দুর্নীতি
দমনে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে
নজরদারি বাড়াতে সচিবদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সচিব সভায় এই
নির্দেশ দেন তিনি।
সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দেওয়া ইশতেহারকে ভিত্তি ধরে মন্ত্রণালয়গুলোকে আগামী
পাঁচ বছরের কর্মপরিকল্পনা সাজাতে হবে। নির্বাচনি ইশতেহারটা হবে আগামী পাঁচ
বছরের সরকার পরিচালনার মূলনীতি। টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠনের পর
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি)নিজ কার্যালয়ে সচিবদের নিয়ে প্রথম বৈঠক করেন
প্রধানমন্ত্রী। সেখানে মোট ১৬ জন সচিব বক্তব্য রাখেন। তাদের বক্তব্যের
ফাঁকে ফাঁকেই প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন বলে জানিয়েছেন
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
বিকেলে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি
বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্সের কথা বলেছেন। তিনি
বলেছেন, দুর্নীতি দমনের দায়িত্ব শুধু দুর্নীতি দমন কমিশনের না। দুর্নীতি
নিরসন ও প্রতিরোধের দায়িত্ব প্রতিটি মন্ত্রণালয়েরও। তাই যেখানে যেখানে
সার্ভিস পয়েন্ট আছে, সেখানে নজরদারি বা ভিন্নতর কৌশল অবলম্বন করে যে
প্রক্রিয়া নেওয়া দরকার, তা নিয়ে দুর্নীতি দমনের নির্দেশনা দিয়েছেন
প্রধানমন্ত্রী।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে নজরদারির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ
ক্ষেত্রে পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি হলে সংশ্লিষ্ট সবাইকে শক্তভাবে ব্যবস্থা
নিতে বলেছেন। নজরদারির ক্ষেত্রে তিনি একটি সুনির্দিষ্ট এরিয়ার কথা বলেছেন।
অনেক সময় আমাদের দ্রব্যমূল্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ে চাঁদাবাজির
প্রসঙ্গ আসে, নিউজ হয়। এক্ষেত্রে তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে খুবই শক্তভাবে
ব্যবস্থা নিতে বলেছেন, এটি যেন কোথাও না হয়।
মো. মাহবুব হোসেন বলেন,
আইনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী একটি বিষয়ের দিকে নজর দিতে বলেছেন।
বিশেষ করে ছিনতাই, কিশোর গ্যাং বা এ রকম যেসব অপরাধ হচ্ছে, সেক্ষেত্রে
স্থানীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করে নজর দিতে বলেছেন।
কোন প্রসঙ্গে
প্রধানমন্ত্রী পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজির কথা বললেন- জানতে চাইলে সচিব বলেন,
বাজার মনিটরিংয়ের জন্য যে নির্দেশনা দিয়েছেন, সেই নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট
বিষয়ে তিনি বলেছেন, চাদাবাজির কারণে অনেক সময় দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। সুতরাং
এটি যাতে না হয় সেজন্য শক্তভাবে মাঠে থাকতে বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর
কার্যালয়ে সকাল ১০টায় শুরু হয়ে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সাড়ে তিন ঘণ্টার বৈঠকে
সব সচিব এবং বিভিন্ন দপ্তরের সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রিপরিষদ
সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে
যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও সচিব এবং
জনপ্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই নির্বাচনের মাধ্যম
বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা সমুন্নত হয়েছে। যে কথাটি সচিবদের
জন্য সবচেয়ে বেশি জোর দিয়ে বলেছেন সেটা হচ্ছে, দায়িত্ব পালনে আত্মপ্রত্যয়,
আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মান বজায় রেখে নিজ নিজ ক্ষেত্রে কাজ করতে হবে।
পরিকল্পনা
সাজানোর ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি অঙ্গীকারকে গুরুত্ব দেওয়ার
নির্দেশ এসেছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ১৯৯৬,
২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে একটা
ধারাবাহিকতা আছে। তিনি ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ করতে
চাচ্ছেন, তার একটা ধারাবাহিকতা রয়েছে এই ইশতেহারে। যেহেতু জনগণ রায় দিয়েছে,
তাই এই নির্বাচনি ইশতেহারটা হবে আগামী পাঁচ বছরের সরকার পরিচালনার
মূলনীতি। এই দলিল বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন।
এর
বাস্তবায়ন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সমন্বয়ের কাজ করবে জানিয়ে সচিব বলেন,
নির্বাচনি ইশতেহারে ১১টি অগ্রাধিকার কাজ ও ৩০০ এর অধিক অঙ্গীকার রয়েছে। এখন
সেটাকে ম্যাপিং করা হবে। কোন মন্ত্রণালয়ের কী কাজ, সেটাকে চিহ্নিত করা হবে
এবং সেই অনুযায়ী কাজ ভাগ করা হবে। কাজগুলো ঠিকমতো তদারকি করতে বার্ষিক
কর্মসম্পাদন চুক্তিসহ প্রশাসনের যে কয়টি পন্থা আছে তার সবগুলোর মধ্যে
সমন্বয় করতে বলা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। প্রধানমন্ত্রীর কাছ
থেকে দিকনির্দেশনার পাশাপাশি গত সভার নির্দেশনাগুলো নিয়েও পর্যালোচনা হয় এই
সভায়।
আর কী নিয়ে কথা হয়েছে- সেই প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন,
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও আসন্ন রোজার প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। খাদ্য
নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি। কৃষি উৎপাদন ও সার ব্যবস্থাপনা,
কর্মমুখি শিক্ষা, নতুন পাঠক্রম ও কর্মসংস্থান নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিদ্যুৎ
সরবরাহ ও জ্বালানি নিরাপত্তা, আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ
বিনির্মাণ, উন্নয়ন প্রকল্প ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়ন, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি
পর্যালোচনা, সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও আর্থিক খাতে দক্ষতা বৃদ্ধি
নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সচিব সভায় সংসদ কার্যক্রমে বিশেষ করে প্রশ্নোত্তর পর্ব
নিয়েও দিক নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি চান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ যেন
আরো সহযোগিতা করে, সম্পূরক প্রশ্নের উত্তর যেন যথাযথভাবে সরবরাহ করা হয়।
যেদিন যে মন্ত্রণালয়ের প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকবে, সেদিন যেন সেই মন্ত্রণালয়ের
প্রতিনিধি উপস্থিত থাকেন। কর্মকর্তাদেরকে সংসদ কার্যবিধি সম্পর্কে
প্রশিক্ষিত হতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।