দিনটা যে বোলারদের হতে
যাচ্ছে, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের ব্যাটিংয়ের সময়ই বোঝা যাচ্ছিল। খুলনা
টাইগার্সের নাসুম আহমেদ ও ফাহিম আশরাফের দারুণ বোলিংয়ে কুমিল্লা ১৮তম ওভারে
পঞ্চম উইকেট হারায়, রান তখন মাত্র ১১৮। সেখান থেকে কুমিল্লার দুই
ব্যাটসম্যান জাকের আলী ও মাহিদুল ইসলাম শেষ ১২ বলে যোগ করেন ৩০ রান। তাতে
শেষ পর্যন্ত কুমিল্লার স্কোর দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ১৪৯ রান।
মিরপুরের উইকেটে
তখন সেটাকেই যথেষ্ট মনে হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত তা-ই হলো। তাড়া করতে নেমে
খুলনা ১৮.৫ ওভারে অলআউট হয়ে যায় ১১৫ রানে। কুমিল্লার ৩৪ রানের বড় জয়ে
সবচেয়ে বড় অবদান একজন বোলারেরই—আমের জামাল। ৪ ওভারে ২৩ রান দিয়ে ৫ উইকেট
নিয়েছেন এই পাকিস্তানি পেসার। এবারের বিপিএলে এই প্রথম কোনো বোলার ৫ উইকেট
নিলেন।
অল্প রানের ম্যাচ জিততে হলে কুমিল্লার শুরুতেই উইকেট নিতেই হতো।
সে জন্যই হয়তো আলিস আল ইসলাম ও তানভীর ইসলামকে নতুন বল তুলে দেওয়া হয়।
খুলনার ওপেনার এনামুল হক অবশ্য চ্যালেঞ্জটা বেশ ভালোই সামলে নিচ্ছিলেন।
তানভীরের প্রথম ওভারেই একটি চার ও একটি ছক্কা মারেন। সেই ওভারের পরই
তানভীরকে বোলিং আক্রমণ থেকে সরিয়ে নেন কুমিল্লার অধিনায়ক লিটন দাস।
তবে
আরেক স্পিনার আলিস হতাশ করেননি। ১২ বলে ১৯ রান করা এনামুলকে দারুণ এক আর্ম
বলে বোল্ড করেন। তিনে নামা আফিফ হোসেন (৫) আউট হয়েছেন উইল জ্যাকসের অফ
স্পিনে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে। এবারের বিপিএলে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে
নামা আকবর আলীও (৫) সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি।
মোস্তাফিজুর রহমানের
বলে ফ্লাই স্লিপে ক্যাচ তোলেন তিনি। ৩২ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে খুলনা।
সেখান থেকে ৬৭ রানে যেতে যেতে পড়ে আরও ৩ উইকেট। খুলনার লোয়ার অর্ডার
ব্যাটসম্যানরা এরপর শুধু হারের ব্যবধানই কমিয়েছেন। খুলনার ইনিংসের
সর্বোচ্চ ২১ রান এসেছে নাহিদুলের ব্যাট থেকে।
এর আগে কুমিল্লার হয়ে
এবার বিপিএলে প্রথমবারের মতো উদ্বোধনী জুটিতে রান পেয়েছেন লিটন দাস ও
মোহাম্মদ রিজওয়ান। তাঁদের জুটি থেকে এসেছে ৬৯ রান। খুলনার বাঁহাতি স্পিনার
নাসুম আহমেদ এসে দুজনকেই আউট করেন। ইনিংসের দশম ওভারে নাসুমের দুর্দান্ত
আর্ম বলে বোল্ড হওয়ার আগে লিটন করেন ৩০ বলে ৪৫ রান, ২টি চার ও ৪টি ছক্কা
তাঁর ইনিংসে। এবারের বিপিএলে এটিই লিটনের সর্বোচ্চ ইনিংস। একই ওভারে প্রায়
একই রকম বলে রিজওয়ানকে এলবিডব্লু করেন নাসুম। পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানের ২১
রান এসেছে ২৮ বলে।
জোড়া ধাক্কার পর কুমিল্লার রানের গতি কমে আসে। উইল
জ্যাকস (২২), তাওহিদ হৃদয় (১৬) ও খুশদিল শাহ (৪) দ্রুত রান তোলার চেষ্টা
করেও ব্যর্থ হন। ডেথ ওভারের আগেই আউট এই তিন পাওয়ার হিটার। কুমিল্লার ভাগ্য
ভালো, শেষের দুই ওভারে জাকের ও মাহিদুল কিছু চার-ছক্কা মেরেছেন। জাকের ৮
বলে করেছেন ১৮ রান, মাহিদুল ৫ বলে ১০।
খুলনার হয়ে দিনের সেরা বোলার ছিলেন ৪ ওভারে ২১ রান দিয়ে ২ উইকেট নেওয়া নাসুম। ৪ ওভারে ২৫ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন ফাহিম আশরাফও।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
কুমিল্লা
ভিক্টোরিয়ানস: ২০ ওভারে ১৪৯/৭ (রিজওয়ান ২১, লিটন ৪৫, জ্যাকস ২২, তাওহিদ
১৬, খুশদিল ৪, জাকের ১৮*, মাহিদুল ১০, জামাল ০, তানভীর ১*; নাহিদুল
২–০–৫–০, নাসুম ৪–০–২১–২, ওয়াসিম ৪–০–৩৭–১, নেওয়াজ ৩–০–৩১–০, আশরাফ
৪–০–২৫–২, মুকিদুল ৩–০–২৮–০।
খুলনা টাইগার্স: ১৮.৫ ওভারে ১১৫ (এনামুল
১৯, লুইস ১০, আফিফ ৫, আকবর ৫, পারভেজ ০, নাহিদুল ২১, নেওয়াজ ৭, আশরাফ ১৩,
ওয়াসিম ২৩, নাসুম ০, মুকিদুল ৪*; তানভীর ৩.৫–০–২৯–২, আলিস ৪–০–৩০–১, জ্যাকস
৪–০–১৪–১, মোস্তাফিজ ৩–০–১৭–১, জামাল ৪–০–২৩–৫)।
ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ৩৪ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: আমের জামাল।