শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪
১২ শ্রাবণ ১৪৩১
বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি কী নিজেদের প্রমাণ করতে পারবে?
নিজামুল হক বিপুল
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ১:০৯ এএম |

 বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি কী নিজেদের প্রমাণ করতে পারবে?
সংসদীয় গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান শর্ত হচ্ছে শক্তিশালী বিরোধী দল। সংসদকে কার্যকর করতে, সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করতে এবং সরকারের যেকোনো অগণতান্ত্রিক কর্মকা-ের বিশেষ করে উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের ক্ষেত্রে যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতি হয় সেগুলোর বিরুদ্ধে সংসদের ভিতরে বাইরে জোরালো ভূমিকা রাখতে হয় বিরোধী দলকেই। সাধারণ মানুষের নানা বিষয়ে সংসদের বিরোধী দলকে শক্তিশালী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়। বিশেষ করে বিরোধ দলকে ছায়া সরকারের কাজটা করতে হয়।
কিন্তু বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে শক্তিশালী বিরোধী দলে খুব একটা দেখেনি দেশবাসী। সব সময় সকল সংসদের বিরোধী দলই নিজেদেরকে নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে বেশিরভাগ সময়। জনবান্ধব বিষয়ে সংসদের বিরোধী দলের ভূমিকা খুব একটা দেখা যায়নি নিকট অতীতে দুই একটি ব্যতিক্রম ছাড়া। বিশেষ করে গত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংসদের বিরোধী দলের ভূমিকায় আছে জাতীয় পার্টি। সামরিক শাসক প্রয়াত জেনারেল এ এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বে জন্ম নেওয়া জাতীয় পার্টি দীর্ঘদিন ধরে বিরোধী দলে থেকেও তারা সরকারের কোনো গঠনমূলক সমালোচনা করেনি বা করতেও দেখা যায়নি। সংসদে তাদের আসন সংখ্যা যথেষ্ট থাকার পরও দলটি কখনোই সরকারের কঠোর সমালোচনা তো দূরের কথা নূন্যতম সমালোচনা পর্যন্ত করেনি। এই অবস্থায় দ্বাদশ সংসদে মাত্র ১১ জন সংসদ সদস্য নিয়ে জাতীয় পার্টি কতোটা শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারবে তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা যথেষ্ট সন্দিহান।
এর কারণও আছে, দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় পার্টি সরকারের সঙ্গে প্রায় একিভূত হয়ে যাওয়ায় দলটি তাদের রাজনৈতিক স্বকীয়তা প্রায় হারিয়ে ফেলেছে। যার ফলে সাধারণ মানুষ জাতীয় পার্টি ও তাদের নেতৃত্বের উপর আস্থা রাখতে পারেননি।
দেশের গভীর সংসকটময় মুহুর্তেও জাতীয় পার্টি নিজেদের হাত-পা গুটিয়ে বসেছিল। এবার জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের নেতৃত্বে সেই খোলস থেকে বেরিয়ে আসতে চায় দলটি। কিন্তু সেটা কী আদৌও সম্ভব? না-কি আগের মতই একই বৃত্তের মধ্যে ঘুরপাক খাবে স্বৈরশাসক এরশাদের গড়া দলটি।
জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান জিএম কাদের শনিবার (৩ফেব্রুয়ারি) সাংবাদিকদের বলেছেন, জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তার কিছু কিছু আংশিক সত্য। নেতাকর্মীর উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘সবার স্মরণ রাখা উচিত, আমাদের দলের ব্যাপারে মানুষের পারসেপশন খুব একটা ভালো নয়।’
প্রকৃত বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকবেন দাবি করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, সংসদে সংখ্যা কোনো ব্যাপার না। ছয়জন কাঁপিয়ে দিয়েছিল গত সংসদ। দু-তিনজন থাকলেই কাঁপিয়ে দেওয়া যায়।
তার এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এটা পরিস্কার যে, জাপা নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছে তাদের দলের প্রতি মানুষের আস্থা নেই। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে তো এটি আরও স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনসহ জাতীয় পার্টির মোট আসন সংখ্যা ছিলো ২৬টি। দ্বাদশ সংসদে এসে এই সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। তারা জিতেছে ১১টি আসনে। আর এখন আরও দুটি নারী আসন যুক্ত হলে হবে ১৩টি।
জাতীয় পার্টির এই বিপর্যয়ে প্রধান কারণ হচ্ছে সংসদের প্রধান বিরোধী দল হয়েও তারা বিগত দিনে রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে পারেনি। বরং সরকারের সব কাজে হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়েছে।
জাতীয় পার্টির জিএম কাদের অংশের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু শনিবার আরেক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বিরোধী দল কাকে বলে এবার সংসদে তারা সেটি দেখিয়ে দেবেন। সত্যিকার বিরোধী দল হিসেবেই জাতীয় পার্টি ভূমিকা রাখবে।
যদিও সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদের গত ৩০ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিনে সংসদে দেওয়া বক্তব্যে বলেছেন, বিরোধী দল হিসেবে তারা খুবই দুর্বল। সরকারি দলের অনুপাতে বিরোধী দলের সদস্য সংখ্যা খুবই কম। যা সংসদে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারবে না। তিনি স্পিকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন, তাদেরকে যেন কথা বলতে দেওয়া হয়। মাইক যেন বন্ধ করে দেওয়া না হয়।
এটা সত্য যে, সংসদে বিরোধী দল হিসেবে সংখ্যানুপাতে জাতীয় পার্টি একেবারেই দুর্বল। কিন্তু যদি দলটির সংসদীয় নেতা এবং অন্য সদস্যরা সদিচ্ছা রাখেন যে, তারা সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করবেন। সরকারের ভুলগুলো ধরিয়ে দিবেন, সাধারণ মানুষের কথা বলবেন, দুর্নীতি, অনিয়ম, ব্যাংক লুটের বিরুদ্ধে কথা বলবেন তাহলে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, এসব ক্ষেত্রে তাদের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে। সাধারণ মানুষের মধ্যে তাদের ভাবমূর্তী দিনে দিনে বাড়বে বৈ কমবে না।
সংসদে বিরোধী দলে কয়জন সদস্য আছেন সেটা বড় বিষয় নয়, যারা বা যে কয়জন আছেন, তারা কথা বলতে পারলেন কি-না সেটাই হচ্ছে বিষয়। আর সরকারি দলের সদস্যরা যদি বিরোধী দলকে কথা বলতে বাধা দেন বা স্পিকার মাইক বন্ধ করে দেন তাহলে সেটাও সাধারণ মানুষ দেখবে। তখন মানুষ বিচার করতে পারবে। কিন্তু জাতীয় পার্টির সদস্যরা যদি কথা না বলে, সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা না করে শুধু এই করবো, সেই করবো বলে গর্জে যান, তাহলে সেটা শুধু দেশের জন্য তাদের দলের জন্যও কাল হয়ে দাঁড়াবে। ভবিষ্যতে জাতীয় পার্টি থাকবে কি না- সেটি নির্ভর করবে দ্বাদশ সংসদে দলটির কার্যক্রম ও ভূমিকার উপর।
একাদশ সংসদে বিএনপির মাত্র সাত জন্য সদস্য ছিলেন। তারা কিন্তু সংসদকে কাঁপিয়ে দিয়েছেন। বিশেষ করে হারুন-উর রশীদ ও রুমিন ফারহানা তো সংসদে ঝড় তুলেছিলেন। বিএনপি যদি মাত্র সাত সদস্য নিয়ে সংসদে উত্তাপ ছড়াতে পারে, তাহলে জাতীয় পার্টি কেন ১৩ জন সদস্য নিয়ে কথা বলতে পারবে না?
তাছাড়া বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদের একজন ভালো বক্তা হিসেবে পরিচিত। দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশনে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটি দেশবাসীর মনোযোগ কেড়েছে। তার সঙ্গে রয়েছেন বিরোধী দলীয় উপনেতা ও প্রবীণ রাজনীতিক আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। আছেন প্রধান হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু। তারা প্রত্যেকেই ভালো বক্তা। তারা চাইলে সংসদকে প্রাণবন্ত করতে পারেন। দ্বাদশ সংসদকে একটি কার্যকর সংসদে পরিণত করতে পারেন। সরকারের গঠনমূলক সমালোচনার মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টি দেশের মানুষের কাছে পৌঁছার পাশাপাশি নিজেদেরকেও সংসদীয় গণতন্ত্রে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন। যার মধ্য দিয়ে দ্বাদশ সংসদ নিয়ে দেশি-বিদেশি যারা নানান প্রশ্ন তুলেছেন বা তোলার চেষ্টা করেছেন তাদের একটা মোক্ষম জবাবও দেওয়া যাবে।
পুরো দেশবাসী কিন্তু এখন জাতীয় পার্টির দিকেই তাকিয়ে। দ্বাদশ সংসদে তাদের ভূমিকা কি হয়, তারা কী প্রকৃত বিরোধী দল হিসেবে নিজেদেরকে প্রমাণ করতে পারবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।   
লেখক: সাংবাদিক ও লেখক।












সর্বশেষ সংবাদ
শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলিনি
অপরাধীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করুন : প্রধানমন্ত্রী
গ্রেপ্তার বাড়ছে কুমিল্লায়
চিরচেনা রূপে অর্থনীতির লাইফলাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
আহতদের চিকিৎসা ও রোজগারের ব্যবস্থা করবে সরকার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
শিক্ষার্থীদের আমি রাজাকার বলিনি, বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
কুমিল্লায় আট মামলায় গ্রেপ্তার দেড় শতাধিক
আবু সাঈদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন
গ্রেপ্তার বাড়ছে কুমিল্লায়
অফিসে হামলার সময় চেয়ে চেয়ে দেখলেন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২ | Developed By: i2soft