
জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক দপ্তর থেকে
প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু ২০১৭ সালে বিশ্বে মাদকের কারণে পাঁচ
লাখ ৮৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তার চেয়ে অনেক বেশিসংখ্যক মানুষ নানা
ধরনের অসুস্থতা নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে জীবন কাটাচ্ছে। একই প্রতিবেদনে বলা হয়,
বিশ্বে মাদকের বড় উৎস ও পাচারের রুটগুলো বাংলাদেশের খুব কাছেই। সেই রুট ধরে
মাদক ঢুকছে বাংলাদেশেও।
বাড়ছে মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা। গত সোমবার
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত
‘মাদকাসক্তি নিরাময়ে বেসরকারি খাতের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায়ও
উঠে এসেছে দেশে এখন ৭০ লাখ মাদকাসক্ত রয়েছে। মাদকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে
নানা ধরনের অপরাধ।
মাদকের বিস্তার একটি দেশ বা জাতিকে কিভাবে ধ্বংস
করতে পারে ইতিহাসে তার অনেক উল্লেখ রয়েছে। গোলটেবিল আলোচনার প্রধান অতিথি
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল যথার্থই বলেছেন, ‘আমরা ২০৪১ সালে
উন্নত বাংলাদেশের যে স্বপ্ন দেখছি, এই যে আমাদের উন্নয়ন, তার সব বরবাদ হয়ে
যাবে যদি মাদকের ভয়াবহতা থেকে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে না
পারি।’ তাঁর কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্যি। কিন্তু এ-ও সত্য যে আমরা মাদকের
বিস্তার ঠেকাতে পারছি না। মাদকের প্রতি জিরো টলারেন্স ঘোষণা, মাদকবিরোধী
বিশেষ অভিযান-কিছুই সেই বিস্তার রোধ করতে পারছে না। শুধু যুবক বা তরুণ নয়,
সব বয়সীরা এখন মাদকের পিছে ছুটছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়,
কিশোর, এমনকি কিশোরীরাও ক্রমে বেশি করে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। ধ্বংসের এই
কাফেলা কোথায় গিয়ে থামবে?
আমাদের পূর্ব দিকের কয়েকটি দেশে মাদকের
বিস্তৃতি রয়েছে। উৎপাদনও হয়। বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে মাদক
পশ্চিমে যায় বলে তথ্য পাওয়া যায়। দেশেও মাদক আসে মূলত পূর্ব দিক থেকেই স্থল
ও নৌপথে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশে মাদকের বিস্তার রোধ করতে হলে এর রুট
বন্ধ করতে হবে, মাদকের অনুপ্রবেশ রোধ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, মাদক কারবারের
সঙ্গে জড়িতদের বিচার দ্রুততর করতে হবে। আইনের দুর্বলতা ও ফাঁকফোকর বন্ধ
করতে হবে। মাদক কারবারের হোতাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। তৃতীয়ত, দেশে
মাদকাসক্তদের উন্নত ও কার্যকর চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। চতুর্থত, উচ্চ
শিক্ষাঙ্গনে ভর্তি, চাকরি, ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানসহ নানা ক্ষেত্রে ডোপ
টেস্ট বাধ্যতামূলক করতে হবে। পঞ্চমত, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাদক নিয়ন্ত্রণের
সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন দপ্তর ও বাহিনীর কাজকর্মের জবাবদিহি বাড়াতে হবে।
পত্রপত্রিকায় আসে, দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদকের রীতিমতো হাট বসে। পুলিশ
সেগুলো দেখেও না দেখার ভান করে। এসব হাটের বখরা সময়মতো তাদের কাছে পৌঁছে
যায়। এমনকি নিকট অতীতে মাদক পরিবহনে অনেক পুলিশ সদস্যেরও সম্পৃক্ততা পাওয়া
গেছে।
দেশের কিশোর-তরুণদের রক্ষায় মাদকের সহজলভ্যতা দূর করতেই হবে। একই
সঙ্গে সুস্থ বিনোদনের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। পরিবারকে আরো সচেতন হতে
হবে। আমরা চাই দেশে উন্নয়নের যে সূচনা হয়েছে, তার ধারাবাহিকতা রক্ষায় দেশকে
মাদকমুক্ত রাখার ব্যাপারে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।