ম্যাচের রোমাঞ্চের শুরু দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে সাগরিকার বাংলাদেশ সমতায় ফিরলে। তখন ম্যাচের ভাগ্য গড়ায় টাইব্রেকারে।
পাঁচ
শটের টাইব্রেকারে বাংলাদেশের হয়ে লক্ষ্যভেদ করেন আফিদা খন্দকার, সুরমা
জান্নাত, জয়নব বিবি রিতা, স্বপ্না রানী, মুনকি আক্তার। ভারতের নেহা, নিতু
লিন্ডা, শিবানি দেবি, ললিতা বয়পাই, চানু তৈজাম পান জালের দেখা।
এরপর এক
শটের লড়াইয়ে বাংলাদেশের ইতি খাতুন, সুলতানা আক্তার, উমহেলা মারমা, সাগরিকা,
কানন রানী ও গোলরক্ষক স্বর্ণা রানী মন্ডল লক্ষ্যভেদ করেন।
ভারতের
সুলঞ্জনা রাউল, ভিকসিত বারা, পুজা গোল করার পর হেনা খাতুনের শট গ্লাভসের
টোকায় ক্রসবারের উপর দিয়ে বের করে দেন স্বর্ণা রানী, কিন্তু আগেই পোস্ট
ছেড়ে বেরিয়ে আসায় ফের শট নেন হেনা, এ দফায় ঠিকই জাল খুঁজে নেন তিনি। পরে
সনিবিয়া দেবি, গোলরক্ষক অনিকা দেবি লক্ষ্যভেদ করলে শিরোপা নিষ্পত্তি গড়ায়
মুদ্রা নিক্ষেপে।
এর আগে পঞ্চম মিনিটে একাধিক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বক্সে
ঢুকে গোলমুখে আড়াআড়ি ক্রস বাড়ান সাগরিকা, বল এক ডিফেন্ডারের পা হয়ে
গোলরক্ষকের কাছে যায়। রাউন্ড রবিন লিগে তিন গোল করা এই ফরোয়ার্ড বাকিটা সময়
ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে।
তিন মিনিট পরই এগিয়ে যায় ভারত। মাঝমাঠের একটু
উপর থেকে নিতু লিন্ডার রক্ষণ চেরা পাস অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে
আগুয়ান গোলরক্ষকের পাশ দিয়ে নিখুঁত শটে লক্ষ্যভেদ করেন শিবানি দেবি।
বাংলাদেশের
রক্ষণে চাপ ধরে রেখে সপ্তদশ মিনিটে আবারও সুযোগ তৈরি করে ভারত। তবে বক্সে
অরক্ষিত শিবানির শট অল্পের জন্য যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে।
৩৫তম মিনিটে
প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে স্বপ্না রানীর শট যায় পোস্টের বাইরে। একটু পর স্বপ্না
আরেকটি দূরপাল্লার শট সরাসরি যায় গোলরক্ষকের কাছে।
দ্বিতীয়ার্ধের
শুরুতে রুমা আক্তারের শট ক্রসবার ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। এরপর খেলার গতি কমতে
থাকে। ৮৭তম মিনিট স্বপ্নার কর্নার বাঁক খেয়ে উড়ে যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে।
একটু পর নেহার শট ক্রসবারে লেগে বাইরে গেলে ব্যবধান দ্বিগুণ হয়নি।
দ্বিতীয়ার্ধের
যোগ করা সময়ে কানন রানীর লং পাস নিতু হেডে ক্লিয়ারের চেষ্টা করেছিলেন,
কিন্তু বল চলে যায় বক্সের দিকে। সেখানে বিপদমুক্ত করতে পা বাড়ান চানু
তৈজাম, তবে বলের নাগাল পাননি এই ডিফেন্ডারও। তার সামনে থাকা সাগরিকা বল
নিয়ে একটু এগিয়ে নিখুঁত শটে লক্ষ্যভেদ করেন। সমতায় ফেরার উচ্ছ্বাস শুরু হয়
গ্যালারিতে।
এরপর শুরু হয় রোমাঞ্চকর টাইব্রেকার। সেখানেও দুই দলকে আলাদা
করা না গেলে শেষ পর্যন্ত টসে করা হয় শিরোপার ফয়সালা। এরপরই বাইলজ অনুযায়ী
টস নিয়ে বাংলাদেশ আপত্তি জানালে ঘটনাপ্রবাহ নেয় নতুন মোড়। শেষ পর্যন্ত
সমাপ্তি হয় যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণার মধ্য দিয়ে।